পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
93

কষ্টে আবার কিছু পরিমাণ আই-এন-টি সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। আই-এন-টি যোগাড়ের পর আমি মোঃ রফিককে ডেকে পাঠাই। শেষ পর্যন্ত আমরা বাউসিয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সমর্থ হয়েছিলাম। লাটুমুড়াতে লেঃ হুমায়নের নেতৃত্বে যে কোম্পানী অবস্থান নিয়েছিল, সেই অবস্থানের উপর পাক বাহিনী তাদের চাপ অব্যাহত রাখে। লাটুমুড়ার অবস্থান থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে। লেঃ হুমায়নের কোম্পানীটি পাক বাহিনীর প্রচণ্ড চাপের মুখেও তাদের অবস্থানটি সাহসের সঙ্গে ধরে রাখে। মুক্তিযোদ্ধারা এই অবস্থান থেকে প্রায়ই পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালাতে থাকে। ১৭ই জুলাই বিকেল ৪টায় আমাদের ও-পি দেখতে পায় যে, লাটুমুড়া থেকে একটি শত্রুদল চন্দ্রপুর শত্রুঅবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। লেঃ হুমায়ুন কবির তৎক্ষণাৎ একটি প্লাটুন চন্দ্রপুরের রাস্তায় পাকসেনাদের এ্যামবুশ করার জন্য পাঠিয়ে দেয়। প্লাটুনটি চন্দ্রপুর থেকে একটি দূরে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পাকসেনারা যখনই সেই অবস্থানে পৌঁছে, ঠিক তখনই তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালানো হয়। ফলে৪জন পাকসেনা নিহত এবং আহত হয়। পাকসেনারা এ্যামবুশ থেকে বাঁচার জন্য লাটুমুড়ায় পলায়ন করে।

 ২০শে জুলাই সকাল ৯টার সময় ১টি প্লাটুন পাকসেনাদের ইয়াকুবপুর, চন্দ্রপুর এবং বাগানবাড়ী অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ করার জন্য পাঠানো হয়। এই প্লাটুনটি গোপন পথে গ্রামের ভিতর দিয়ে পাকসেনাদের অবস্থানের অতি নিকটে যেতে সমর্থ হয়। রেকি করার পর তারা দেখতে পায় যে, পাকসেনাদের কিছু লোক বিভিন্ন বাঙ্কারের উপর বসে চা পান করছে, এবং তাদের প্রহরার ব্যবস্থা বেশ শিথিল। এছাড়াও আরও ৩/৪টি দল বাঙ্কারের উপর দাড়িয়ে ছিল। তাদের একজন ও-পি গাছের উপর বসা ছিল। আমাদের প্লাটুনটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে অগ্রসর হয়ে তাদের বাঙ্কারগুলির উপর আক্রমণ চালায়। গোলাগুলিতে যেসব পাকসেনা বাঙ্কারের উপর বসে চা পানে ব্যস্ত ছিল এবং দাড়িয়েছিল, তারা সঙ্গে সঙ্গে আহত ও নিহত হল। নিকটবর্তী একটি ঘর থেকে কিছু পাকসেনা বেরিয়ে আসে এবং বাঙ্কারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে তারাও আহত ও নিহত হয়। এরপর পাকসেনাদের প্রতি আক্রমণ করারা আগেই আমাদের প্লাটুনটি অবস্থান ত্যাগ করে নিজেদের এলাকায় নিরাপদে ফিরে আসে। এই সংঘর্ষের ফলে ১৩ জন পাকসেনা নিহত ও ১০ জন আহত হয়। আমাদের একজন গুরুতর ভাবে আহত হয়।

 শালদা নদীতে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে ৪র্থ বেঙ্গলের 'এ' কোম্পানী এবং সি' কোম্পানী তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকসেনারা শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে নয়ানপুরের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করছিল। ১৭ ই জুলাই তাদের একটি দল রেলওয়ে স্টেশনের প্রায় এক হাজার গজ দক্ষিনে মনোরা রেলওয়ে ব্রীজ পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ব্রীজের কাছে এসে পাকসেনাদের দলটি ব্রীজের চতুর্দিকে বাঙ্কার তৈরীর প্রস্তুতি নেয়। বেলা সাড়ে ১২ টার সময় ‘এ’ কোম্পানীর একটা প্লাটুন মর্টারসহ পাকসেনাদের এই দলটির উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের ফলে পাকসেনারা সম্পুর্ণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং তাদের বেশকিছু লোক আহত ও নিহত হয়। পাকসেনারা উপায়ন্তর না দেখে আবার শালদা নদীতে পিছু হটে যায়। পরদিন সকাল ৯টার সময় শালদা নদী থেকে পাকসেনারা আবার মনোরা ব্রীজের দিকে অগ্রসর হয়। সকাল ৯টায় আমাদের সৈনিকরা আবার তাদের বাধা দেয় এবং পাকসেনাদের উপর মর্টার এবং কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। ফলে পাকসেনাদের ৪ জন লোক নিহত এবং ১০ জন আহত হয়। পাকসেনারা আর অগ্রসর না হয়ে পিছু হটে মনোরা ব্রীজের উত্তরে অবস্থান নেয়। ১৯শে জুলাই পাকসেনারা ব্রীজের দক্ষিণে আবার অবস্থান নেয় বাঙ্কার খোঁড়ার চেষ্টা করে। এবারও পাকিস্তানীরা আমাদের মর্টার, কামান এবং মেশিনগানের গোলাগুলিতে অনেক হতাহত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে স্থানীয় লোকের কাছে জানা যায় যে, পাকসেনারা আহত ও নিহত সঙ্গীদের নৌকায় করে পিছনে নিয়ে যায়। এদের সঠিক সংখ্যা সম্বন্ধে তাৎক্ষনিকভাবে সংবাদ জানা না গেলেও পরে জানা যায় ৮ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। ২১শে জুলাই সন্ধ্যায় ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানীল একটা প্লাটুন শালদা