পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
90

গাফফারের আক্রমণের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কামানগুলি থেকে অতি নিকটবর্তী শত্রু অবস্থানের বাঙ্কারগুলি এবং বাজারের ঘরগুলিকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষন করতে থাকে, ফলে অনেক বাঙ্কার এবং ঘর ধ্বংস হয়ে যায় এবং বাজারে অবস্থিত পাকসেনারা আহত ও নিহত হয়। এত নিকট থেকে অতর্কিত কামানের গোলার আক্রমণ পাকসেনারা আশা করতে পারেনি। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাকসেনাদের অন্তত ৬০/৭০ জন লোক হতাহত হয়। পাকসেনাদের আর্তনাদ এবং চিৎকার আমাদের লোকেরাও শুনতে পায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের প্রতিরোধশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে এবং তারা অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। দু'ঘণ্টা যুদ্ধের পর মন্দভাগ বাজার এবং অনেক অস্ত্রসস্ত্র ক্যাপ্টেন গাফফারের দখলে আসে। এরপর মন্দভাগ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত আমাদের দখলে থাকে। এর পরদিন আমাদের একটি পার্টি শালদা নদীতে এ্যামবুশ পাতে। পাকসেনাদের একটি স্পীডবোট দুপুর ১টায় এ্যামবুশে পড়ে যায়। এ্যামবুশ পার্টির গুলিতে স্পীডবোটটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ২০জন পাকসেনা হতাহত হয়। কেউ কেউ নদীতে পড়ে ভেসে যায়। এ্যামবুশ পার্টিটি পরে নিরাপদে মন্দভাগ অবস্থানে আসে। আমাদের হেডকোয়ার্টারে খবর পাই যে, দাউদকান্দিতে পাকসেনারা ফেরীঘাটের নিকটে ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এখানে প্রায় দু' কোম্পানীর মত পাকসেনা বাঙ্কার নির্মাণ করে ঘাঁটিটি বেশ শক্তিশালী করে তোলে। এখানে পাকসেনারা ঢাকা-কুমিল্লাগামী প্রতিটি গাড়ী দাঁড় করিয়ে অনুসন্ধান চালায়। তাছাড়া নিকটবর্তী এলাকা স্পীড বোট এ টহল দেয়। আমরা একটি প্লাটুন দাউকান্দিতে পাঠিয়ে দেই। এদের সঙ্গে আর একটি দল পাঠান হয় সৈয়দনগর অয়ারলেস স্টেশন এবং ইলিয়টগঞ্জ রাস্তার সেতু ধ্বংস করার জন্য। আমাদের দলগুলি দাউদকান্দিতে যেয়ে গৌরীপুর নামক স্থানে তাদের ঘাটি তৈরী করে। এরপর শত্রুদের গতিবিধি সম্বন্ধে খবর নেয়। ১৩ই জুলাই সন্ধ্যা ৮টার সময় প্লাটুনটি দাউদকান্দির উত্তরে গোমতী নদীতে পাকসেনাদের একটি টহলদারী স্পীডবোটকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে একজন লেফটেন্যাণ্ট এবং ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অফিসারটির ব্যাঙ্কের ব্যাজ এবং অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আসা হয়। এরপর এই দলটি পরদিন রাতে সৈয়দনগর অয়ারলেস স্টেশনটি ধ্বংস করে দেয়। দলে অপর অংশ ইলিয়টগঞ্জ নতুন সেতুটি ডেমোলিশ লাগিয়ে দুটি স্প্যান উড়িয়ে দেয়া হয়। তাদের কাজ সম্পূর্ণ করে দলগুলি নিরাপদে হেডকোয়ার্টারে ফেরত আসে।

 কুমিল্লা-চাঁদপুর রাস্তায় হাজিগঞ্জের নিকট রামচন্দ্রপুরের ব্রীজ উড়িয়ে দেয়ার পর পাকসেনাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ অসুবিধা হয়। পাকসেনারা ঔ জায়গাতে ফেরীর বন্দোবস্ত করে। এই ফেরী যোগাযোগ বিনষ্ট করার জন্য লেঃ মাহবুব একটি কোম্পানী রামচন্দ্রপুরে পাঠায়। ৬ই জুলাই ভোরে এই দলটি রামচন্দ্রপুরফেরীঘাটের নিকট এসে এ্যামবুশ পাতে। এই দলের অন্য অংশ ফেরী ঘাট থেকে আরও দক্ষিণে আর একটি এ্যামবুশ পাতে। ঐ দিনই সকাল ৭টার সময় পাকসেনাদের ১টি দল রামচন্দ্রপুর ফেরীঘাটে আসে। তাদের জিনিসপত্র তখন ফেরীঘাটে উঠচ্ছিল ঠিক সেইসময় এ্যামবুশ পার্টি তাদের উপর গুলি চালায়। এতে পাকসেনাদের ৪জন নিহত হয়। উভয়পক্ষে প্রায় ঘণ্টাখানেক গোলাগুলি চলে। গোলাগুলির সংবাদ পেয়ে চাঁদপুর থেকে পাকসেনাদের প্রায় দু' কোম্পানী সৈন্য সাহায্যের জন্য আসে। পাকসেনারা ফেরীঘাটের কিছু দূরে এসে গাড়ী থেকে নামে এবং এ্যামবুশ অবস্থানে অগ্রসর হবার জন্য প্রস্তুত হয়। ছিক সেই সময়ে আমাদের অন্য এ্যামবুশ পার্টিটি তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনারা সম্পুর্ণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং তাদের ৩১জন নিহত এবং ৫৪ জন আহত হয়। আমাদের এনসিও এবং একজন সিপাই গুরুতরভাবে আহত হয়। এরপর আমাদের দলটি এ্যামবুশ অবস্থান পরিত্যাগ করে। আসার পথে ৮ই জুলাই মুদ্দাফরগঞ্জ সড়কসেতুটি উড়িয়ে দিয়ে আসে। এরপর পাকসেনারা সেতুটির নিকটবর্তী কয়েকটি গ্রামেমর্টারের সাহায্যে গোলাগুলি করে। সে সময়ে পাকসেনাদের অভ্যর্থনার জন্য অনেক স্থানীয় দালাল শান্তি কমিটি সভার আয়োজক এবং মিছিল করে পাকসেনাদের অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই মিছিলের উপর গুলি চালিয়ে অনেককে তাদের হত্যা করে।

 আমাদের চাঁদপুর কোম্পানী যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কার্যকলাপ আরও বৃদ্ধি করে। স্থানীয় লোকদের সহায়তায় হাজীগঞ্জ এবং লাকসাম, চাঁদপুর ও কুমিল্লার সি-এণ্ড-বি রাস্তা ও রেলও য় সড়কের ২০০