পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
129

আমাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। এই দলটি কামানের প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অমাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের সৈনিকরা ৩ মর্টার এবং হালকা মেশিনগানের সাহায্যে পাকসেনাদের প্রচণ্ড আক্রমনে প্রতিহত করে। আমাদের গোলাগুলিতে অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এই এলাকা থেকে আমাদের বিতাড়িত করার উদ্দেশে সেই সাথে বিফল হয়ে যায়।

 আগস্ট মাসের প্রথম দিকে নোয়াখালী এলাকায় আমাদের গেরিলাদেও শক্তি বৃদ্ধি পায়। অনেক গেরিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ নিজ এলাকাতে পাঠানো হয়। সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রনের জন্য নোয়াখালী জেলাকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের চারজন সুবেদারকে এইসব এলাকায় গেরিলা এবং নিয়মিত বাহীনির সৈনিকদের তত্ত্বাবধানের ভার দেয়া হয়। সোনাইমুড়ি, ফরিদগঞ্জ এলাকার ভার সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারী, নোয়াখালী সদরের ভার সুবেদার লুৎফর রহমান, দক্ষিণ ফেনীর ভার সুবেদার জববার এবং লক্ষ্মীপুর ও রামগতির ভার অন্য আরেকজন সুবেদার প্রতি আরোপিত হয়। এলাকা বিভক্তে ও পর স্থানীয় কমাণ্ডাররা পর সম্মিলিত গেরিলা ও নিয়মিত বাহিনীর পূর্ণ সহযোগীতায় তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আগস্ট মাসের শেষের দিকে ফরিদগঞ্জ থানার রাওয়াল নামক গ্রামে পাকসেনাদের একটি দলকে অতর্কিত আক্রমন করে ১২জন পাকসেনাকে নিহত এবং ১০ জনকে আহত করে। আমাদের একজন মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হয়। সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের আরেকটি গেরিলা দল গুনবতী ও সরিষাদী রেলস্টেশনে আক্রমন চালিয়ে প্রায় ৩২জন পাকসেনা ও রাজাকারকে হতাহত করে। সোনাইমুড়ির উত্তরে কাদের বাজারের নিকট পাকসেনাদের ১০টি দলকে এ্যামবুশ করে ৩ জনকে নিহত ও ১০জনকে আহত করে নেয়। পাকিস্তানী রেঞ্জার ও রাজাকাররা রায়পুরের নিকট এলএম হাইস্কুলে একটি শিবির স্থাপন করে। ৬ই আগস্ট সন্ধ্যার সময় আমাদের একটি গেরিলা দল শত্রুদের এই ঘাঁটির উপর অতর্কিত আক্রমন করে। ফলে ৯জন রেঞ্জার হতাহত হয়। আমাদের এক জন আহত হয়। এর দুদিন পর আমাদের আরেকটি গেরিলা দল পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দলকে লক্ষ্মীপুর থানার দালাল বাজারে এ্যামবুশ করে ১৫ জন শত্রুসেনাকে হতাহত করে। ১৪ই আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ থানায় বসুরহাটের নিকট পাক মিলিশিয়াদের এ্যামবুশ করে প্রায় ৩০জনকে হতাহত করে। তারা একটি টয়োটা জীপও ধ্বংস করে দেয়। সংঘর্ষে আমাদের একজন সিপাই নুরুন্নবী মারাত্নকভাবে আহত হয়। পাকসেনারা ৩০টি অটোমেটিক এমজি এর সাহায্যে গোলাগুলি চালায়। ১৮ই আগস্ট রামগঞ্জ থানার সেকেণ্ড অফিসার এবং কয়েকজন দালালকে পাকসেনাদের ক্যাম্পে যাবার পথে নিহত করে।

 পাক পুলিশ এবং রাজাকাররা লক্ষ্মীপুর থানার চন্দ্রগঞ্জ প্রতাপ হাইস্কুলে একটি ঘাঁটি তৈরি করে। ১৫ তারিখ রাত ১১টার সময় আমাদের সৈনিকরা এই ঘাঁটি আক্রমণ করে প্রায় ৪০জন পাকসেনাকে হতাহত করে। এবং সেখান হতে তাদের তাড়িয়ে দেয়। ১৬ই আগস্ট সোনাইমুড়ি রেলস্টেশনে নিকট বগাদিয়া রেলসেতু গেরিলারা উড়িয়ে দেয়। আমাদের গেরিলাদের এইসব তৎপরতায় পাকসেনারা আরো ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল বেগমগঞ্জ থানার সোনাপুর ও গোপালপুরের নিকট দালালদের কাছে আমাদের ঘাটির খবর জেনে ৩০শে আগস্ট সকালে আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। পাকসেনাদের এই আক্রমণকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে প্রতিহত করে। প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনাদের ৪০ জন নিহত হয়। আমাদের সেনাদের প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে তারা তাদের মৃতদেহগুলো ফেলেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে আমাদের সৈনিকরা ২০টি অস্ত্র দখল করে। আমাদের একজন সিপাহী শহীদ হয়। এই ঘটনার দু দিন পর আমাদের সৈনিকরা মাইন পুঁতে সোনাইমুড়ির নিকট বানোয়াইতে পাকসেনাদের একটি গাড়ী ধ্বংস করে। ফলে ১ জন পাকসেনা নিহত ও ৮ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়।

 সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দল রামগঞ্জে নিকট তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বাধীনে ২০শে সেম্পেম্বর আমাদের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল এই ঘাঁটির উপর আক্রমন চালায়। প্রায় দু ঘণ্টা যুদ্ধে ১৪ জন পাকসেনা নিহত ও ১৭ জন আহত হয়। এর ৩ দিন পর ২৬শে সেপ্টেম্বর সকালে ২৫০ সদস্যবিশিষ্ট পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দল রামগঞ্জ বাজারের দিকে