পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
85

করে। এ অতর্কিত আক্রমণের জন্য পাকসেনারা মোটেই প্রস্তুত ছিলনা। তারা হকচকিয়ে যায় এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি পাকসেনাদের ৭জন ও ৫জন দালালকে নিহত করতে সক্ষম হয়। সংঘর্ষে আমাদের ১জন আহত হয়। আমি এ সময়ে ঢাকাতে আরো কয়েকটি গেরিলা পার্টি পাঠাই। এই দলগুলিও আগের প্রেরিত দলগুলিও আগের প্রেরিত দলগুলির সাথে যোগ দেয় এবং ঢাকা-নারায়নগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাদের গেরিলা কার্যকলাপ চালিয়ে যায়। একটি দল জুলাই মাসের প্রথমেই পাকসেনাদের ছোট ১টি Ammunition Point আক্রমন করে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে পাকবাহিনী সমস্ত ঢাকাতে সান্ধ্য আইন জারি করে এবং ঢাকা শহরে প্রহারের ব্যবস্থা করে। ঐ দিনই দু'জন গেরিলা নিউমার্কেটের নিকট পাকসেনাদের ১টি জিপের ভিতর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ফলে ১জন অফিসার ও ৩জন পাকসেনা নিহত হয়। ৫ই জুলাই নারায়নগঞ্জে দু'জন আর একটি দল গুলশান সিনেমা হলের পর্দার ভিতর ১টি গ্রোনেড নিক্ষেপ করে। ফলে পর্দাটি সম্পুর্ন পুড়ে যায় এবং নিকটবর্তী ৫জন দালালও আহত হয়। সমস্ত নারায়নঞ্জে এবং ঢাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ৪ঠা জুলাই দুপুর ১২টার সময় ৫জন গেরিলার ১টি দল পাগলাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাইলন উড়িয়ে দেয়। ১০ জনের গেরিলার ১টি দল নিউমার্কেটের নিকট পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং পাকসেনাদের ১টি মিলিত দলের উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ফলে ৮জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও ৪জন পাকসেনা নিহত হয়।

 এদিকে ১১ই জুলাই সকাল ৮টা থেকে অকস্মাৎ পাকসেনারা ভারী কামান এবং মর্টারের সাহায্যে আমাদের শালদা নদী অবস্থানের উপর প্রচণ্ড গোলাগুলি চালাতে থাকে। এই গোলাগুলির ফলে আমাদের শালদা নদী অবস্থানে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাকসেনাদের গোলাগুলি সমস্ত দিন ধরে চলতে থাকে। মর্টার Splinter-এর আঘাতে ৪র্থ বেঙ্গলের হাবি”লদার তাজুল মিয়া এবং সিপাই আব্দুর রাজ্জাক মারাত্মকভাবে আহত হয়। এছাড়াও দু'জন বেসামরিক লোক নিহত ও ৮জন বেসামরিক লোক আহত হয়। কিন্তু বিকেলের দিকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রমণও হয়নি।

 ৯ই জুলাই পাকসেনারা আমাদের কোটেশ্বর অবস্থানের উপর সকাল ৬টায় আবার তাদের আক্রমণ শুরু করে। আমাদের কোটেশ্বর অবস্থানের সৈন্যরা মর্টার এবং কামানের সহায়তায় পাকসেনাদের এই আক্রমণের মোকাবিলা করে। পাকসোরা প্রথমে দু'টি কোম্পানী নিয়ে আক্রমণ চালায়। পরে আরও দু'টি কোম্পানীকে শক্তি বৃদ্ধির জন্য নিয়ে আসে। ৩/৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পর আমাদের কামানের গোলায় এবং মেশিনগানের গুলিতে পাকিস্তানীদের আক্রমণ ব্যাহত হয়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের অন্তত ২৪/২৫ জন নিহত হয়। তারা আক্রমণ বন্ধ করে পিছু হটে যায়।

 আমাদের petrol পার্টি ৯ই জুলাই পাকসেনাদের কোম্পানী হেডকোয়ার্টার রেকি করে এবং অবস্থান সমন্ধে জানতে পারে। আমাদের কামানগুলি এই কোম্পানী হেডকোয়ার্টারের উপর প্রচণ্ড গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। ফলে দু'জন পাকসেনা নিহত এবং ছ'জন আহত হয়। এর মধ্যে একজন অফিসার ও তাঁর signaller ও ছিল। স্থানীয় লোকেরা অফিসারটির কাঁধে ব্যাজ দেখে সনাক্ত করতে পেরেছিল। শত্রুদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল।

 ১০ই জুলাই রাতে ক্যাপ্টেন গাফ্ফার ৪র্থ বেঙ্গলের সি কোম্পানী থেকে দু'টি সেকশন শালদা নদীর পশ্চিমে কামালপুর এবং মাইঝখাইরের ভিতর এ্যামবুশ অবস্থানের ভিতর এসে পড়ে ঠিক সে সময় পাকসেনাদলের সম্মুখবর্তী অংশের উপর আমাদের সৈন্যরা গুলি চালাতে শুরু করে। অতর্কিত আক্রমণে পাকসেনারা হতভম্ব হয়ে যায় এবং কিছু বোঝার আগেই তাদের অনেক লোক হতাহত হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা পেছনের দিকে পালাতে শুরু করে। এ অবস্থাতেও তাদের অনেক হতাহত হয়। সংঘর্ষে পাকসেনাদের একজন মেজর, দু'জন ক্যাপ্টেন ও ৮জন সিপাই নিহত হয়। আমাদের Ambush পার্টি ১টি MGIA মেশিনগান এবং Am PRC 10 Wireless Set হস্তগত হয়।