বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
159

লেঃ ইমামুজ্জামানের বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। সে তাড়াতাড়ি তার বাহিনী পিছনে সরিয়ে নিয়ে যায়। যাবার আগে সে আমাকে জানাতে পারেনি। ডানদিকে আমার যে প্লাটুনটি ছিল, শত্রুদের গোলাগুলির মুখে তারা তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারে না। তারা অবস্থান ত্যাগ করে যায় এবং শত্রুরা সে অবস্থান দখল করে নেয়। ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয় অন্যান্য প্রতিরক্ষাব্যূহতে আমাদের সৈন্যরা ঠিকমতই অবস্থান নিয়ে আছে।

 শত্রুরা ডান এবং বাম দিক ও সম্মুখ থেকে আমার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। শত্রুর অবস্থান জানাবার জন্য নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেনকে ডান দিকে পাঠাই এবং আমি নায়েক সুবেদার শহীদকে নিয়ে বাঁ দিকে যাই। আমি গিয়ে দেখতে পাই শত্রুরা মাত্র ৫০০ গজ দূরে এবং আমি সঙ্গে সঙ্গে মূল ঘাঁটিতে ফিরে আসি এবং দেখতে পাই নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন আমার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানায় আমাদের আগের অবস্থান থেকে শত্রুরা আক্রমণ চালাচ্ছে। বিকেল ৫টার দিকে শত্রুরা তিনদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে দেয়। আমরা আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকি। শত্রুরা আমাদের সমস্ত যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু শত্রুসেনা ছাগলনাইয়া হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং আমাদের একমাত্র যোগাযোগের পথ পরশুরামের রেলওয়ে ব্রীজ ও সড়কসেতু ঘিরে রাখে।

 ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আমার বাহিনীর কারো মুখে খাদ্য জোটেনি। আমরা অভুক্ত ছিলাম এবং গোলাবারুদ নিঃশেষ হয়ে আসছিল। আমি সেক্টর-২ এর হেডকোয়ার্টারে খবর পাঠাই সত্বর খাবার এবং গোলাবারুদ পাঠানোর জন্য, কিন্তু হেডকোয়ার্টার খবর পাঠায় যে ভারতীয় বাহিনীর গোলাগুলি দেবার যে কথা ছিল তা এখনও এসে পৌঁছেনি-সেহেতু আমি আমার অবস্থান তুলে নিয়ে যেন পরশুরাম চেকপোস্টের দিকে এগিয়ে যাই।

 অবস্থান তুলে নেবার নির্দেশ পেলেও শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হবার ফলে আমি আমার বাহিনী তুলে নিতে পারছিলাম না। শত্রুরা ধীরে ধীরে আমাদের নিকটে চলে আসছিল। এ মুহুর্তে আমার বাহিনীকে জোগাড় করা মুস্কিল ছিল, কেননা শত্রুরা গোলন্দাজ বাহিনীর কামান বৃষ্টির মত আমাদের উপর গোলা ছুড়ছিল। আমার সে সময়ে গোলাবারুদ একরকম নিঃশেষ হয়ে এসেছিল। প্রতিটি রাইফেলের জন্য ১০ রাইণ্ড এবং হালকা মেশিনগানের জন্য ৫০ রাউণ্ডের বেশী গুলি ছিল না। আমি সব প্লাটুন কমাণ্ডারদের ডেকে পাঠাই এবং তাদেরকে রেললাইনের পূর্বদিকে সরে যাবার নির্দেশ দেই। যা হোক কোনক্রমে আমার বাহিনীকে আমি নিরাপদে পরশুরামে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। আমি সেখানে পৌঁছে দেখি হেডকোয়ার্টারের নির্দেশ অনুযায়ী ক্যাপ্টেন জাফর ইমামও তাঁর বাহিনী সরিয়ে নেবার জন্য প্রস্তুত হচেছন।

 পরশুরাম থেকে অবস্থান তুলে নেবার কাজ দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। কিন্তু শত্রুরা আমাদের অবস্থান পরিত্যাগের কথা জানতে পারে এবং আমাদের পিছু ধাওয়া করে। শত্রুরা বৃষ্টির মত আমাদের উপর গোলাগুলি ছুড়তে থাকে। আমরা পিছু হটতে হটতে পরশুরাম খালের নিকট পৌঁছি। শত্রুরা ব্রীজের উপর থেকে গুলি চালাতে থাকে। আমরা দ্রুত খালে নেমে যাই এবং সাঁতরিয়ে ওপারে যাই এবং ভাগ্যক্রমে ইটের খোলা দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে শত্রুর গোলাগুলির হাত থেকে রক্ষা পাই। সকাল ৬টার মধ্যে আমরা নোয়াখালী হেডকোয়ার্টারে পৌঁছি।

 নিদ্রাহীন এবং অভুক্ত থাকার জন্য আমার বাহিনীর অর্ধেকের মত সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২৬শে জুনে সেক্টর-২-এর কমাণ্ডার মেজর খালেদ নোয়াখালী হেডকোয়ার্টারে আসেন। তিনি এখানে সব কমাণ্ডারদের নিয়ে এক সভা করেন। তিনি আমাকে আমার বাহিনী নিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে শালদা নদীর কোনাবন এলাকায় যাবার নির্দেশ দেন। সে সময়ে পাকসেনারা এ এলাকায় খুব চাপ দিচ্ছিল। মেজর খালেদ আমার এবং আমার বাহিনীর জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করে দেন।

 ২৭ শে জুন আমি আমার কসবা সাবসেক্টর হেডকোয়ার্টারে পৌঁছি। কসবাতে পৌঁছে আমি আমার বাহিনী যেটা কসবায় রেখে গিয়েছিলাম, তাদের যোগাড় করতে থাকি। কসবায় এসে দেখি পাকসেনারা গুরুত্বপূর্ণ