বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড

বার

ডেপুটি চীফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল এ, কে, খন্দকার (পৃঃ ৫২৩) এবং ক্যাপ্টেন আবদুস সাত্তার (পৃঃ ৫৬৮)- এর ভাষ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মেডিক্যাল কোর ও সিগন্যাল কোরও গঠন করা হয়েছিল। সীমিত আকারে হলেও এরা পৃথক সত্তা নিয়ে কর্মতৎপর। এদের তৎপরতা সম্বন্ধেও কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে যথাক্রমে ৫২৬ ও ৫২৮ পৃষ্ঠায়।

 প্রত্যেক সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর চূড়ান্ত পর্বের লড়াই সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে গোটা রণাংগনের পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য (পৃঃ ৫২৯-৫৩৭) এবং এর পরই পাক-ভারত যুদ্ধের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে পূর্বাঞ্চলজুড়ে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ তৎপরতার বিবরণ (ভারতীয় সূত্র থেকে আহরিত) সংযোজিত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশ বাহিনী মিলে গড়ে উঠেছিল এই কমাণ্ড। এদের যৌথ কার্যক্রম, হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত এদের দ্রুত যৌথ সামরিক অভিযানগুলি এবং সে সবের সাফল্যজনক চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে এ বিবরণে।

 সশস্ত্র সংগ্রামের পর্যায়ে বি-ডি-এফ-এর গঠন ছিল চূড়ান্ত নির্ধরক ঘটনা। সামগ্রিক যুদ্ধ স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন, রণক্ষেত্রকে বিভিন্ন সুবিধাজনক সেক্টরে বিভাজন, এবং এগুলিতে সৈনাধ্যক্ষ নিয়োগ, ব্রিগেড ফোর্স গঠন, নতুন সামরিক অফিসার ট্রেনিং ও তাদের নিয়োগ, নৌ ও বিমান বাহিনী গঠন, গণবাহিনী (ফ্রিডম ফাইটার) গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বি-ডি-এফ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন। এ সম্বন্ধে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর একটি পূর্ণাংগ সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে এ খণ্ডের পরিশিষ্টে (পৃঃ ৫৫৯)। স্বাধীনতার পরপরই গৃহীত ও তাঁরই সংশোধিত এ সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সামগ্রিক প্রেক্ষিত উন্মোচনে প্রভূত সাহায্য করবে।

 গণবাহিনী বলে পরিচিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ বাহিনী গড়ে উঠেছিল হাজার হাজার তরুণ ছাত্র-যুবক নিয়ে। সেক্টর-সাব-সেক্টরের আওতায় এরা প্রচণ্ডভাবে সক্রিয় ছিল দেশের অভ্যন্তরে অবিরাম আঘাত হানার মাধ্যমে হানাদার বাহিনীকে প্রতিনিয়ত পর্যুদস্ত করার কাজে। তথ্যের স্বল্পতার দরুন এদের অপূর্ব সাহসিকতাপূর্ণ বিচিত্র ও বিশাল কর্মকাণ্ডের সামান্য অংশই বর্তমান খণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে।

 সাক্ষাৎকারগুলিতে বর্ণিত ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রমিকতার ওপর সতর্ক দুষ্টি রাখা হয়েছে, সম্পাদনায় অনেক ক্ষেত্রে বিশ্লেষণাত্মক বর্ণনা ও পুনারাবৃত্তি পরিহার করে শুধু ঘটনা পরিস্থিতিকে রাখা হয়েছে, এবং মুদ্রণ প্রমাদ এড়ানোর যথাসাধ্য প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তবু অনিচ্ছাকৃত দু’একটি ত্রুটি রয়ে গেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১ নং সেক্টরের যুদ্ধ বর্ণনাকারীদের মধ্যে শামসুল ইসলাম-এর (পৃঃ ৬২) নাম অমুদ্রিত থেকে গেছে।

 জাতীয় স্বাধীনতার সশস্ত্র লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ যেমনটি হয়ে থাকে, বলতে গেলে, বাংলাদেশের গোটা ভূখণ্ডই ছিল রণক্ষেত্রবিশেষ। বহু প্রথাগত সম্মুখ যুদ্ধে ও সংঘর্ষে, বিস্তর অ্যামবুশে, গেরিলা, পদাতিক, নৌ কমাণ্ডো ও বৈমানিকদের বীরত্বপূর্ণ দুঃসাহসিক অভিযানে এবং তাদের বিপুল আত্মোৎসর্গে পরিপূর্ণ ছিল এ রণক্ষেত্র। এর প্রতিটি ঘটনার তথ্যেদ্ধার সুদীর্ঘকালীন প্রয়াসসাপেক্ষ। এখানে প্রকল্পের নির্দিষ্ট-কাল পরিসরে যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা গেছে, তারই ভিত্তিতে গ্রন্থের সীমিত আয়তনের দিকে লক্ষ্য রেখে স্বধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র পর্বের ঘটনাকে সেক্টরে সেক্টরে বিন্যস্ত করে একটি প্রতিনিধিত্বশীল চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।