পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র হয়েছে, সে বিষয়েও আমরা সচেতন। তাঁদের এই কষ্ট স্বীকার সার্থক হয়েছে। শরণার্থীরা এখন মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যেকে নিজের ঘরে ফিরে আসবেন। আমাদের সংগ্রামের প্রতি দৃঢ়তাপূর্ণ সমর্থন দানের জন্য বাংলাদেশের মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। পোল্যান্ড এবং অন্য যেসব দেশ আমাদের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন করেছে, তাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা একথাও ভুলিনি যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনগণ, সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য আমাদের সংগ্রামকে যথার্থরূপে তুলে ধরে এই সংগ্রাম সফল করতে সাহায্য করেছেন। দেশবাসী ভাইবোনেরা, বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্ত আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনও শত্রর কারাগারে। পাকিস্তানী শাসকদেরকে আমি আহবান জানাচ্ছি তাঁরা শেষ মুহুর্তের অন্ততঃ শুভবুদ্ধির পরিচয় দিন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করুন। এই দাবী মেনে নেবার সুফল সম্পর্কে পাকিস্তানক অবহিত করাও তার বন্ধুদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি। বন্ধুগণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এলা এক রক্তাপুত ভূমিতে, এক ধ্বংসস্তুপের মধ্যে। জনগণের আশা ও আকঙ্খা অনুযায়ী এই দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব এখন আমাদের সামনে। দেশের দ্রুত পুনর্গঠনের কাজে আমরা ভারতের সহযোগিতা ও সাহায্য কামনা করব। শুধু পুনঃর্নিমাণ নয়-নতুন সমাজ গঠনের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। সংগ্রামের কালে সমগ্র জাতির যে ঐক্য ও আত্মত্যাগের পরিচয় আমরা দিয়েছি, সেই ঐক্য ও ত্যাগের মনোভাব অটুট রাখতে হবে। তবেই গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি দৃঢ় হবে। সেই নতুন আলো পথে আজ আমরা যাত্রা করলাম। জয় বাংলা জাতির উদ্দেশে ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে প্রদত্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের বেতার ভাষণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতর কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত পুস্তিকা।