পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
131

আক্রমণ করে সকল পশ্চিম পাক পুলিশকে নিহত করে। সেখানকার রেজিস্ট্রি অফিস, পোস্ট অফিস, কালেক্টরেট অফিস ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়। এর পর কিছুদিনের মধ্যেই গেরিলারা পালং থানার রাজগঞ্জ এবং কোটালীপাড়ায় আক্রমণ চালিয়ে সমস্ত সরকারী অফিস ধ্বংস করে দেয় এবং সংগে সংগে প্রায় ৪ হাজার মণ পাট জ্বালিয়ে দেয়। পরের সপ্তাহে গেরিলাদের একটি শক্তিশালী দল জাজিরা থানার রাজস্ব অফিস এবং রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ করে দেয় মাদারীপুরের অন্যান্য থানা আক্রমণ হওয়ার ফলে পাকসেনারা নড়িয়া থানাতে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। এই থানার পাকসেনা ও পুলিশরা নিকটস্থ গ্রামে তাদের অকথ্য অত্যাচার চালায়। স্থানীয় গেরিলারা এই থানাটির শক্তি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ খবরাখবর সংগ্রহ করে। ৬ই নসেপ্টেম্বর ৫০জনের একটি গেরিলা দল রাত ৮টার সময় এই থানার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। পাকসেনা ও পুলিশরা সব শক্তি দিয়ে থানাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। প্রায় তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর আমাদের গেরিলারা থানাটি দখল করে নিতে সমর্থ হয়। প্রায় ১৭ জন পাকসেনা ও পুলিশ নিহত হয় এবং বাকীরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। থানার দারোগাও এতে নিহত হয়। থানা থেকে ৩০টি রাইফেল এবং একটি বেতারযন্ত গেরিলাদের হস্তগত হয়। গেরিলারা থানাটিকে ধ্বংস করে দেয়। গেরিলাদের আরেকটি দল ঝিকরকাঠির নিকট বরিশাল- ফরিদপুর টেলিফোন লাইনের ৬শ গজ তার নষ্ট করে দেয়। টেলিগ্রাফ বিভাগের টেকনিশিয়ানরা পাকসেনাদের পাহাড়ায় টেলিফোন লাইনটি মেরামত করতে আসার পথে গেরিলাদের বসানো মাইন বিস্ফোরনে তাদের জীপটি ধ্বংস হয়ে যায়। পাকসেনাদের আরেকটি টহলদার দল মাদারীপুরের হাওলাদার জুট মিলের নিকট গেরিলাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার চারজন পাকসেনা নিহত হয়। গেরিলারা মাদারীপুরের নিকট ঘাটমাঝিতে প্রায় ৩০/৪০ গজ রাস্তা কেঠে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মাদারীপুরের চরমুগরিয়ায় সরকারী পাটগুদামে আগুন লাগিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মাদারীপুর-ফরিদপুর রাস্তায় সমাদ্দার ফেরীঘাটে একটি ফেরী অগ্নিসংযোগে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একটি মটর লঞ্চও ধ্বংস করা হয়। এই মটর লঞ্চটি পাকসেনারা টহল দেয়ার কাজে ব্যবহার করতো। আমাদের গেরিলাদের এইসব ব্যাপক তৎপরতায় পাকসেনারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ৬ই সেপ্টেম্বর পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল লঞ্চে মাদারীপুরের দিকে তৎপরতা আরো জোরদার করার জন্য অগ্রসর হয়। এই খবর আমাদের গেরিলারা আগেই পেয়ে যায়। ২০ জনের একটি নগেরিরা দল পলং থানার রাজগঞ্জে নিকট নদীর তীরে পাকসেনাদের জন্য এম্যাবুশ পেতে বসে থাকে। সকাল ১০টার সময় লঞ্চটি আমাদের গেরিলা দলের এ্যামবুশর আওতায় এলে তৎক্ষণাৎ গেরিলারা তাদের উপর আক্রমণ চালায়। ফলে ১০/১২ জন পাকসেনা নিহত এবং বেশকিছু আহত হয়। উপায়ান্তর না দেখে পাক সেনাদের লঞ্চটি শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর পাকসেনারা আরো অধিক সৈন্য ফরিদপুর থেকে পালং থানায় মোতায়েন করে। ঐ এলাকার গেরিলারা পাকসেনাদের পালং থানার ঘাঁটির পুন্দখলের পরিকল্পনা নেয়। গেরিলারা সঠিক সংবাদ নেয়ার পর জানতে পায় যে, থানাতে প্রায় এক প্লাটুন পাকসেনা ও ৫০/৬০ জন পাকপুলিশ এবং রাজাকার রয়েছে। প্রায় ২/৩ শ' গেরিলা একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১শে সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় পলিং থানার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রায় চারঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের পর ওই ঘাঁটি থেকে অনেকসংখ্যক পাকসেনা উপায়ন্তর না দেখে পালিয়ে যায়। গেরিলারা যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা, রাজাকার ও পাকপুলিশকে নিহত করে। এর পর সম্পূর্ণ এরাকাটি আমাদের গেরিলদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

 কুমিল্লার উত্তরে ৪র্থ বেঙ্গলের 'সি' কোম্পানী ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে এবং ‘এ’ কোম্পানী মেজর সালেক ও মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মন্দভাগ ও শালদানদী এলাকার পাকসেনাদের উপর তাদের চাপ অব্যাহত রাখে। ফলে পাকসেনারা মন্দভাগ বাজার, লক্ষ্মীপুর ও সাইতসালা প্রভৃতি জায়গা সম্পূন রুপে পরিত্যগ করে চান্দলা, পানছড়া ও সেনেরহাট ইত্যাদি জায়গায় তাদের ঘাঁটি পিছিয়ে নিতে বাধ্য হয়। পাকসেনারা পুনরায় তাদের পূর্বোক্ত অবস্থানগুলি দখল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের সৈনিকদের সুদূর প্রতিরক্ষার সামনে তাদের চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। তাদের সঙ্গে যখন আমাদের সৈনিকদের সম্মুখযুদ্ধ তীব্রভাবে চলছিল সেই সময় আমাদের গেরিলারাও পাকসেনাদের পশ্চাদে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নিকট বিদ্যাকোটে আমাদের গেরিলাদের একটি দল পাকসেনাদের একটি টহলদার কোম্পানীকে এ্যামবুশ করে একজন