বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
171

 পরশুরামে আমরা ঘাঁটি স্থাপন করি। নভেম্বরের ১৯ ভারতীয় বাহিনীর সংগে মুন্সিরহাট-পাঠানগর অঞ্চলে আক্রমণ চালানো হয় এবং মুক্ত করা হয়। অনেক পাকিস্তানী সৈন্য নিহত। অধিকাংশই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ভারতীয় বাহিনী ঐ এলাকায় ৪টা ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছিল।

 ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখে ফেনির উপরে আক্রমণ চালানো হয়। সকালের মধ্যে সমস্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফেনী ছেড়ে চলে যায়। ফেনী থেকে আমরা চৌমুহনীর দিকে রওয়ানা হলাম। সেখানে অনেক পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকার ছিল। দু'দিন তুমুল যুদ্ধ চলে। পরে চৌমুহনী মুক্ত হয়। প্রায় একহাজার রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। অনেক পাকিস্তানী সৈন্যও আত্মসমর্পণ করে।

 ৭ই ডিসেম্বর আমরা মাইজদীতে গেলাম। সেখানেও পাকিস্তানীরা বাধা দেয়। অনেক রাজাকার এবং পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এই সমস্ত এলাকার দায়িত্ব মুক্তিবাহিনীর কাছে অর্পণ করে আমরা চট্টগ্রামের দিকে রওয়ানা হলাম।

 ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পৌঁছাই। ১৪ই ডিসেম্বর হাটহাজারী থানা দখল করা হয়। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে খবর পাওয়া গেলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমাণ্ডোর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানীরা চট্টগ্রামেও আত্মসমর্পণ করলো। মুক্তিবাহিনীতে অধিকাংশ স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যোগ দিয়েছিল। তাছাড়া গরীব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যুবকেরা নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধ করেছিলো।

স্বাক্ষরঃ মেজর ইমামুজ্জামান
১০-১-৭৪

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল মোস্তফা কামাল[]

 প্রশ্ন: আপনি ভারতে গিয়েছিলেন কবে?

 উত্তর: আমি মে মাসের ১৫ তারিখে ভারত গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে লেঃ মালেক গিয়েছিলেন। আমাদের দু'জনকে নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে গাইড ছিল।

 প্রশ্ন: আপনারা বরিশাল থেকে ঢাকা এলেন এবং কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া যায় সেই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং- এ আপনারা ঢাকা থেকে আগরতলা গেলেন মে মাসে। সেখান থেকে আপনারা কোথায় গেলেন?

 উত্তর: আগরতলা একটা বড় জায়গা। আগরতলার একটা জায়গার নাম সোনামুড়া। সোনামুড়া বর্ডার এলাকায়। সেখানে ২নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল। আমরা প্রথমে সেখানে যাই এবং গিয়ে রিপোর্ট করি। আমার পরিচয় দেয়ার পর ফর্মালিটি যা করার সেগুলো হলো। খালেদ মোশাররফ ২নং সেক্টরের পুরো চার্জে ছিলেন। তাকে মাঝে মাঝে নানা জায়গায় নানা সাবসেক্টরে যেতে হতো। সেদিনও তিনি গিয়েছিলেন, ফলে তার সাথে তখন দেখা হয়নি; কিছুদিন পরে দেখা হয়েছিল। তখন ছিলেন ক্যাপ্টেন হায়দার সাহেব- পরে লেঃ কর্নেল হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তখনকার বলা চলে সেকেণ্ড-ইন- কমাণ্ড সেক্টর তিনি ছিলেন ট্রেনিং সেণ্টারের ইনচার্জ। ২নং সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ট্রেনিং দেয়া হতো ছাত্রদের এবং যারা আর্মি পারসন না তাদের। গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হতো এবং তাদের অস্ত্র দিয়ে ভেতরে পাঠানো হতো।এই ট্রেনিং সেণ্টারটা প্রথমে সোনামুড়ায় ছিল, পরে নানা দিক বিবেচনা করে মে মাসের শেষ সপ্তাহে সোনামুড়া থেকে মেলাঘরে স্থানান্তরিত করা হলো।


  1. প্রকল্প কর্তৃক ৮-১০-৭৯ তারিখে কুমিল্লা সেনানিবাসে গৃহীত সাক্ষাৎকার