পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
147

॥ কালাছড়া চা বাগান অপারেশন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা) ॥

 লেঃ হারুন রশীদ কালাছড়া চা বাগান অপেরশন পরিচালনা করেন। এই চা বাগানটি এরপর সবসময় মুক্ত ছিল। এই মুক্তাঞ্চলটি বাংলাদেশের সেনাদের কাছে অতি প্রিয় ছিল, কারণ পরবর্তীকালে এই চা বাগানটি পাকসেনারা আর কখনই তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।

 পাকসেনাদের একটি দল চা বাগানে অবস্থান করছে, লেঃ হারুনর রশীদ এ খবর পেয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য লোক নিয়োগ করেন। পাক বাহিনীর দুটি কোম্পানী ঐ বাগানে অবস্থান করছিল। লেঃ হারুনর রশীদের অধীনে দুটি কোম্পানী সৈন্য ছিল। নিয়মমাফিক পাক বাহিনীকে আক্রমণ করতে হলে দুটি ব্যাটালিয়ন দরকার। কিন্তু লেঃ হারুন সাহস করে প্রস্তুতি নিলেন। দুটি কোম্পানীর একটির কমাণ্ডার ছিলেন শহীদ হাবিলদার হালিম এবং অপর কোম্পানীর দায়িত্বে লেঃ হারুন নিজে ছিলেন। হারুন রশীদই বলতে গেলে দুটি কোম্পানীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় অন্য কোন অফিসার না থাকায় হাবিলদার শহীদ হালিমকে একটি কোম্পানী পরিচালনার ভার দেয়া হয়।

 একদিন রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কোম্পানী দুটি দলে ভাগ হয়ে পাক অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাক অবস্থানে আঘাত হানলো। হাবিলদার হালিম যে কোম্পানী পরিচালনা করছিল ঐ কোম্পানীর একজন যোদ্ধা প্রথমেই শহীদ হওয়াতে তারা আর সামনে অগ্রসর হতে পারেনি। কিন্তু লেঃ হারুনর রশীদ তাঁর কোম্পানী নিয়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এ আক্রমণে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর কিছু সৈন্য বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কারে গ্রেনেড চার্জ করে অনেক পাকসেনাকে হত্যা করে। হাবিলদার হালিম তাঁর দলের একজন সেনা শহীদ হওয়ায় আর সামনে অগ্রসর হতে না পারায় লেঃ হারুনর রশীদ নিজের জায়গা দখল করে শহীদ হালিমের লক্ষ্যস্থলে অবস্থানরত পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে এবং তাদের পর্যদস্ত করে স্থানটি দখল করে নেয়। ঐ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এল-এম-জিসহ একশ অস্ত্র উদ্ধার করে। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ৭ জন আহত ও দুইজন শহীদ হয়। পাকিস্তানীরা ২৭ জন সেনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। যুদ্ধের পরদিন সকালে ঐ স্থানের সাধারণ নাগরিকরা ঐ সমস্ত পাকবাহিনীর মৃতদেহ বহন করে আনে। পরে তাদেরকে আমার তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়।

(অক্টোবর মাসের শেষের দিকের ঘটনা)

॥ চন্দ্রপুর অপারেশন (কসরা স্টেশন থেকে তিন মাইল উত্তরে) ॥

 ১৮ই নভেম্বর তারিখে ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার 'তুলে' আমাকে ডেকে বলেন যে, তারা যৌথ উদ্যোগে চন্দ্রপুর ও লাটুমুড়া হিল আক্রমণ করবে। সেখানে পাকিস্তানী সেনারা অবস্থান করছিল। আমাকে পরিকল্পনা করতে বলেন। আমি ব্রিগেডিয়ার সাহেবকেই পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানালাম। তিনি পরিকল্পনা করলেন। কিন্তু ব্রিগ্রেডিয়ার সাহেবের পরিকল্পনা আমার মনঃপূত হলো না। কারণ চন্দ্রপুর গ্রামের সাথেই ছিল লাটুমুড়া হিল (পাহাড়)। আর চন্দ্রপুর আক্রমণ করলে লাটুমুড়া হিল থেকে পাকসেনারা আমাদের অভি সহজেই ঘায়েল করতে পারবে। কিন্তু তিনি আমার কোন কথা না মেনে বলেন, আমাদের আক্রমণে পাকবাহিনী পালিয়ে যাবে। তিনি ট্যাঙ্ক নিয়ে এসে রাত্রিতে টহল দিতেন যাতে পাকসেনারা বুঝতে পারে এলাইড ফোর্স এর প্রচুর ট্যাঙ্ক আছে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চন্দ্র পুর আক্রমণ করা হলো। আমি তাকে অনুরোধ করলাম আমার দলের যে ক'জন সেন্য যাবে আপনাদেরও ততজন সৈন্য যেতে হবে। ব্রিগেডিয়ার সাহেব এ প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলেন। ভারতীয় একটি কোম্পানীর নেতৃত্বে ছিলেন একজন মেজর। বাংলাদেশ বাহিনীর কোম্পানী পরিচালনা করেন লেঃ খন্দকার আবদুল আজিজ। পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশ বাহিনীর সেনারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে এবং ভারতীয় বাহিনী ভারত সীমান্তের ভিতর দিয়ে ২২ শে নভেম্বর চন্দ্রপুর আক্রমণ করে। এই আক্রমণে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর সৈন্যরাই শহীদ হয় বেশী। ভারতীয় বাহিনীর কোম্পানী কমাণ্ডার শিখ মেজর