বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
191

আক্রমণ চালাই। আমার এই অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। বাকী সৈন্যগণ আমাদের তীব্র আক্রমণে টিকিতে না পারিয়া পিছন হটে।

 ২০-৬-৭১ তারিখে আমরা আমাদের মন্দভাগ ডিফেন্স ছাড়িয়া পূর্বোল্লোখিত ডিফেন্স দেবীপুর চলিয়া যাই। তখন বর্তমান মেজর গফফার সাহেব সেখান হইতে ডিফেন্স লইয়া বেলুনিয়ার দিকে চলিয়া যান। দেবীপুর যাওয়ার পর আমার জোয়ানের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০০ জন।

 ২৭-৬-৭১ তারিখে ১৮ জন পাকসৈন্য কসবা হইতে ইমামবাড়ির দিকে যাইতেছিল। তখন আমি আমার ১২ জন জোয়ান লইয়া কসবা রেল স্টেশনের নিকট তাহাদের উপর আক্রমণ করি। আমার এই আক্রমণে তাহাদের ১৭ জন সৈনিক নিহত হয়। মাত্র ১ জন সৈনিক বাঁচিয়া যায়। আমরা তখন তাহাদের লাশ আনিবার জন্য অগ্রসর হইলে কসবা হইতে পাকসৈন্যর আর একটি পার্টি ফায়ার করিতে করিতে অগ্রসর হইলে আমরা পিছন হটি। পরে এখান হইতে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করি।

 ৮-৭-৭১ তারিখে বর্তমান মেজর গফ্ফার সাহেব বেলুনিয়া হইতে ফিরিয়া আসিয়া কোনাবনে পুনরায় হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে।

 ৯-৭-৭১ তারিখে গফ্ফার সাহেব দেবীপুর হইতে আমার প্লাটুনকে কোনাবন লইয়া আসেন। ঐ তারিখ রাত্রিতেই আমি গফফার সাহেবকে বলি যে পাঞ্জাবীরা রেশন লইয়া প্রতি সপ্তাহে শালদা ও মন্দভাগের দিকে যায়। আমি সেখানে গিয়া তাহাদেরকে আক্রমণ করিব।

 ১০-৭-৭১ তারিখেই আমি ১৮ জন লোক লইয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হই। মঈনপুর নামক জায়গায় গিয়া দেখিতে পাই কয়েকখানা নৌকা ও স্পীডবোট লইয়া তাহারা মন্দভাগের দিকে অগ্রসররত। তখন আমি তাহাদের হইতে ১৩শত গজ দূরে। তাই ঐ সময় তাহাদেরকে আক্রমণ করিতে পারি নাই। পরে আমি নিজে গিয়া এ্যামবুশ লাগাইবার জায়গা রেকি করিয়া আসি। পরে আমার জোয়ানদেরকে লইয়া সেখানে এ্যামবুশ বসাই। বিকাল আড়াইটার সময় তাহারা ফিরিতেছিল। তখন আমি তাহাদের ঋপর আক্রমণ চালাই। ঐ সময় তাহারা আমার নিকট হইতে ২৫ গজ দূরে ছিল। তাহাদের স্পীডবোটে ২ জন লেঃ কর্নেল, ২ জন মেজর, ২ জন ক্যাপ্টেন, ১ জন নায়েব সুবেদার, ৩ জন সিপাই ও ১ জন অবাঙ্গালী ব্যবসায়ী। আমার তীব্র আক্রমণে তাহাদের স্পীডবোট ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়ে। ফলে সবাই নিহত হয়। এখান হইতে ১টা অতি প্রয়োজনীয় ম্যাপ, ১টা ওয়ারলেস সেট, তিনটা MG.IA-3 সহ আরো কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করি। আমরা চালিয়া যাওয়ার পর পাকসৈন্য আসিয়া তাহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তাহারা জানিতে পারে যে ক্যাপ্টেন বোখারীসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ অফিসারদিগকে আমি হত্যা করিয়াছি- তখন তাহারা ঐ এলাকায় প্রকাশ করে যে, যে লোক সুবেদার ওয়াহাব সাহেবের মৃত লাশ লইয়া আসিবে তাহাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হইবে।

 ১৮-৭-৭১ তারিখে নওগাঁ নামক জায়গায় পাক ডিফেন্সের ও-পি পোস্টে আক্রমণ করি। প্রকাশ থাকে যে, ঐদিন ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও ও তিনজন সান্ত্রী তাহাদের ওপি পোস্টে আসিয়া চারিদিক লক্ষ্য করিতেছিল। ঐ সময়ই আমি তাহাদের উপর আক্রমণ চালাই। আমার তীব্র আক্রমণে ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও ও ২ জন সিপাই নিহত হয়। বাকী একজন সিপাই আহত হইয়া ওপি পোস্ট-এর উপর হইতে নিচে পড়িয়া যায়।

 ৭-৮-৭১ তারিখে আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ গ্রাম এলাকায় পাকবাহিনীর শক্ত ডিফেন্সের উপর আক্রমণ চালাই। আমার তীব্র আক্রমণে পাক বাহিনী তাহাদের প্রায় ১০০টি বাঙ্কার ছাড়িয়া পিছু হটে। যাওয়ার পথে তাহারা বহু এ্যামুনিশন ফেলিয়া যায়। আমার এই আক্রমণের সময় মেজর আজিজ পাশা তাহার মুজিব ব্যাটারী ও বর্তমান সুবেদার মেজর শামসুল হক তাহার ৩" মর্টারের সাহায্যে সর্বপ্রকার সাহায্য করেন।