পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

954 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৪০০। মুক্তিসংগ্রাম ঢাকার দ্বারপ্রান্তে আনন্দবাজার পত্রিকা ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মুক্তি সংগ্রাম ঢাকার দ্বারপ্রান্তে রাজনৈতিক সংবাদদাতা ংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই এখন বাংলার রাজধানীর দ্বারপ্রান্তে চতুর্দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিসেনারা ঢাকার দিকে এগোচ্ছে। মাঝে কয়েকটা নদী, পদ্মা আর মেঘনার শাখাপ্রশাখা। তারপরই ঢাকা। এবং তারপরই ঢাকার লড়াই-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত লড় ই। এই চূড়ান্ত লড়াই-ই কি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লড়াই হবে, পাক সেনাবাহিনী কি ঢাকায় দখল বাজায় রাখার জন্য মাটি কামড়ে যুদ্ধে করবে? কেউ জানে না। তবে ভারতীয় বাহিনী সেই বড় লড়াইর জন্য প্রস্তত হয়েই ঢাকার দিকে এগোচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাধ্যক্ষ লেঃ জেঃ জগজিৎ অরোরা সাংবাদিকদের সেই কথাই জানালেন। বললেনঃ ওরা কী করবে জানি না। তবে আমরা সেজন্য প্রস্তত্তত হয়েই এগোচ্ছি। মুক্তিসংগ্রামীরা এগোচ্ছেন সব দিক থেকে। আশুগঞ্জ এখন মুক্ত। কিন্তু ওখানে মেঘনার ওপারের বিরাট পুলটা পাক সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে গিয়েছে। আর একটা বাহিনী এগোচ্ছেন দাউদকান্দির দিক দিয়ে। দাউদকান্দি থেকে পাক বাহিনী পালিয়েছে। উত্তর দিক থেকে মুক্তিসংগ্রামীরা এগোচ্ছেন জামালপুর হয়ে। ওদিক থেকে অবশ্যই পথ এখনও অনেকটা। তবে পথে কোনও বড় নদী নেই। এদিকে অর্থাৎ পদার দিকে আমাদের সেনাবাহিনী মধুমতীর তীরে। মধুমতী পার হলেই পদ্মাতারপরই ঢাকা। কুষ্ঠিয়া মুক্ত করে আর একটা বাহিনী এগোতে চলেছে গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে। গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর চাঁদপুর থেকেও আমাদের বাহিনী ঢাকার দিকে এগোবার জন্য প্রস্তত। ঢাকা মুক্ত করার চূড়ান্ত লড়াইয়ে পুরোদমে যোগ দেবেন সব কটা বাহিনী-সেনা, বিমান এবং নেী। বিমান বাহিনী লড়াইর প্রথম দিন থেকেই ঢাকা আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন। ঢাকার সামরিক এবং অসামরিক দুই বিমানবন্দরই এখন অকেজো। নৌবাহিনীও এগিয়ে আসছেন দুই নদীতে-পদ্মা এবং মেঘনায়। ঢাকা দখলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে নৌবাহিনীর গানবোটগুলিও পুরোদমে যোগ দেবেন। জেনারেল অরোরাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ঢাকাকে মুক্ত করার পথে আপনার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা কী? জেনারেল একটা কথায় জবাব দিলেনঃ নদী। এবং তারপরই বললেন, নদী অতিক্রমের ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি। আমাদের পদাতিক বাহিনী ও রসদ পারাপারের জন্য ব্যবস্থা চাই, কিন্তু আমাদের পিটি-৬৭ ট্যাংকগুলি নিজে থেকেই নদী সাঁতরে যেতে পারবে। তার জন্য ষ্টীমার বা লবির প্রয়োজন নেই। বাইরে থেকে বা গোটা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ঢাকা রক্ষার জন্য সৈন্য আনাও পাক বাহিনীর পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। এর দুটো কারণ; প্রথম কারণ, আমাদের সেনাবাহিনী তাদের পালাবার পথ আটকে দিয়েছেন। সিলেট সেক্টরে তারা অবরুদ্ধ। উত্তরখন্ডে দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলেও আটকে গিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, বাংলাদেশের আকাশে ঢাকার সব পথের ওপর নজর রাখছেন। পাকসৈন্যবাহী স্টিমার বা বোট দেখলেই আক্রমণ চালাচ্ছেন।