পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড

দলিল প্রসঙ্গঃ সশস্ত্র সংগ্রাম (২)

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র পর্যায়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের দলিলসমূহ তিন খণ্ডে বিভাজন করা হয়েছে। ভূমিকার চতুর্থ পৃষ্ঠায় এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

 বর্তমান সশস্ত্র সংগ্রাম (২) প্রস্তুত করা হয়েছে মুজিবনগর সরকার গঠনোত্তর কালে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের যুদ্ধ তৎপরতাকে কেন্দ্র করে। সাধারণভাবে জুন-জুলাই থেকে মধ্য ডিসেম্বরে হানাদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ পর্যন্ত সেক্টরে সেক্টরে সংগঠিত যুদ্ধের ধারা প্রতিরোধমূলক ছিল না, তা ছিল কেন্দ্রীয় কমাণ্ডের অধীন, সংগঠিত ও আক্রমণমুখী। মুজিবনগরে অনুষ্ঠিত সেক্টর কমাণ্ডারদের সম্মেলনে (পৃঃ ১-৬, ২০২-০৪) গৃহীত কার্যক্রমের পর বাংলাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ ক্রমশঃ এ রূপ গ্রহন করে। উল্লিখিত সময়ের যুদ্ধের বৈশিষ্টের জন্যেই সশস্ত্র সংগ্রাম (২)-এর এই পরিকল্পনা।

 সশস্ত্র যুদ্ধেও বিবরণ সংগ্রহ ও সন্নিবেশ করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ কাজ। যুদ্ধকালে সেক্টরসমূহের দৈনন্দিন ঘটনাবলীর ধারাবাহিক বিবরণ অনেক ক্ষেত্রে রক্ষিত হতে পারেনি। এ কারণে, যুদ্ধে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মুখ্যতঃ তাদের সাক্ষাৎকার, লিখিত প্রতিবেদন ও গ্রন্থ প্রভৃতিকে এখানে প্রাথমিক দলিল হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণও কিছু এসেছে।

 সাক্ষাৎকারগুলির বেশীরভাগ বাংলা একাডেমীর অংগীভূত জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস পরিষদ (জুলাই,৭২ - ডিসেম্বর, ৭৩)-এর উদ্যোগে গৃহীত। ২ ও ৩ নং সেক্টর কমাণ্ডারদ্বয়-ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ (পৃঃ ৭৩) ও মেজর জেনারেল কে, এম শফিউল্লাহ (পৃঃ ২০০)-এর সাক্ষাৎকারসহ কয়েকটি বাংলা একাডেমীর গবেষক জনাব সুকুমার বিশ্বাস ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেছিলেন। এগুলি এখানে সেক্টর অনুসারে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

প্রথমে সেক্টর কমাণ্ডারদের সাক্ষাৎকার বা তাঁদের রচিত বিবরণসমূহের মাধ্যমে সেক্টরের ঘটনাবলী উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে, পরে পৃথক শিরোনামে সাব-সেক্টর কমাণ্ডারবৃন্দ এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য সন্নিবেশ গোটা সেক্টরের ঘটনার ব্যাপকতা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, স্বাধীনতাযুদ্ধের সংগঠক, অনিয়মিত গণবাহিনীর সদস্য বা ফ্রিডম ফাইটারদের (গেরিলা যোদ্ধা) সাক্ষাৎকার ও তাদের সম্বন্ধে প্রদত্ত বিবরণ এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিরণের সাহায্যেও রণাংগনের ঘটনাপ্রবাহকে যথাসম্ভব আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে ৭নং সেক্টর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামানের সাক্ষাৎকার বা তাঁর নিজস্ব কোনো প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়নি- সাক্ষাৎকার প্রাদানে তিনি অক্ষমতা জ্ঞাপন করছেন। যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে সাব-সেক্টর প্রধানদের প্রদত্ত বর্ণনায় (পৃঃ ৩৩৫-৩৬৭) জানা যাবে। অপরদিকে, বি-ডি-এফ-বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সংগঠিত তিন ব্রিগেড ফোর্স-এর অন্যতম ‘জেড’ ফোর্সে (পৃঃ ৪৭৬-৫০৯) এর মূল কমাণ্ডার জিয়াউর রহমান (পরবর্তীতে লেঃ জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি)-এর সাক্ষাৎকারও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি তাঁর অকালমৃত্যুর কারণে। এই ফোর্স কোন নির্দিষ্ট সেক্টরের অন্তর্গত না থাকাতে এ বিষয় আলাদা শিরোনামে (পৃঃ ৪৭৬) বিবৃত হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে ঐ ব্রিগেডের সামরিক অফিসারদের প্রদত্ত বিবরণসমূহের ব্যাপক সাহায্যে নেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি ব্রিগেড ফোর্স— ‘কে’ ফোর্স (পৃঃ ৭৩) এবং ‘এস’ ফোর্স (পৃঃ ২০০) এর যুদ্ধ তৎপরতা ও গঠন সংক্রান্ত তথ্যাদি এসেছে এদের মূল কমাণ্ডারদ্বয়ের নিজস্ব বর্ণনায়।

 বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রাম কেবল স্থলযুদ্ধেই সীমিত ছিল না, তা নৌ এবং বিমানযুদ্ধেও সম্প্রসারিত হয়েছিল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গঠন ও তার অপারেশনসমূহের বিবরণ মিলবে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক তথ্যরাজিতে (পৃঃ ৫১০-৫২১) এবং মুক্তাঞ্চল থেকে প্রাকাশিত পত্রিকার খবরে (পৃঃ ৫২১-৫২২)। অনুরূপ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গঠন ও তার যুদ্ধ তৎপরতার সাক্ষ্য পাওয়া যাবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী (বি-ডিএফ)- এর তৎকালীন