পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



355

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র

স্বাধীন বাংলা সরকার অনুমোদিত

গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঠামো

সংগঠনঃ

 ১। ভিত্তি-ফৌজ কর্মী গ্রামবাসীর সাথে গ্রামের দৈনন্দিন কাজে মিশে গিয়ে গ্রামবাসীকে শেখ মুজিবের অমর নির্দেশ “গ্রামে গ্রামে দুর্গ গড়’’ ব্যাখ্যা করে আত্মনির্ভরশীল জীবন-যাপনের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেবে, এবং তার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী শ্রম-সমবায়- শৃঙ্খলার পথ দেখাবে। ভিত্তি-ফৌজ কর্মী গ্রামবাসী গ্রামবাসী মুরুববীদের আশ্রয়ে থেকে পরামর্শ-অনুপ্রেরণা দিয়ে কাজ করাবে, কিন্তু নিজে কোনো নেতৃত্বের মাতববরী করবে না।

 ২। গ্রামের সকল কাজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীনতাকামী গ্রাম পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে। গ্রামবাসীর সাধারণ বৈঠক মনোনয়নে সমাজ সেবক শ্রদ্ধাভাজন নেতাদের পঞ্চায়েতে নিযুক্ত হবেন। গ্রামের লোকসংখ্যা অনুযায়ী ৩ থেকে ৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য হলেই চলবে।

 ৩। একই বৈঠকে সদস্যরা নিজেদের মধ্যে, গ্রামে স্থায়ী অধিবাসী যুক্তিবাদী একজনকে নেতা মনোনীত করবে। এবং গ্রামবাসীর অনুমোদন পেলে তিনি পঞ্চায়েত নেতা হিসাবে নিযুক্ত হবেন। নেতার জন্য গ্রামবাসীর সাধারণ অনুমোদন অবশ্য প্রয়োজনীয়, কেননা পঞ্চায়েতের মুখপাত্র হিসাবে তিনিই গ্রামের শাসন-বিচার-শৃঙ্খলার অধিপতি হবেন।

 ৪। পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কার্যপ্রণালী পঞ্চায়েত নিজেরাই স্থির করে নেবেন। তবে সকল জরুরী অবস্থায় বিচার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা পঞ্চায়েত নেতার হাতে থাকতে হবে।

 ৫। প্রতি দুই মাসের মধ্যে গ্রামবাসীর সাধারণ বৈঠক বসবে,এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে সমালোচনা কিছু থাকরে তা করতেই হবে। সমালোচনার পর সদস্যেরা পুনরায় নিযুক্ত অথবা পরিবর্তিত হবে।

কার্যক্রমঃ

 ১। গ্রামের আত্মনির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তোলার সকল কাজে, বিশেষতঃ দুর্ভিক্ষ এবং অরাজকতা দমনের কাজে, আবালবৃদ্ধবনিতা গ্রামবাসীর সকল সম্ভাব্য পরিশ্রম এবং সমবায় যতদূর সম্ভব বাড়াতে হবে।

 ২। পল্লী রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে এবং কঠোর শাসন-শৃঙ্খলায় গ্রামের আভ্যন্তরীণ চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং শত্রপক্ষের আনুগত্য নিশ্চিহ্ন করে রাখতে হবে।

 ৩। গ্রামের আভ্যন্তরীণ সকল ঝগড়া-বিরোধের মীমাংসা করে, প্রয়োজনীয় শাস্তি দিয়ে, কোট-কাছারী যাওয়া বন্ধ করতে হবে। মামলাবাজী নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।

 ৪। শ্রমিক-মালিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগ এবং প্রচলিত সকল উৎপাদনের ভাগাভাগি বিনিময় এবং বিতরণ ব্যবস্থা করে সুখী সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

 ৫। গ্রামবাসীর সাধ্যমত পরিশ্রম এবং সমবায়ের সাথে সাথে কৃষি এবং কুটির শিল্পের সকল ক্ষেত্রে গ্রামে আর কি কি উৎপাদন হতে পারে এবং গ্রামের উৎপাদন দিয়েই কি করে বাইরে থেকে আসা জিনিসের কাজ চলতে পারে সেই উদ্ভাবনা শক্তিও বাড়াতে হবে। যেন যেন যে কোনো বাইরের শত্রর বিরুদ্ধে শুধু খাদ্য এবং সমাজ-শৃঙ্খলাতেই নয়, বস্ত্র, আবাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামের পথ-ঘাট, শরীরচর্চা এবং মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৃষ্টির সকল ক্ষেত্রেই অদম্য মনোবলে আত্মনির্ভরশীল গ্রামের জীবন-যাপন সমাজ-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়।


  • যুব প্রশিক্ষণকালে অনেক সময় পাঠ্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হতো।