বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
109

রাস্তায় একটি এ্যামবুশ পেতে রাখে। ১লা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় কালিগঞ্জ থানার দারোগা, ৭০ জন পাকসেনা এবং ৭০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ মুক্তিবাহিনীর সম্পর্কে তদন্তের জন্য ঢাকা থেকে কোন দূরবর্তী গ্রামে নৌকাযোগে যাচ্ছিলো। নৌকাটি যখন এ্যামবুশের আওতায় পৌঁছে তখন গেরিলারা নৌকার উপর হালকা মেশিনগান দ্বারা গুলি চালায়। গুলিতে নৌকার আরোহী পাকসেনা, পশ্চিম পাকিস্তানী এবং দারোগা নিহত হয় এবং নৌকাটি ডুবে যায়। ঢাকার আজিমপুরে গেরিলারা অতর্কিতে একটি রাজাকার দলের উপর আক্রমণ চালিয়ে চারজন রাজাকারকে নিহত এবং চারটি রাইফেল ও ৬০ রাউণ্ড গুলি দখল করে। টঙ্গীতেও একটি রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে গেরিলারা কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে চারটি রাইফেল দখল করে নেয়। ডেমরার নিকট আমাদের একটি গেরিলা দল ১৩ই আগস্ট বিকাল তিনটার সময় পাক বিমান বাহিনীর একটি জীপ এ্যামবুশ করে ধ্বংস করে দেয়। এ্যামবুশে ৪ জন বিমান বাহিনীর এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সৈনিক নিহত হয়। তাদের কাছ থেকে অনেক কাগজপত্র, পরিচয়পত্র এবং কয়েকটি রিভলবার দখল করা হয়। দখলীকৃত কাগজপত্র আমাদের হেডকোয়ার্টার-এ গেরিলারা পাঠিয়ে দেয়।

 আগস্ট মাসের শেষের দিকে পাকসেনাদের কোন গুপ্তচর আমাদের ঢাকার গেরিলাদের ধোলাই খাল ঘাঁটি পাকসেনাদের অবহিত করে। সংবাদ পেয়ে পাকসেনারা ২০/২৫টি ট্রাকে ধোলাই খালে আমাদের ঘাঁটিটি আক্রমণের জন্য আসে। পাকসেনাদের অতর্কিত আক্রমণে আমাদের গেরিলারা কোন উপায় না দেখে তাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে লিপ্ত হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। সংঘর্ষ পাকসেনাদের প্রায় ৪০-৪৫ জন হতাহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। অপরদিকে আমাদের দু'জন গেরিলা মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রবল চাপের মুখে টিকতে না পেরে আমাদের গেরিলারা সাঁতরিয়ে ধোলাইখাল পার হয়ে ধোলাইখাল অবস্থাটি পরিত্যাগ করে। পিছু হটার সময় একটি ২" মর্টার, ৩টি ম্যাগাজিন খালে ফেলে দিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পরদিন পাকসেনারা সেগুলি উদ্ধার করে এবং তাদের প্রচারের কাজে ব্যবহার করে। এর পরদিন আমাদের গেরিলারা সূত্রাপুর থানার আক্রমণ চালিয়ে দুজন পাকসেনাকে নিহত করে। সূত্রাপুরের সার্কেল ইন্সপেক্টর এবং ওসি গুরুতরভাবে আহত হয়।

 আগস্টের শেষের দিকে আমাদের ২/৩ জন গেরিলা এবজন মেজর ও দুইজন ক্যাপ্টেনকে (পাক গোলন্দাজ বাহিনীর) একটি জীপে করে আজিমপুরের নিকট এসে জীপ থেকেনেমে দূরে কোন এক বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে। কিছুক্ষণ পর সে বাড়ি থেকে চিৎকারের শব্দ শুনে আমাদের গেরিলারাও সেই বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা বুঝতে পারে যে অফিসাররা ঐ বাড়ির মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে। তৎক্ষণাৎ গেরিলারা অফিসারদেক লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। গেরিলারা পাক অফিসারদের মৃতদেহ দূরে অপেক্ষমাণ পাক জীপের মধ্যে রেখে দেয় এবং নিরাপদে সে স্থান পরিত্যাগ করে। পাক-পুলিশের একটি টহলদার দলকে আমাদের ধানমণ্ডির গেরিলারা প্রতিদিন ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোড ও নিকটবর্তী রাস্তায় টহল দিতে দেখে। আমাদের গেরিলারা ২৫শে আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ১৮ নং রোডের মোড়ে একটি চলন্ত গাড়ি থেকে স্টেনগানের গুলি দ্বারা ৯ জন পুলিশকে গুলি করে হত্যা করে। গুলির সংবাদ পেয়ে নিকটবর্তী টহলদারী পাকসেনারা জীপ নিয়ে গেরিলাদের পিছু ধাওয়া করে। গেরিলারা গাড়ী থেকে গুলি ছুড়ে জীপের ড্রাইভারকে নিহত করে। এ সময় দ্রুত গতিসম্পন্ন চলন্ত জীপটি আয়ত্তের বাইরে চলে যায় এবং পার্শ্ববর্তী দেয়ালে প্রচণ্ডভারে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে গাড়ির আরোহী দুজন পাকসেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়। এই গেরিলাদের নেতৃত্ব দেয় রুমী (শহীদ, বীরবিক্রম)। পাকসেনারা পরে রুমীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আগস্টের ২৯ তারিখে ছ'জনের একটি গেরিলা দল ঢাকার সৈয়দাবাদ সেতুটি এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে উড়িয়ে দেয়। এর ফলে ঐ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় গেরিলারা একটি বাসে দুশো মণ পাটসহ লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে যাওয়ার পথে বাসটিকে ধ্বংস করে দেয়। বরাইদের নিকট আরো তিন শ' মণ পাট ফসফরাস বোমা ফেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গেরিলারা নারায়ণগঞ্জের জিএমসি ঘাটে পাঁচ হাজার বেল বহনকারী কামচাম ফ্ল্যাটটি ডুবিয়ে দেয়। এর- সি-এম জুটমিলের শ্রমিক (আমাদের একজন গেরিলা) ফসফরাস ৮০ গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আর-সি-এম মিলের গুদামস্থিত প্রায় ১ লাখ মণ পাট জ্বালিয়ে দেয়। পরে জানা যায় যে,