পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
97

হস্তগত করে। সঙ্গে সঙ্গে তহশীল অফিস ও পালং থানার আঙ্গালিয়া বাজারে জুট গোজাউনে আগুনে লাগিয়ে ২৫হাজার মণ পাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। গেরিলারা আঙ্গালিয়া তহশীল অফিসও জ্বালিয়ে দেয়। এসব কার্যকলাপের ফলে মাদারীপুরের শাসনব্যবস্থা অচল হয়ে যায়।

 শালদা নদীতে এবং মন্দভাগে ক্যাপ্টেন গাফ্ফার এবং মেজর সালেক পাকবাহিনীকে বার বার আঘাত করতে থাকে। আমাদের রেকি পার্টি খবর নিয়ে আসে যে, ২৪শে জুলাই বিকেল ৩টার সময় পাকসেনারা নওগাঁও স্কুলে স্থানীয় দালালদের নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন কেরছে। এই সংবাদ পেয়ে ক্যাপ্টেন গাফফার একটি প্লাটুন মর্টারসহ নওগাঁর নিকট পাঠিয়ে দেয়।বিকেল ৫টায় পাকসেনাদের ৫০-৬০জন লোক ও স্থানীয় দালালরা স্কুল প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে তাদের আলোচনা সভা শুরু করে। সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আমাদের প্লাটুনটি মর্টারের সাহয্যে পাকসেনাদের এই সমাবেশের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। ফলে আলোচনা সভা ভেঙ্গে যায় এবং পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পাকসেনাদের ৩০জন লোক ৭জন দালালসহ নিহত হয়। আমাদের প্লাটুনটি নিরাপদে ফিরে আসে। পাকসেনারা শালদা নদীর দক্ষিণে মনোরা ভাঙ্গা রেলওয়ে সেতুটি মেরামত করার জন্যে আবার চেষ্টা চালায়।২৬শে জুলাই সকাল ১০টায় পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল তাদের শালদা নদী অবস্থান থেকে মনোরা সেতুর নিকট সমবেত হয়। এরপর সেতুর চতুর্দিকে তারা বাঙ্কার তৈরীর প্রস্তুতি নেয়। সংবাদ পেয়ে মেজর সালেক মর্টারসহ একটি প্লাটুন পাকসেনাদের মনোরা সেতু থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে পাঠিয়ে দেয়। বিকেল ৪টায় আমাদের দলটি আগরতলার নিকট অবস্থান নেয় এবং পাকসেনাদের উপর মর্টার এবং মেশিনগানের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আমাদের গোলাগুলিতে পাকসেনারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অনেক হতাহত হয়। মনোরা সেতু থেকে তারা পালিয়ে যায়। পরে বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পারলাম যে, পাকসেনাদের কমপক্ষে ৪ জন নিহত এবং অনেক আহত হয়েছে।

 ২৬শে জুলাই ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন একটা এ্যামবুশ পার্টি নওগাঁ এবং আকসিনার মাঝামাঝি রাস্তায় এ্যামবুশ পাতে। পাকসেনাদের একটি দল নওগাঁর পথে সেই এ্যামবুশে পড়ে যায়। ফলে ৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়। আমাদের একজন গুরুতরভাবে আহত হয়। প্লাটুনটি ফেরার পথে কল্যাণসাগরে আবার একটি এ্যামবুশ পেতে বসে থাকে। পাকসেনাদের একটি কোম্পানী সাইদাবাদ থেকে কসবার পথে সেই এ্যামবুশ-এ পড়ে যায়। ফলে ২১ জন পাকসেনা ও ১ জন দালাল নিহত হয় এবং ৯ জন আহত হয়। পাক পেট্রোল পার্টির একটি ট্রাকও ধ্বংস হয়। ঐ দিন ক্যাপ্টেন আউনউদ্দিনের একটি কমাণ্ডো দল বগাবাড়িতে একটি রেলওয়ে ব্রীজ ও ২-৩টি টেলিফোন পাইলন উড়িয়ে দেয়। আমরা যেসব গেরিলাদের ঢাকা এবং কুমিল্লার পশ্চিম ও ভৈরববাজারে এলাকায় পাঠাতাম, তারা কসবার উত্তর দিক দিয়ে ছাতুরা ও নবীনগর হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কার্যকলাপ সম্বন্ধে খবরাখবর নেয়ার জন্য পাকসেনারা দালালদের নিযুক্ত করে এবং আমাদের অনুপ্রবেশের রাস্তাকে বন্ধ করার জন্য রাজাকারদের রাস্তায় এবং নদীপথে পাহারায় মোতায়েন করে। এই সব দালাল এবং রাজাকাররা আমার অপরেশনের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করে। দালালদের ধরার জন্য এবং রাজাকারদের সমুচিত শাস্তি দেবার জন্য ক্যাপ্টেন আউনউদ্দিন ও লেঃ হারুনকে আমি নির্দেশ দিই। নির্দেশ অনুযায়ী ক্যাপ্টেন আউনউদ্দিন এবং লেঃ হারুন বিভিন্ন স্থানে তাদের লোকজনকে দালালদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেয় এবং এ্যামবুশ পেতে রাখে। ২৫শে জুলাই সন্ধ্যায় নরসিংহের নিকট লেঃ হারুনের লোক পাকসেনাদের ৬ জন দালালকে এ্যামবুশ করে বন্দি করে। এদের নিকট ১৪ পাউণ্ড বিস্ফোরক, তিনটি গ্রেনেড পাওয়া যায়। এর পরদিন আরও ৭ জন দালাল আমাদের এ্যামবশে ধরা পড়ে এবং তাদের কাছ থেকে দুটি রাইফেল, ৪টি হ্যাণ্ড গ্রেনেড, ১টি অয়্যারলেসে সেট এবং ১২০ রাউণ্ড গুলি পাওয়া যায়। এর পর থেকে দালালরা আমাদের এলাকাতে আর আসার সাহস পায়নি। বন্দি দালালদের কাছ থেকে জানা যায় যে, তাদেরকে পাকিস্তানী অফিসাররা প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং সঙ্গে করে এনে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের নিকট ছেড়ে দেয়। তাদের উপর নির্দেশ ছিল মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে ধ্বংসত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, অন্যথায় তাদের পরিবারবর্গের উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপর রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন একটি