পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ত্রয়োদশ খণ্ড).pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

119 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ত্রয়োদশ খন্ড তবু বায়াফ্রার কথা মনে করে অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন না। কিন্তু এটি বাজে তুলনা’। শ্রী ম্যান কদাচ মনে করেন না যে, বাংলাদেশে আজ যা হচ্ছে, তা শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। শ্রী ম্যানের বিশ্বাস, পৃথিবীর লোকেরা ভাল করে জানে না, পূর্ববঙ্গে কী হচ্ছে এমনকি তাঁর নিজের দেশের সরকার ও জনগণও বিশদ খবরাখবর জানেন না। বৃটিশ সরকার এই জন্যই চুপ করে আছেন বলে শ্রী ম্যান মনে করেন। প্রশ্নঃ আপনি কেন বৃটিশ হাইকমিশনারকে অনুরোধ করছেন না, ঘুরে সব দেখে গিয়ে সরকারকে জানাতে? উত্তরঃ আমি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। দেখলাম তিনি আমার চেয়েও বেশী খবর রাখেন। প্রশ্নঃ বৃটিশ সংবাদ পত্রগুলি কি পূর্ববঙ্গের এই যুদ্ধের খবর ছেপে দিচ্ছেন? উত্তরঃ সিরিয়াস কাগজগুলি ভাল খবরই দিচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় আমাদের পপুলার খবরের কাগজগুলি ভালভাবে কভারেজ দিচ্ছে না। প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশকে নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধবার সম্ভাবনা আছে? উত্তরঃ দেখুন, ভারত যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে চীন এগিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার নয়। প্রশ্নঃ আপনি তো সব দেখে গেলেন, আপনার কি মনে হল ভারত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে? শ্রী ম্যানের সঙ্গে সঙ্গে জবাবঃ আমি ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে, ভারত এমন কিছু করছে না, যেটি অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের পক্ষে সহায়ক হতে পারে। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেনঃ আচ্ছা মিঃ ম্যান, পাকিস্তানী ডেপুটি হাইকমিশনার মিঃ মোহাম্মদ মাসুদ কলকাতার পাক ডেপুটি হাইকমিশনের খবর নিতে এসেছেন। সরকারের বদলে আপনারা এমন একটা অবস্থায় পড়লে কি করতেন? শ্রী ম্যানঃ আমরা ব্যাপারটা আদালতের ওপরেই ছেড়ে দিতাম। আমি একজন আইন ব্যবসায়ী। আমি বুঝি এটি সম্পূর্ণ আইনের এক্তিয়ার। বৃটেনে পূর্ববঙ্গে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কমিটি-জাসটিস ফর ইষ্টবেঙ্গল কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন জন হ্যানাম (কনজারভেটিভ এম-পি), জন পারদো (লিবারেল এম-পি)। কমিটিতে আরও দুজন সদস্য আছেন, তাঁরা কেউ এমপি নন। শ্রী ম্যান এই কাটমির অবস্থায়ী চেয়ারম্যান। কমিটির ছয় দফা উদ্দেশ্যঃ (১) হত্যা ও যুদ্ধ বন্ধ করা, (২) আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া, (৩) যতদিন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান ধবংসাত্মক কার্যকলাপ চালাবেন, ততদিন পাকিস্তানে উন্নয়নমূলক সাহায্য বন্ধ রাখা, (৪) পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, (৫) শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ (৬) সিংহলে পাকিস্তানের সামরিক দ্রব্যাদি নামানোর অধিকারের অবসান। কমিটি তাঁদের কার্যবিবরণীর এই খসড়ায় পূর্ব পাকিস্তান কথাটাই ব্যবহার করেছেন- বাংলাদেশ নয়।