পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
84

 ৬ই জুলাই পাকসেনারা প্রায় ১টি ব্যাটালিয়ান নিয়ে মন্দভাগ বাজার পর্যন্ত অগ্রসর হয়। সেখান থেকে তারা সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের ‘এ’ আমাদের 'এ' কোম্পানী এবং ‘সি’ কোম্পানী মেজর সালেক এবং ক্যাপ্টেন গাফ্ফারের নেতৃত্বে পাকসেনাদের শালদা নদী এনক্লেভ-এর ভিতর অগ্রসর হতে প্রচণ্ড বাধা দেয়। পাকসেনারা তাদের ফিল্ড আর্টিলারি মন্দভাগ বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসে এবং কামানের সাহায্যে আমাদের অবস্থানের উপর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলোতে তীব্র গোলাবর্ষন করতে থাকে। এই গোলাবর্ষনে আমাদের ১১ জন আহত হয় এবং অন্তত ৩২ জন বেসামরিক ব্যাক্তি হতাহত হয়। পাকসেনারা তাদের আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে এবং শালদা নদী এনক্লেভ দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। আমাদের মুক্তিসেনারাও তাদের এ আক্রমণে তীব্র বাধা দিতে থাকে। যদিও আমাদের মর্টারের গোলা তাদের কামানের অবস্থান পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি তবুও মর্টারের গোলা এবং মেশিনগুলিতে তাদের আক্রমণ প্রতিহত হয়ে যায়। তারা পিছু হটে মন্দভাগ বাজারে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। মেজর সালেক পাকসেনাদের শালদা নদীর অবস্থানের বিরুদ্ধে তাঁর কর্যকলাপ আরও তীব্রতর করার জন্য ৯ই জুলাই পাক অবস্থানের উপর ঘোরাফিরা করছিল, ঠিক সে সময় আমাদের কামানগুলি এবং মর্টার পাকসেনাদের অবস্থানের উপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষন করতে থাকে। এই গোলাবর্ষন প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে। এই অকস্মাৎ প্রচণ্ড মর্টার এবং কামানের গোলাবর্ষনে শত্রুরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এতে তাদের অনেক হতাহত হয়। পরে জানতে পারা যায় যে এই গোলাগুলিতে ১৯ জন পাকসেনা নিহত এবং ১১জন আহত হয়। একটি মেশিনগান বাঙ্কারসহ তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়। কামানের গোলার আঘাতে তাপদের একটি এ্যামুনিশন ডাম্প বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এর পরদিন একটি স্পীডবোট পাকসেনাদের নিয়ে শালদা নদী হয়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছিল। আমাদের পেট্রোল পার্টিটি, যেটি আগে থেকেই শালদা নদীর পিছনে অবস্থান নিয়েলি, তারা পাক-বাহিনীর স্পীডবোট এ্যামবুশ করে। এ্যামবুশ-এর সময় আমাদের গুলির আঘাতে স্পীডবোট ডুবে যায়। ১২ জন পাকসেনা হয় গুলিতে না হয় পানিতে ডুবে মারা যায়। মৃতদের মধ্যে ১ জন মেজর ও ১ জন ক্যাপ্টেন ছিল এবং তাদের পদমর্যাদার ব্যাজ এ্যামবুশ পার্টি নিয়ে আসে। এ্যামবুশ পার্টি পানি থেকে ১ টি মেশিনগান, একটি অয়ারলেস সেট এবং ১ টি ম্যাপ (যাতে শত্রু অবস্থানগুলি চিহ্নিত ছিল) উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এরপরই পাকসেনাদের কামানের গোলা আমাদের দলের উপর পড়তে থাকে। আমাদের দল তখন বাধ্য হয়ে এ্যামবুশ স্থান পরিত্যাগ করে।

 ১০ই জুলাই পাকসেনারা একটি কোম্পানী নিয়ে বিকেল ৪ টার সময় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। পাকসেনারা শালদা নদীর উঁচু স্থান সাগরতলা স্থানটি দখল করার জন্য অগ্রসর হয়। তাদের সঙ্গে তাদের গোলন্দাজ বাহিনীও সাহায্য করে। কিন্তু সাগরতলা উঁচু অবস্থানের উপর আমাদের যে প্লাটুনটি ছিল সেটি এব রেললাইনের পশ্চিমে আমাদের আর ১টা প্লাটুন তাদেরকে প্রচণ্ডভাবে বাধা দেয়। আমাদের ৩ ইঞ্চি মর্টার এবং মেশিনগানের গোলাগুলিতে পাকসেনাদের আক্রমণ পর্যদুস্ত হয়। তাদের প্রায় ৩০/৪০ জন হতাহত হয়। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে শালদা নদীতে তাদের নিজ অবস্থানে পালিয়ে যায়।

 পাকিস্তানীদের একটি দল নবীনগরে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। পাকসেনাদের নবীনগরে অবস্থানের পর আমাদের নরসিংদী, ভৈরববাজার এবং কালিগঞ্জে যাতায়াতের রাস্তায় বাধার সৃষ্টি হয়। পাকসেনারা কয়েকজন স্থানীয় দালালের সহায়তায় মুক্তিবাহিনীর জন্য সমস্ত এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে। ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন এ এলাকাকে পুনরায় বিপদমুক্ত করার জন্য ১৬ জনের ১টি দলকে হাবিলদার আওয়ালের নেতৃত্বে নবীনগর পাঠায়। হাবিলদার আওয়াল কসবার উত্তর দিয়ে অনুপ্রবেশ করে নবীনগরের ৩ মাইল পশ্চিমে তার গোপন ঘাঁটি স্থাপন করে। এরপরা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় পাকসেনাদের অবস্থান সম্পর্কে সম্পুর্ণ খাবর যোগাড় করে। এরপর ৮ই জুলাই সকাল ৬টায় পাকসেনাদের নবীনগরের অবস্থানটির উপর অতর্কিত আক্রমণ