পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
188

 মীরগঞ্জে রাজাকারের আত্মসমর্পণ: মীরগঞ্জের রাজাকাররা আত্মসমর্পণের জন্য আমার নিকট দু'খানা পত্র পাঠায়। প্রথম পত্র আমি মোটেই বিশ্বাস করতে পারিনি। দ্বিতীয় পত্রখানা পাবার পর এ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সাহেবকে পাঠালাম আত্মসমপর্ণের শর্ত নির্ধারণ ও মধ্যরস্থা করার জন্য। সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে পাঠালাম সতর্কতার সহিত আত্মসমর্পণ করানোর জন্য। পূর্বশর্ত অনুযায়ী রাজাকাররা লাইন ধরে অস্ত্র রেখে দু'হাত উপরে তুলে নায়েক ওয়ালীউল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে। সংখ্যায় ছিল মোট ৩৭ জন রাজাকার ও ২৭ জন পুলিশ। কয়েকদিন তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার পর ৫/৭ জনকে ভাগ ভাগ করে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন প্লাটুনে দেয়া হয়। এদের মধ্যে দু'জন পুলিশ পুনরায় বিশ্বাসঘাতকতা করে। অবশ্য তারা পুনরায় মাইজদিতে ধরা পড়লে সেখানেই গুলি করে শেষ করে দেয় নায়েক সুবেদার ওয়ালীউল্লা।

 ২৩শে অক্টোবর (প্রধান দালাল ননী চেয়ারম্যান ধৃত): লক্ষ্মীপুরের প্রধান দালাল ননী চেয়ারম্যানের অত্যাচারে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম কর। লুটতরাজ, নারীধর্ষণ, গণহত্যা, বাড়ি পোড়ানো, হানাদার বাহিনীকে মুক্তিবাহিনীর সন্ধান দেয়াই ছিল তার পেশা। অবশেষে বীর সাহসী যোদ্ধা নায়েক সুবেদার ওয়ালীউল্লা জালালের প্লাটুন নিয়ে এই কুখ্যাত দালাল বাহিনীর উপর আক্রমণ করে জীবন্ত অবস্থায় বাঙ্গালীর বিশ্বাসঘাতক দালাল ননী চেয়ারম্যানকে বন্দী করে। তার বন্দী হবার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার লোক সেখানে উপস্থিত হয়। সমস্ত মানুষের উপস্থিতিতে তার নিজ বন্দুক দিয়ে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ক্রুদ্ধ জনতা তার লাশ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মনের রাগ মিটায়।

 ২৯শে অক্টোবর (সোনাইমুড়ি-চাটখীল যুদ্ধ): পাক বাহিনীর বেলুচ রেজিমেণ্ট লাকসান থেকে কামান ও রকেটের সাহায্যে ফায়ার করতে করতে সোনাইমুড়ি থেকে চাটখীল সড়কের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এমন সময় ছাত্রদলসহ আমরা বাধা দিলে তুমুল লড়াই শুরু হয়। প্রায় ২/৩ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। শত্রুপক্ষের কয়েকজন হতাহত হয়। শত্রুরা শেলিং করে হতাহত সৈন্যদের পার করে। হানাদার বাহিনীর শেলিং-এ একই বাড়ির ৫ জন নিরীহ লোক মারা যায়।

 ১০ই নভেম্বর: চন্দ্রগঞ্জের নিকটবর্তী রাস্তায় মাইন বসানো হয়। পাকবাহিনীর এক ট্রাক আটা লক্ষ্মীপুরে যাবার সময় ট্রাকটি মাইনের আঘাতে নষ্ট হয় এবং ড্রাইভার নিহত হয়।

 ১৩ই নভেম্বর: আমার নিজ প্লাটুন নিয়ে লক্ষ্মীপুর রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করি। এ আকস্মিক আক্রমণে বহু রাজাকার হতাহত হয়। এখানে জনসাধারণ বিশেষভাবে আমাদেরকে সাহায্য করেন।

 ১৭ই নভেম্বর: সুবেদার ওয়ালীউল্লা মধ্যরাতে রামগঞ্জে অতর্কিত আক্রমণ করে রামগঞ্জের রাজাকার ক্যাম্প নিশ্চিহ্ন করে দেন।

 ২৯শে নভেম্বর: পশুবাহিনী একখানা ভ্যানে দু'জন স্ত্রীলোককে নিয়ে যাবার সময় বগাদিয়ার নিকট হাবিলদার আউয়াল গাড়িটি আক্রমণ করে। এ সময় পিছনের দিকে শত্রুবাহিনীর আরও কিছু সৈন্য সেখানে এসে উপস্থিত হয়। আমিও আমার প্লাটুন নিয়ে আক্রমণ করি। ২/৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর তারা স্ত্রীলোক দুজনকে রেখেই পলায়ন করে। পরে উক্ত স্ত্রীলোকদ্বয়কে তাঁদের আত্মীয়দের নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।

 ৩০শে নভেম্বর: সাহেবজাদা পুল মেরামত করার সময় পাকবাহিনীর লোকজন হাবিলদার নূর মোহাম্মদ-এর হাতে মার খেয়ে পুল মেরামত করা বাদ দিয়ে পালিয়ে যায়।

 ১লা ডিসেম্বর: চন্দ্রগঞ্জ বাজারের সামান্য উত্তরে হাবিলদার রুহুল, আমি ও ছাত্র কমাণ্ডার সফি আলোচনা করছি। এমন সময় আহত ছোট একটি ছেলে এসে খবর দিলো যে পাঞ্জাবী সৈন্যরা চন্দ্রগঞ্জে আসছে। হাবিলদার রুহুল আমিনকে প্রস্তুতি নিতে বললাম। ইতিমধ্যে পাক-সৈন্য পৌঁছে গেছে। হাবিলদার রুহুল আমিন শত্রুদের