পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
128

রাজাকার হতাহত হয়। আমাদের একজন আহত হয়। পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

 পাকসেনারা অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়াবাজারের নিকট তাদের একটি ঘাঁটি স্থাপন কের। আগস্ট মাসে এই অবস্থান থেকে আমরা পাকসেনাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। পুনরায় এই ঘাঁটি স্থাপন করায় আমরা বুঝতে পারি যে পাকসেনারা আবার চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রাস্তা খুঁড়বার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করার জন্য প্রথম অবস্থাতেই মিয়াবাজারের শত্রুঘাঁটিটি ধ্বংস করে দেবার জন্য ক্যাপ্টেন মাহবুব একটি কোম্পানী পাকসেনাদের ঘাঁটি রেইড করার উদ্দেশ্যে তাদের নিজেরদের বেইস থেকে রওনা হয়। রাত প্রায় ১১টার সময় শত্রুঘাটির নিকট পৌঁছে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধের পর দু'জন পাকসেনা নিহত ও পাঁচজনকে আহত করে আমাদের দলটি অবস্থান পরিত্যাগ করে। এর তিন দিন পর ২০ শে অক্টোবর ভোর চারটার সময় মিয়াবাজারের আরেকটি শত্রুঘাঁটির উপর আমাদের সৈন্যরা আক্রমণ চালায়। এই অকস্মাৎ আক্রমণে পাকসেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দু'ঘণ্টা যুদ্ধের ফলে প্রায় ২১ জন পাকসেনা নিহত এবং আহত হয়। পাকসেনাদের নিহত ও আহত সৈনিকদে কে পরের দিন গাড়ীতে কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আমাদের দলটি যে রাস্তায় ফিরে আসে পাকসেনাদের ঘাঁটির কিছু দূরে সেই রাস্তার উপর মাইনের সাহয্যে এফ বুবি ট্র্যাপ লাগিয়ে আসে। পরদিন সকালে পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল সেই রাস্তায় খবরাখবর নেয়ার জন্য অগ্রসর হবার পথে বুবীট্র্যাপ -এর কাছে পড়ে যায় এবং মাইন বিস্ফোরণের ফলে ১৬ জন পাকসেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

 আমাদের আরেকটি দল ইমামুজ্জামানের নেতৃত্বে ২২শে অক্টোবর ভোর চারটার সময় মর্টার এবং ১০৬ আরআরএর সহায়তায় হরিসর্দার রাজাপুরের পর পাকসেনাদের আরে কটি নতুন ঘাঁটির উপর আক্রমন চালায়। প্রায় ১২ ঘণ্টা যুদ্ধে আমাদের মর্টার, মেশিনগান এবং আর আর-এর রকেট পাকসেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। আর আর-এর সাহায্যে বেশ ক'টি বাঙ্কার আমাদের সৈন্যরা উড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়। তাদের প্রায় ৩৫ জন হতাহত হয়। পাকসেনারা কুমিল বিমান বন্দরে অবস্থিত কামানের সাহায্যে আমাদের আক্রমণকে প্রতিহত করে। প্রচণ্ড কামানের আক্রমণের ফলে সন্ধা ছয়টার সময় আমাদের সৈনিকরা গোলার অভাবে পিছু হটে আসতে বাধ্য হয়। আসার সময় পাকসেনারদের অবস্থানের নিকট রাস্তায় মাইন লাগিয়ে আসে। পরদিন সকালে মাইন বিস্ফোরণের ফল ৭/৮ জন পাকসেনা আহত হয়। এর একদিন পর আমাদের আরেকটি দল সকাল সাতটার সময় চৌদ্দগ্রামের এক মাইল উত্তরে পাকসেনাদের কালিরবাজার ঘাঁটির উপর মর্টার এবং আরাল-এর সহায়তায় আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে প্রায় ১২ জন পাকসেনা হতাহত হয়। পাকসেনারা তাদের গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় আক্রমণরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এর কয়েকদিন পর পাকসেনাদের একটি টললদারী দল চৌদ্দগ্রাম থেকে সাড়ে চার মাইল। দক্ষিণে আমাদের বাজারের নিকট আমাদের সৈন্যদের এ্যামবুমে পড়ে যায়। ফলে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৮ ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৫-৩০ এর সময় আমাদের একটি শক্তিলালী দল মর্টার এবং আর আর -এরস সহায়তায় পাকসেনাদের বড়িসা ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। বাড়িসা ঘাটের আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের রাজাসার দীঘির অবস্থানের উপরও আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের ফলে প্রায় ৬ জন নিহত এবং বেশ কাটি বাঙ্কার আমাদের সৈন্যরা ধ্বংস করে দিতে সমর্থ হয়। আমাদের একটি ছোট দল আরিউরার নিকটি রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখে। পাকসেনারা বাড়িসা এবং রাজাসার দীঘি আক্রমণের সংবাদ পেয়ে ৪/৫ গাড়ী ভর্তি সৈন্য নিয়ে সাহায্যের জন্য সেদিকে অগ্রসর হয়। পথে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে একটি ট্রাক ও একটি জীপ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ১৮ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন অফিসার সহ ৫ জন আহত হয়। এই এলাকাতে সর্বত্র আমাদের আক্রমণের তীব্রতার দরুন পাকসেনারা নাজেহাল হয়ে যায়। ফলে এই লোকায় পুনঃ প্রাধান্য ফিরে পাবার আশায় ২০ শে অক্টোবর বিকেল চারটার সময় তাদের একটি শক্তিশালী দল হরিসর্দার ঘাঁটি থেকে