বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
141

 ১০ম বেঙ্গল উত্তর চিতলিয়া দখলের পর তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখে। ৯ই নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার সময় আমাদের একটি পেট্রোল পার্টি পাঁচজন পাকসেনাকে বন্দী করে এবং একটি মেশিনগান ও ৪টি চায়না রাইফেল দখল করে দেয়। ১০ম বেঙ্গলের দু'টি কোম্পানী ৯ই নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার সময় পরশুরাম এবং বেলুনিয়া শত্রুঘাঁটির উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আক্রমণে অনেক পাকসৈন্য নিহত হয় এবং বহু অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হস্তগত হয়। চারঘণ্টা যুদ্ধের পর এই দুই ঘাঁটি আমাদের সৈনিকরা দখল করে নেয়। পাকসেনারা পরদিন আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহের উপর জঙ্গী বিমানের আক্রমণ চালায়। আমাদের সৈনিকরা ভারী মেশিনগানের সাহায্যে বিমান আক্রমণের পাল্টা জবাব দেয়। শত্রুদের একটি জঙ্গী বিমান আমাদের মেশিনগানের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে শালিয়ার নিকট ভুপাতিত হয়। বিমান আক্রমণের আমাদের দু'জন সৈনিক শহীদ ও ৫ জন আহত হয়। এর পরদিন ১০ম বেঙ্গল আরো দুটি কোম্পানী সকাল ১০টায় দক্ষিন চিতলিয়ার উপর গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় আক্রমণ চালায়। ৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর আমাদের গোলন্দাজ বাহিনীর গোলা এবং মর্টারের গুলিতে শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং চিতলিয়া রেল স্টেশন ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে পাকসেনাদের অনেক হতাহত হয়। আমাদের পাঁচজন শহীদ এবং ১৩ জন আহত হয়। শেষ পর্যন্ত চিতলিয়া আমাদের দখলে আসে। আমাদের সৈনিকরা শত শত অস্ত্রশস্ত্র, অয়্যারলেস সেট, পোশাক, রেশন প্রভৃতি দখল করে নেয়। ৪দিনের যুদ্ধে ৫৭ জন পাকসেনা ও ১৫জন ইপিসিএএফ আমাদের হাতে বন্দী হয় এবং আরো অনেক হতাহত হয়। পাকসেনারা চিতলিয়া থেকে পালিয়ে মুন্সীরহাটের দক্ষিনে এবং পাঠাননগরে কাছে তাদের রক্ষাব্যূহ পুরায় স্থাপন করে। তাদের মূল ঘাটি ফেনীতে পিছিয়ে নেয়। এই সময় ‘ক-ফোর্স’ হেডকোয়ার্টার থেকে পুনঃআক্রমণের নির্দেশ আসে। এই নির্দেশ অনুযায়ী ‘কে-ফোর্স” হেডকোয়ার্টার কোনাবন অবস্থান থেকে দক্ষিন বেলুনিয়াতে স্থানান্তরিত হয় এবং বেলুনিয়া সেক্টরে ৪র্থ বেঙ্গলকেও এই যুদ্ধে নিয়োজিত করা হয়। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী ‘কে-ফোর্স' অতিস্তর ফেনী মুক্ত করার আদেশ দেয়া হয়। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪র্থ বেঙ্গল ফেনীর দিকে অগ্রসর হয়। ৪র্থ বেঙ্গল উত্তর দিক থেকে ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে ফেনীর দিকে অগ্রসর হয়। ১০ম বেঙ্গল লক্ষ্মীপুর হয়ে ছাগলনাইয়ার দিকে অগ্রসর হয়। ‘কে-ফোর্স’-এর দুই ব্যাটালিয়নের প্রচণ্ড চাপে পাকসেনারা টিকতে না পেরে তাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটি পাঠাননগর ও দক্ষিন মুন্সীরহাট ছেড়ে পেছনে দিকে পালিয়ে যায়। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে কে- ফোর্স ছাগলনাইয়া ও ফেনীর উপকণ্ঠে পাকসেনাদের উত্তর-পশ্চিম দিকে সম্পূর্নভাবে ঘিরে ফেলে এবং পাকসেনাদের অবস্থানগুলোর উপায় গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায় এই প্রচণ্ড চাপে পাকসেনা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আমাদের আক্রমণের চাপ আরেরা বাড়িয়ে দেয়া হয়। উপায়ান্তর না দেখে ৬ই ডিসেম্বর পাকসেনারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে শুভপুর সেতু হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। ৬ই ডিসেম্বর দুপুরে কে ফোর্স ফেনীকে শত্রুমুক্ত করে। ফেনীতে পাকসেনাদের অজস্র গোলাবারুদ আমাদের হস্ত গত হয়। শত্রুরা পালাবার সময় ভুভপুর সড়ক ও রেলসেতু উড়িয়ে দেয়। যার ফলে পাকসেনাদের পিছু ধাওয়া করা কে -ফোর্স-এর পক্ষে অসুবিধা হয়ে পড়ে এবং তাদের অগ্রাভিযান বাধা প্রাপ্ত হয়। শুভপুর সেতু মেরামতের জন্য দু'দিন সময় লেগে যায়। মিত্র বাহিনীর প্রকৌশলীরা একটি সেতু পুনঃনির্মান করে এবং এরপর সেতু ও নৌকার সাহায্যে চট্টগ্রামের দিকে কে-ফোর্স-এর অগ্রাভিযান পুনরায় শুরু হয়। এই সময় আমি আহত হওয়ার ফলে কে-ফোর্স- এর নেতৃত্বে মেজর সালেকের উপর ন্যাস্ত ছিল। কে-ফোর্স ফেনী থেকে করেরহাট পর্যন্ত পাকসোনাদের ছোটখাট রক্ষাব্যূহ দখল করে তাদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রাখে এবং করেরহাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা শুরু করে। করেরহাট থেকে চট্টগ্রাম অগ্রসর হওয়ার জন্য নতুন একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়। এই পরিকল্পনা অনুসারে ৪র্থ ও “মুজিব” ব্যাটারীকে (বাংলাদেশ ১ম গোলন্দাজ বাহিনী) নিয়ে হিয়াকু ফটিকছড়ি নাজিরহাট হয়ে চট্টগ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শত্রুবাহিদনীর থেকে শত্রুবাহীনীর উপর আক্রমণ চালাবে এবং ১০ম বেঙ্গল ফেনী-চট্টগ্রামের প্রধান সড়কে সীতকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হবে। এই দ্বিমুখী অগ্রাভিযান চট্টগ্রামের উপকণ্ঠে হয়ে চট্টগ্রামের উপকেণ্ঠে পৌছে চট্টগ্রাম শহরের উপর সাঁড়াশী আক্রমণ চালাবে। পরিকল্পনা মত ৪র্থ বেঙ্গল “মুজিব” ব্যাটারীসহ হিয়াকুরদিকে ৭ই ডিসেম্বর রাত ১২টায় অগ্রসর হয়। পরদিন সকাল ৬টায় হিয়াকু বাজারের নিকট পৌঁছার পর পাকসেনাদের একটি অগ্রবর্তী ঘাঁটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পাকসেনাদের এই ঘাঁটিতে