২৪-৮-৭১ তারিখে আমি কয়েকজন জোয়ান লইয়া সিএণ্ডবি রোডের কালামুড়া ব্রীজ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া ফেলি। এখানে যত রাজাকার ছিল তাহারা আমাদের সহিত একত্রিত হয়। তাহাদেরকে কোনাবন পাঠাইয়া দিয়া আমরা কালুমুড়া ব্রীজের ২ মাইল দক্ষিণে মাধবপুর ও মীরপুরের মাঝখানে এ্যামবুশ করি। তারপর দেখা যায় পাকসৈন্য ভর্তি ২টা স্টেট বাস, তিনটা জীপ ও ২টা ডজ অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালাই। আমার এই তীব্র আক্রমণে ৭টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হইয়া যায়। তাহাদের বহু সৈনিক মারা যায়। ৪ জন পাকসৈন্যকে অস্ত্রশস্ত্রসজ জ্যান্ত ধরিয়া ফেলি। পরে রাজাকারটাকে রাখিয়া বাকী তিনজন পাকসৈন্যকে ভারতে পাঠাইয়া দেই।
২৮-৮-৭১ তারিখে কোম্পানীগঞ্জ হইতে প্রায় ১৫০ জনের মত রাজাকার ও পাকসৈন্য মহেশপুর লুটপাট করার জন্য আসে। আমি তখন তাড়াতাড়ি আমার পার্টি লইয়া গ্রামটির চারিদিকে এ্যামবুশ করিয়া তাহাদের উপর আক্রমণ চালাই। আমাদের এই আক্রমণ বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত চলে। শেষে আমাদের আক্রমণের ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। বাকী সবাই লুটের মাল ফেলিয়া পলায়ন করিতে সক্ষম হয়। বিকাল ৫ ঘটিকার সময় আমরা কোনাবনের দিকে অগ্রসর হই। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখিতে পাই মীরপুর ও মাধবপুর এলাকা পাকবাহিনী জ্বালাইয়া দিতেছে। অনেক দূর হইতে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া দেখা যাইতেছিল। তখন আমরা সেইদিকে রওয়ানা হই। মাধবপুর উপস্থিত হইয়া অতি তাড়াতাড়ি এ্যামবুশ পাতিয়া তাহাদের উপর আক্রমণ চালাই। আমাদের আক্রমণে তাহারা পিছু হটে কিছুসংখ্যক লোক সেখানে হতাহতহ হয়। রাত্রি ১০টার দিকে আমরা চালনা নামক গ্রামের এক বাড়িতে গিয়া উঠি তখন তাহারা তাড়াতাড়ি আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে। খাওয়া-দাওয়ার পর রাত্র ৩ ঘটিকার সময় আমাদের ডিফেন্স মন্দভাগে ফিরিয়া আসে।
৩০-৮-৭১ তারিখে খবর পাইলাম যে, চালনা গ্রামে পাক-বাহিনী প্রবেশ করিয়া ডিফেন্স করিয়াছে। এই খবর পাইয়া ঐ দিনগত রাত্রিতেই আমি আমার ৫০ জন জোয়ান লইয়া সেখানে গিয়া উপস্থিত হই। সুবেদার শামসুল হক সাহেবও তখন ২টা মর্টারসহ ১টি সেকশন লইয়া আমাকে সাহায্য করার জন্য আসেন। ভোরের দিকে আমি তাহাদের উপর গুলি শুরু করি। আমার চারিদিকের আক্রমণে ১৩ জন রাজাকার সাঁতরাইয়া পালাইয়া যায়। সারাদিন যুদ্ধ চলার পর রাত্রির অন্ধকারে কয়েকজন পাকসৈন্য পালাইয়া যায়। বাকি ১ জন ক্যাপ্টেন, ১৫ জন সিপাই, ২৯ জন রাজাকার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এখানে আমরা ৭টি বড় নৌকা মালসহ দখল করিয়া ফেলি। ৬টা এলএমজি, ম্যাগাজিন বাক্স ৬টা, এলএমজি ম্যাগাজিন ৭২টা, রাইফেল ১২টা, ৮১০টা বুলেট উদ্ধার করি। সাঁতরাইয়া যাওয়া রাজাকারদের ভিতর শিতলাই গ্রামের জনগণ ৬ জনকে খতম করিয়া ফেলে। বাকী রাজাকারদেরকে আবদুল হক কোনাবন পৌঁছাইয়া দেয়। শেষে আমরা চালনাতেই ডিফেন্স করি।
২-৯-৭১ তারিখে পাকসৈন্যরা নৌকাযোগে চারিদিকে জ্বালাইতে আমাদের দিকে অগ্রসর হয়। তাহারা জয়ধ্বনি দিতে দিতে আগাইয়া আসিতেছিল। তাহারা যখন আমাদের এ্যামবুশের ভিতর আসিয়া পড়ে-তখন আমরা তাহাদের উপর আক্রমণ চালাই, আমাদের তীব্র আক্রমণে তাহাদের তিনখানা নৌকা ডুবিয়া যায়। বহু পাকসৈন্য নিহত হয়। শেষে তাহারা আর্টিলারীর সাহায্যে আমাদের উপর ভীষণ ফায়ার চালায়। এই আক্রমণে আমাদের পক্ষে আজাহার আলী শহীদ ও সিপাই আবদুস সাত্তার আহত হন। সেখানে সারাদিন রাত্রি থাকার পর ৩-৯-৭১ তারিখে আমরা আমাদের ডিফেন্স তুলিয়া কোনাবন চলিয়া যাই।
১৫-১০-৭১ তারিখে আমাদের প্রায় ১ ব্যাটালিয়নের মত মুক্তিযোদ্ধা শালদা নদী পাক ডিফেন্স তোলার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু পারে নাই। তাহাদের পিছনে তখন মুজিব ব্যাটারী ছিল। শেষে তাহারা অকৃতকার্য হইয়া পিছনের দিকে চলিয়া যায়। ঐ সময় আমার অসুখ থাকায় আমি তাহাদের সহিত যোগদান করিতে পারি নাই।
১৮-১০-৭১ তারিখে বিকালে আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ বাজারের পশ্চিম দিকে দেউশ নামক জায়গায় ডিফেন্স লই। ১৮-১০-৭১ তারিখে ১ কোম্পানী পাকসৈন্য অন্যদিকে যাওয়ার পথে আমাদের ডিফেন্সের