পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

868 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র বাংলাদেশের সংগ্রাম ভারত উপমহাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের সব কটি দেশের দুয়ারে করাঘাত করেছে। মুক্তবুদ্ধি বিশ্ববিবেকগোষ্ঠী বাংলার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের আহবানে সাড়া দিয়েছেন। মানবিক মূল্যবোধ, শান্তি ও সভ্যতার বিকাশে বিশ্বাসী সকল বিশ্ব নাগরিক আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। সমগ্র বিশ্বের সাংবাদিক সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবী এবং রাষ্ট্র ও জননেতাদের সাগ্রহ সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে পাকিস্থান ঘরোয়া বা আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে চালিয়ে দিতে বা ছাই চাপা দিতে পারে নি। গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ আর কারও কাছেই অপরিচিত নয়। কিন্তু বাংলাকে আন্তর্জাতিক জগতে উপস্থাপিত করতে গিয়ে আমরা বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে অনেক দেশ আছে যেখানে জনমত ও গণবিবেক সে দেশের সরকারকে কার্যকরভাবে প্রভাবান্বিত করতে পারে না। ভূমন্ডলীয় ষ্ট্র্যাটেজির স্বার্থে এসব দেশ স্থানীয় জনমতকে নিদারুণভাবে উপেক্ষা করেছে। ফলে সে ধরনের দেশের জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ কিন্তু সরকারগুলোর ব্যবহারে আমরা ক্ষুদ্ধ ও দুঃখিত। গভীর ক্ষোভের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যেসব দেশ গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং হরদম গণতন্ত্র ও মঙ্গলমানসী বিধিবিধানের কথা কপচাচ্ছেন তারাই পাকিসত্মানী স্বৈরতন্ত্রের দোসর হিসেবে অনন্তর গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করেছেন বাংলার মাটিতে। দরিদ্র জাতি ও ক্ষুদ্রায়তন দেমের প্রতি আমর্যাদাকর ব্যবহার প্রদর্শন বা সে দেশের গণশক্তিকে ছোট করে দেখার একটা প্রবনতা আমরা কোন কোন বৃহৎ শক্তির মধ্যে লক্ষ্য করেছি। ভিখিরির হাত যদি আমরা প্রসারিত না করি তাহলে দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে যে আমাদের অমর্যাদা করা যায় না, এ কথাটা স্পষ্টভাবে এদের বলে দেবার প্রয়োজন আছে বলে আমার বিশ্বাস । ক্ষমতার মোহে আর সম্পদের দন্তে মানুষের, হয়েছে। ভিয়েৎনাম রণাঙ্গনের অভিজ্ঞতা থেকেও যাদের এ বাতিকের অবসান হয়নি, আশা করি বাংলাদেশের উত্থানের দৃষ্টান্ত দিয়ে তারা তাদের চরিত্র শুধরে নেবেন। মানুষের শক্তির কাছে বিশ্বের কোথাও যদি কোনদিন মানুষের মুক্তি সংগ্রাম বিজয়ী হয়ে থাকে তবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামও বিজয়ী হবে। ইতিহাস এ শিক্ষা ও সিদ্ধান্তই ঘোষণা করেছে। বৃহৎ শক্তি, সাম্রাজ্যবাদ, নয়া সাম্রাজ্যবাদ ও শোধনবাদের অক্টোপাশ ছিড়ে আমরা যখন বেরিয়ে এসেছি তখন বালির বাঁধ দিয়ে এ জোয়ারের গতিরোধ করা যাবে না। মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বৃহৎশক্তির তোয়াক্কা কোনদিন করেনি। আমরাও করি না। যে শক্তি মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয় না সে শক্তি পাশব শক্তি। সে পাশব শক্তির বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি এবং করব। অতি শক্তিমান দু-একটি দেশ তাদের আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, তাদের মন ও মানসিকতা আজ দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। চিন্তাক্ষেত্রে যে ক্লীবত্ব তারা অর্জন করেছে তার পর এদের কাছ থেকে মুক্তিকামী মানুষের আশা করার কিছু নেই। মানুষের সংঘবদ্ধ শক্তির কাছে বলবান ব্যক্তি বা গোষ্ঠী চিরদিন হার স্বীকার করেছে। ভোগের লিঙ্গসার অবসান নতুন জাতি হিসেবে যে গণশক্তির উদ্বোধন আমরা করেছি সে গণশক্তি দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলব। ব্যক্তিসত্তাকে ভূলে গিয়ে গোটা জাতির জন্যে আমাদের কাজ করতে হবে। অসাধু প্রতিযোগিতা বা দলাদলির মাধ্যমে উচ্চাকাংক্ষা চরিতার্থ করার চিরন্তন অভ্যাস আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। এ ধরনের আকাজক্ষার কাঙালরা অতীতে জাতির সর্বনাশ করেছে। কারণ অসাধু প্রতিযোগিতার দ্বারা তারা সৎ ও চরিত্রবান