পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

313 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র জাতির উদ্দেশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রপতির ১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাষন কার্যালয় আমার প্রাণপ্রিয় দেশবাসী, আপনারা আমার সংগ্রামী সালাম গ্রহণ করুন। আত্মসমর্পণ করেছে। গত ২৫ শে মার্চের বিভীষিকাময় রাতে যে জাতীয় দুর্যোগের বীভৎসতা শুরু হয়েছিল, এই সাথে সমাপ্তি হলো সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ের। এই দীর্ঘ ন’মাসে দখলদার বাহিনীর কলঙ্কিত হাতে আমার প্রিয় দেশবাসীরা অনেকে অমূল্য জীবন দান করেছেন। আজ রাতে, তাঁদের স্মৃতিকে আমি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে স্মরণ করছি এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সর্বশক্তিমান আল্লাহতালার কাছে আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছি। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার সংগ্রামে আমাদের যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মদান করেছেন,শহীদ হয়েছেন, আজকের এই রাতে তাঁদেরও স্মরণ করি। তাঁরা আজ আমাদের প্রতিটি দেশবাসীর হৃদয়ে অমর। তাঁদের এই অপূর্ব আত্মবলিদান অনাদি অনন্তকাল ধরে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের যোগাবে উৎস। আমি আজ রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আবার স্মরণ করছি। তিনি আজও পাকিস্তানের কোন এক কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করছেন। আসুন, আজ আমরা আমাদের প্রিয়তম নেতাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবার দৃঢ় সংকল্পকে বলিষ্ঠ শপথের আগুনে আরেকবার ঝলসে নিই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ এক বাস্তব সত্য। আগামী ক’দিনের মধ্যেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় বসবে। দেশ আজও নৃশংস ও নির্মম শত্রর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। রক্ত ঝরছে এর বুকের সেই ক্ষতচিহ্ন থেকে। তাই এ জাতির ভবিষ্যৎকে নবরূপ দান করতে হবে আমাদেরই। নতুন করে গড়ে তুলবার দায়িতু এই সরকারের। সরকারের সামনে রয়েছে অনেক কাজ। কিন্তু আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস আল্লার অশেষ কৃপায় সোনার বাংলা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সব বাধাই আমরা সফলতার সংগে অতিক্রম করতে সক্ষম হবো। এ মুহুর্তে দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই গৌরবোজ্জ্বল ক্ষণটিকে যথাযথ মর্যাদা ও শান্তভাবে গ্রহণ করুন এবং সুখী ও সমৃদ্ধিশালী একটি সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত আমার সরকারের যাবতীয় কর্মপন্থার প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা করুন। আমাদের মহান প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত গত ন’মাস ধরে আমাদের জন্যে যা করেছেন তার জন্যে আমি এই সুবাদে আমার নিজের, আমার সরকারের ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের আরেকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে যে সাহস ও দূরদুষ্টির পরিচয় দিয়েছেন তার জণ্যে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সমর্থন দানের জন্যে আমি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, পোলান্ড ও অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দ, জনগণ ও সরকারের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। গত ন’মাস ধরে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা মাতৃভূমির মুক্তির জন্যে যে স্মরণীয় শৌর্য ও দুরতিক্রম্য বীরত্বের প্রমাণ দিয়েছেন আমি তার জন্যে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাঁদের অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। মাতৃভূমির মুক্তির জন্যে আমাদের মুক্তিবাহিনীর সংগে কাধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিকেরা অসীম বীরত্বের সংগে লড়ছেন আমি তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।