প্রায় ৪০/৫০জন সৈনিক ছিল। তারা আমাদের বাধা দেয় কিন্তু আমারে সৈনিক এবং গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণে টিকতে দনা পেরে পাকসেনারা ফটিকছড়ির দিকে পালিয়ে যায়। ফলে হিয়াকু বাজার আমরা অতি সহজেই শত্রুমুক্ত করে নিজেদের দখলে আনি। হিয়াকু থেকে চট্টগ্রামের দিকে একটি কাঁচা রাস্তা রাস্তা গেছে। রাস্তাটি খুবই খরাপ। সেই রাস্তা হয়ে পায়ে হেঁটে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হয়। অগ্রসরের পথে নারায়ণহাটের নিকট পাকসেনাদের আরেকটি অবস্থানের সঙ্গে ৪র্থ বেঙ্গলের সংঘর্ষ হয়। পাকসেনাদের এ অবস্থানটিও আমাদের আক্রমণের চাপে টিকতে না পেরে ফটিকছড়ির দিকে পিছু হটে যায়। যাওয়ার সময় এটি কাঠের সেতু ধ্বংস করে দেয়। ৪র্থ বেঙ্গল ওই দিন রাতে নারায়ণহাটে বিশ্রাম নেয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত সেতুটি মেরামত করার পর আমাদের অগ্রযাত্রা পুনরায় শুরু হয়। পথে কাজীরহাটে পাকসেনারা আমাদের অগ্রাভিযানে বাধা বোর জন্য পথে অনেক মাইন পুঁতে রাখে। এই মাইনগুলোতে সরিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হয়। ১০ই ডিসেম্বর ফটিকছড়ির উপকণ্ঠে ৪র্থ বেঙ্গলের অগ্রাভিযানকে পাকিস্তানের ২৪ তম ফ্রাণ্টিয়ার রেজিমেণ্ট বাধা দেয়। ফটিকছড়িতে পাকিস্তানীদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। সেজন্য ৪র্থ বেঙ্গলের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন গাফফার পাকসেনাদের ঘাঁটিটি সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর ৪র্থ বেঙ্গলকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি দল ফটিকছড়ির সন্নিকটে পাহাড়ের দিকে রাস্তায় অগ্রসর হয় এবং প্রধান দলটি কাজীরহাট-ফটিকছড়ি রাস্তার দিকে অগ্রসর হয়। ১১ই ডিসেম্বর বিকাল ৪-৩০টায় এই দুটি দল সম্মিলিতভাবে দুদিক থেকে পাক অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মুজিব ব্যাটারী গোলন্দাজ বাহিনীও ফটিকছড়ির উপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ টিকতে না পেরে রাত ১২টার পর পাকসেনারা সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বিছানাপত্র ফেলে পিছনের দিকে পালিয়ে যায়, ফলে ফটিকছড়ি শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে আমাদের দু'জন শহীদ হয়, অপরদিকে শত্রুপক্ষের কমপক্ষে ৩০/৪০ জন হতাহত হয়। এই সময়ে খবর আসে যে পাকসেনাদের একাটি শক্তিশালী দল তাদের রামগড় অবস্থান পরিত্যাগ করে মানিকছড়ির পথে ফটিকছড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংবাদ পেয়ে ৪র্থ বেঙ্গল থেকে দ'টি প্লাটুন এবং মর্টার প্লাটুন এই দলটিকে বাধা দেবার জন্য মানিকছড়ির রাস্তায় পাঠানো হয়। আমাদের প্লাটুনগুলো পাকসেনাদের মানিকছড়ির রাস্তায় সাফল্যের সঙ্গে এ্যামবুশ করতে সমর্থ হয়। পাকসেনারা অতর্কিত আক্রান্ত হয়ে নাজিরহাটের দিকে পালিয়ে যায়। ১২ই ডিসেম্বর ভোরে ফটিকছড়ি থেকে ৪র্থ বেঙ্গল চট্টগ্রামের দককে অগ্রসর হয়। ২/৩ ঘণ্টা পর প্রায় ৯/১০ টার সময় নাজিহাট নদীর পাড় থেকে পাকসেনারা আমাদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রায় বাধা দেয়। ক্যাপ্টেন গাফফার নদীর নিকটস্থ একটি দোতলা বাড়ি থেকে পাকসেনাদের অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। খবরাখবর নিয়ে বোঝা যায় যে, পাকসেনাদের ২৪তম ফ্রণ্টিয়ার ফোর্স তাদের প্রায় তিনটি কোম্পানী ও বেশ কিছুসংখ্যক ইপিসি-এএফসহ নাজিরহাট নদীর তীর বরাবর একটি শক্তিশালী অবস্থানের নিয়ে আছে। ১৩ই ডিসেম্বর পাকসেনাদের সম্বন্ধে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তার পরই পাক অবস্থানের উপর গোলাবর্ষন করা হয়। কিন্তু শত্রুদের অবস্থান এত শক্তিশালী ছিল যে চার ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চালানোর পরও পাকসেনারা আমাদের আক্রমণকে প্রতিহত করে। সুতরাং এভাবে আক্রমণ চালিয়ে কোন লাভ নেই মনে করে অন্য পন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত সেয়া হয়। এবং সেজন্য আমাদের সৈন্যদেরকে কিছুটা পিছিয়ে নেয়া হয়। এই সময় একজন পাকসেনা আমাদের হাতে জীবিত ধরা পড়ে। মৃত সেই পাকসেনার কাছ থেকে পাকসেনাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ সম্বন্ধে আরো সঠিক খবর জানা যায়। সেখানে জানা যায় ২৪তম ফ্রণ্টিয়ার- এর মেজর আশেকএই প্রতিরক্ষাব্যূহের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই প্রতিরক্ষ্যব্যূহের শক্তি প্রায় এক ব্যাটালিয়নের মত। নদী বরাবর ব্যাটালিয়নটি অসংখ্যা বাঙ্কার তৈরী করে তাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ সুদৃঢ় করেছে। কিন্তু এদের নজর ফটিকছড়ির দিকে বেশী থাকাতে পশ্চিম ভাগ বেশী শক্তিশালী নয়। অতি অল্পসংখ্যক সৈন্য দিয়ে পশ্চিমের চা বাগানের দিকে রক্ষাব্যূহ রচনা করা হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেয়ে পশ্চিমের চা-বাগানের দিক থেকে পাকসেনাদের উপর আক্রমনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী লেঃ শওকতের নেতৃত্বে গণবাহিনীর একটি কোম্পানী চারঘণ্টা আগে নাজিরহাট এবং চট্টগ্রামের রেলপথের মাঝে পাকসেনাদের অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে তারা এত হতভম্ব হয়ে পড়েছিল যে, আমাদের আক্রমণে বাধা পর্যন্ত দিতে পারেনি এবং শত্রুরা ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পায় আমরা তাদেরকে
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৬৭
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
142