বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
127

ফলে ২০ জন পাকসেনা নিহত ও ১০ জন আহত হয়। পরদিন পাকসেনাদের আরেকটি ছোট দল মনোহরপুরে আমাদের এ্যামবুশের আওতায় আসে এবং এ্যামবুশে ৬জন পাকসেনা নিহত হয়। ঐদিনই আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের আরেকটি দলকে বুড়ীচং-এর নিকট সাদেকপুরে জেরুইনে এ্যামবুশ করে। এ্যামবুশে ১জন মেজর ও ১জন ক্যাপ্টেনসহ ২০ জন পাকসেনা নহত ও ৭ জন ইপিসিএএফ নিহত হয়। নিহত একজন ক্যাপ্টেনের নাম সৈয়দ জাভেদ শাহ বলে পরে আমরা জানতে পারি। একজন পাকসেনা আমাদের হাতে বন্দীও হয়। এই সংঘর্ষে আমাদের একজন শহীদ এবং তিনজন তিনজন আহত হয়। ৭টি রাইফেল আমরা দখল করে নেই। এর দু'দিন পর ১১ই অক্টোবর সকল সাড়ে ১১টার সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার সার্কিট হাউস এবং গোমতীর চাঁদপুর ফেরীতে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। কুমিল্লা সার্কিট হাউসে পাকসেনাদের মার্শাল ল' হেডকোয়ার্টার ছিল। এর গোলাবর্ষণের ফলে প্রায় ৩৯ জন পাকসেনা ও রাজাকার হতাহত হয়। শহরের ভিতরে বসে মর্টারের গোলাবর্ষণ করাতে পাকসেনাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে আমরা জানতে পারি যে, শহরে অবস্থিত অনেক টহলদার পাকসেনা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে ময়নামতি ক্যাণ্টনমেণ্টের দিকে পালিয়ে যায়। আমরা আরো জানতে পারি যে, সার্কিট হাউসে গোলাবর্ষণের সময় সেখানে পাকিস্তানী ৯ম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমাণ্ডিং উপস্থিত ছিলেন। অল্পের জন্য তিনি আমাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পান। পাকসেনারা কুমিল্লা শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা এই আক্রমণের খবর পাকিস্তানী রেডিও থেকেও প্রচার কররে। তারা পাঁচজন সৈনিক নিহত ও ৩৯ জন আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। আমাদের গেরিলারা কালিরবাজার গ্রামে পাকসেনাদের একটি হেডকোয়ার্টারের সন্ধান পায়। এই সংবাদ পেয়ে লেঃ ইমামুজ্জামান একটি ৭৫ এম এম আর আর, মেশিনগান ও হালকা মেশিনগানসহ একটি প্লাটুন পাঠিয়ে দেয়। এই প্লাটুনটি পথ প্রদর্শকের সহায়তায় পাকসেনাদের হেডকোয়াটারের নিকটে রাতে পৌঁছতে সক্ষম হয়। ১২ ই অক্টোবর ভোর পাঁচটায় আমাদের এই দলটি রকেট এবং মেশিনগানের সাহায্যে পাকসেনাদের এই হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ করে একটি বিল্ডিং -এ অবস্থিত দু'টি বাঙ্কার সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়। ঐ অবস্থানের আরো পাকসেনারা রকেট হামলায় ইতস্তত পালাবার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় তাদের প্রতি মেশিনগানের সাহায্যে গুলিবর্ষণ করে তাদের ১২ জনকে নিহত ও ৪ জনকে আহত করে। এরপর আমাদের দলটি নিরাপদে আমাদের অবস্থানে ফিরে আসে। এই ঘটনার একদিন পর বগাবাড়ী ও জাজিশ্বরে আরেকটা আক্রমণে ৭ জন পকসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।

 বুড়ীচং থানার রামনগর গ্রামে আমাদের গেরিলাদের একটি অবস্থান ছিল। পাকসেনারা স্থানীয় দালালদের নিকট সংবাদ পেয়ে ৮ই অক্টোবর দুপুরে একটি শক্তিশালী দল নিয়ে সেই অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে সেই আক্রমণের মোকাবেলা করে। দুপুর একটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাকসেনাদের প্রায় ১৬ জন সৈনিক ও ১৪ জন রাজারকার নিহত হয। পাক আক্রমণের চাপ বাড়তে থাকলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করে জাগলপুরে নতুন করে অবস্থান নেয়। পরদিন পাকসেনাদের আরেকটি শক্তিশালী দল সেই অবস্থানের উপরও আক্রমণ চালায়। প্রায় ৪ ঘণ্টা যুদ্ধ করে আমাদের যোদ্ধারা ৩৫ তদজন পাকসেনাকে হতাহত করে। এরপর সেই অবস্থান পরিত্যাগ করে প্রধান ঘাঁটিতে আসে। আসার পথে পাঁচজন পাকসেনা আমাদের হাতে বন্দী হয়। আমাদের একজন শহীদ, দু'জন আহত এবং ১ জন বন্দী হয়।

 আমাদের একটি প্লাটুন ১৫ তারিখ সকাল ৮টায় কুমিল্লার দক্ষিণে পাকসেনাদের একটি অবস্থানের আধমাইল দূরে বারচর গ্রামে এ্যামবুশ পাতে। এক ঘণ্টা অবস্থানের পর পাকসেনাদের একটি দল তাদের ঘাঁটিতে ফেরার পথে এই এ্যামবুশের আওয়ায় পড়ে। এ্যামবুশে ১২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়। ঐ দিনই বিকেলে মনোহরের নিকট পাকসেনাদের আরেকটি দলের উপর আমাদের সৈনিকরা আক্রমণ করে। পাকসেনাদের এই দলটি নিকবর্তী একটি গ্রাম জ্বালিয়ে তাদের ঘাঁটিতে ফেরত যাচ্ছিলো। দুদিন পর ১৮ ই অক্টোবর রমজানপুরে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা একটি এ্যামবুশ পাতে। রাত প্রায় সাড়ে তিনটার সময় একটি টহলদারী দল এই এ্যামবুশে পড়ে যায়। উভয় পক্ষে প্রায় আধঘণ্টা গোলাগুলি বিনিময় হয়। এতে ১০ জন পাকসেনা ও ১৮ জন