পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

869 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র ব্যক্তিদের কর্মপ্রেরণা ও প্রবুদ্ধিকে প্রতিহত করেছে। আমরা অবশ্যই আশা করব যে আমরা দেশের তরুনের বুকের উষ্ণ রুধির-ধারা আকাঙক্ষার কাঙালদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অবলুপ্তির অতল গহবরে। সমগ্র জাতির জন্য আমরা একাত্ম হয়ে কাজ করব এবং জাতীয় সমৃদ্ধির বন্টননামায় আমাদের যা বরাদ্দ থাকবে তাই আমারা ভোগ করব ভোগের লিঙ্গসার হোক অবসান। ত্যাগের দীপ্তিতে হোক দীপ্তিমান বাংলাদেশের রক্তাক্ত বসুমতি। ঋণ অপরিশোধ্য আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী মানুষ আবেগ -আপুত ও বিনয়াবনত চিত্তে ভারতের এ স্বীকৃতি গ্রহন করেছে। ভারত শুধুমাত্র আমাদের প্রতিবেশী রাষ্টই নয়, এ ভরত অনন্যসুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। ভারত একটা শুধু ভূখন্ডই নয়, এটা বিবর্তনশীল মানব সভ্যতার অর্নিবাণ শিখাসম্পন্ন একটা পিলসুজও বটে। আয়তনের বিরাটত্ব, চিন্তার ব্যাপ্তি, আদর্শের দু্যতি এবং বৈচিত্রের ঐক্যের সমাহারে ভারত মুদু একটা দেশ নয়, এটা একটা উপমহাদেশ। বাংলাদেশের নির্যাতিত মানবতার পাশে ভারত যে অনাবিল বলিষ্ঠতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে তার তুলনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। বাংলার শরণার্থীর জণ্যে, বাংলার ছিন্নমূল এবং মুক্তিকামী মানুষের জন্যে ভারত সরকার ও ভারতের জনগণ যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন সে ত্যাগের ঋন অপরিশোধ্য। বাংলার মানুষ হৃদয়-নিংড়ানো প্রেম প্রীতি ভালবাসা দিয়ে ভারতবাসীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মর্যাদা দিতে চেষ্টার ত্রটি করবে না এ বিশ্বাস আমার আছে। মহান ভাতের সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আমাদে উভয় রাষ্ট্রের সরকারও জনগণের মধ্যকার বন্দুত্ব দিন দিন গাঢ়তর হবে বলে আমাদে স্থিরপ্রত্যয় আছে। ভারতে প্রধানমন্ত্ৰী শ্রীমতী ইন্দরা গান্ধী তার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বরা ভারতের জীবন দর্শনকে বিশ্বদরবারে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ বলেও বলেও আমরা মনে করি। আর এক বন্ধু ভারতের পাশাপাশি আমাদের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভুটানের মহারাজা জিগমে দরজি ওয়াংচোক ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি যে দরদ প্রদর্শন করেছেন সে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফ রয়েছি। বাংলার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর সহৃদয় সমর্থনের কথাও আমাদের অজ্ঞাত নয়। মহারাজা, তাঁর সরকার ও তাঁর জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তত্ততে আমরা ব্ৰতী হব এ আশ্বাস আমরা তাদের দিতে পারি। রুশ সরকার ও জনগণের প্রতি বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে সোভিয়েট রাশিয়া আগাগোড়া যে গণমুখী ভূমিকা পালন করেছে সে ভূমিকা শুধু বাংলাদেশের নয়, মুক্তিকামী সকল মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। রুশ সরকার আমাদের সমস্যা ও সংগ্রামের প্রতি যে গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন সেজন্য আমরা তাঁদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি যে, রুশ সরকার ও জনগণ আমাদের রক্তাক্ত সংগ্রামকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন এবং তার ফলশ্রুতি হিসাবে তারা আমাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দেবেন। স্কেন্ডিনেভীয় ও পোলান্ডসহ পূর্ব ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ আমাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন। আমাদে সমস্যা, সংকট ও সংগ্রাম সম্পর্কে তাঁরা ও শ্রদ্ধাশীল । আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি, যে, মুক্তিকামী মানুষের সফল সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে তাঁরাও এগিয়ে আসবেন। বৃটেন ও ফরাসী ভূমিকা বৃটেন ও ফরাসী সরকার সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ প্রশ্নে একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করব যে, এ নিরপেক্ষতা এটা অর্থহীন কটনৈতিক অনুশীলন নয়। বৃটেন ও বাংলাদেশের মধ্যকার