পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
139

দু'টি বাঙ্কার আর-আর দিয়ে ধ্বংস করে দিয়ে ১৪জন পাসেনাকে নিহত করে। ২০শে এবং ২১শে নভেম্বর ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানী এবং ‘বি’ কোম্পানী মঙ্গলপুর এবং কায়েমপুরের উপর তাদের চাপ বাড়িয়ে তোলে। ২১তারিখ সকাল ৯টার সময় এই দুই কোম্পানী পাক অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ১৬জন পাকসেনাকে নিহত এবং ৯জন আহত করে। ১০৬ আর আর এর সাহায্যে পাকসেনাদের বেশ কটি বাঙ্কার উড়িয়ে দেয়া হয়। আমাদের সৈনিকরা অনেক অস্ত্রশস্ত্রও দখল করে নেয়। ২৩শে নভেম্বর পাকসেনারা আমাদের মন্দভাগ অবস্থানটি পুনর্দখলের জন্য আবার তাদের সৈন্য একত্রিত করতে থাকে। দুপুর দুটোর সময় আমাদের একটি কোম্পানী পাকসেনাদের সমাবেশের উপর আক্রমণ চালায়। ফলে পাকসেনাদের শালদা নদীর নিকটে মনোরা রেলসেতুর নিকটবর্তী আমাদের অবস্থানগুলোর উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। মেশিনগান, ১০৬ আর-এর ও গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তা পাকসেনারা অবস্থানের একটি বাঙ্কার ধ্বংস করতে সমর্থ হয়। আমাদের সৈনিকরা পাকসেনাদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয় এবং তাদের বহু সৈনিক হতাহত হয়। আমাদের একজন সৈনিক শহীদ এবং ৪ জন আহত হয়। একটি মেশিনগান গোলন্দাজ বাহিনীর গুলিতে নষ্ট হয়ে যায়। ২৩শে নভেম্বর থেকে পাকসেনাদের সঙ্গে বেশ কটি খণ্ডযুদ্ধে আমাদের সৈনিকরা শত্রুদেরকে বিতাড়িত করে সমর্থ হয়। এই এলাকায় শত্রুরা পর্যুদস্ত হয়ে বুড়ীচং এবং কুমিল্লার দিকে সরে যায়।

 কয়েকদিন পর ৪র্থ বেঙ্গলকে শালদা নদী থেকে ফেনীর দিকে আক্রমণ চালানোর জন্য 'কে' ফোর্স- এর অধীনে বেলুনিয়াতে স্থানান্তরিত করা হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট কামালের অধীনে কয়েকটি সেক্টর কোম্পানী শালদা নদীতে রেখে ক্যাপ্টেন ঘাফফারের নেতৃত্বে ৪র্থ বেঙ্গল বেলুনিয়াতে কে-ফোর্স -এ যোগাযোগ করে। ১০ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট রাজনগরে তাদের পুনর্গঠিন ও পুনর্বিন্যারে পর তাদেরকে দু' সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাপক প্রশিক্ষণের পর বেলুনিয়াতে পুনরায় তাদেরকে পুরানো প্রতিরক্ষা ঘাঁটিগুলোতে পাঠানো হয়। এবং এই সেক্টরে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই সময়ে ১০ম বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে মেজর জাফর ইমাম নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পুনরায় রণক্ষেত্রে পৌঁছানোর পর ১০ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। ১৫ই অক্টোবর ১০ম বেঙ্গলের অনন্তপুর প্রতিরক্ষাব্যূহের সমনে পুররাম চিতলিয়া প্রভৃতি জায়গায় পাকসেনাদের ঘাঁটিগুলির উপর ছোট ছোট আক্রমণ চালিয়ে ২৪জন পাকসেনাকে নিহত এবং ৩০ জন কে আহত করে। পাকসেনাদের তিনটি বাঙ্কারও তারা ধ্বংস করে দেয় ১৮ই অক্টোবর সকাল ৬টার সময় পাকসেনাদের একটি প্লাটুন আমাদের ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হবার পথে বেলুনিয়া নদীর পূর্ব তীরে আমাদের সৈনিকদের এ্যামবুশ-এ পড়ে। ফলে ১২জন পাকসেনা নিহত। এবং ১৪ জন আহত হয়। ফুলগাজীর নিকট ১০ম বেঙ্গলের পাইওনিয়ার প্লাটুন ঐদিনই রাস্তায় মাইন পুঁতে সকাল ১০টার সময় পাকসেনাদের একটি ট্রাক ধ্বংস করে দেয়। ৭জন পাকসেনা এতে নিহত এবং ৩জন আহত হয়। ২০শে অক্টোবর আমাদের মর্টার ডিটারমেণ্ট সন্ধ্যা ৬টায় পাকসেনাদাদের অবস্থানে অনুপ্রবেশ করে চিতলিয়া অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ১২জন পাকসেনাকে নিহত এবং ৭ জনকে আহত করে। ২৫শে অক্টোবর আমাদের গোলন্দাজ বাহিনী পাকসেনাদের চিতলিয়া ঘাটির উপর আবার আক্রমণ চালায়। ফলে দু'টি গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৬শে অক্টোবর ভোর ৫টার সময় ফুলগাজীর নিকট আমাদের একটি প্লাটুন পাকসেনাদের টহলদারী দলকে এ্যামবুশ করে ৯জন পাকসেনা নিহত এবং ৬ জন আহত করে। এই যুদ্ধে আমাদের একজন মুক্তিযোদ্ধা কুটি মিয়া শহীদ হয়। ঐদিনই পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল আমাদের ঘাঁটির সামনে এসে মাইন পোঁতার চেষ্টা করে। কিন্তু পাকসেনাদের এই দলটির সঙ্গে আমাদের একটি দলের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১২জন পাকসেনা নিহত এবং ৩০জনকে আহত হয়। অবশিষ্ট পাকসেনারা আহত এবং নিহতদের ফেলে ও অস্ত্রশস্ত্র রেখেই পালিয়ে যায়। ১০ম বেঙ্গলের তৎপরতার কারণে এই এলাকায় পাকসেনাদের বিপুল সমাবেশ ঘটানো হয়। তারা ১০ম বেঙ্গলকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ২৭শে অক্টবর চিতলিয়ার নিকট এক ব্যাটালিয়নের অধিক শক্তির সমাবেশ ঘটায়। সন্ধ্যা ৬টার সময় গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় পাকসেনাদের দুটো কোম্পনী অগ্রসর হয়ে আমাদের