বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
207

 এই ঘাঁটিগুলোর প্রায় সবগুলোতেই কিছুসংখ্যক নিয়মিত বাহিনীর লোক ছিল এবং বাকি সব ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলা ছিল। এই সমস্ত ঘাঁটিগুলোর সাথে হেডকোয়ার্টারের নিয়মিত যোগযোগ রক্ষা করার জন্য লোক (রানার) নিয়োগ করা হয়েছিল। এ সমস্ত “রানার” ছাড়াও রায়পুরা এবং মনোহরদীতে অবস্থিত দুটো অয়ারলেস সেট-এর মাধ্যমে হেডকোয়ার্টারে খবরাখবর দেওয়া হত।

 প্রত্যেকটি গেরিলা বেইস-এ দু'জন করে রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিল, যারা গেরিলাদের রাজনৈতিক নির্দেশাবলী দিত। এই রাজনৈতিক উপদেষ্টারা প্রত্যেক মাসেই আমার হেডকোয়ার্টারে এসে যোগাযোগ করত।

 ভিতরে অবস্থিত ঘাঁটিগুলোর গেরিলা এবং নিয়মিত বাহিনীর বেতন-ভাতা রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং ঘাঁটির কমাণ্ডারদের মাধ্যমে পাঠানো হত। তারা প্রতি মাসে এসে বিল দিয়ে যেত এবং পরের মাসে টাকা নিয়ে যেত।

 আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের গেরিলা তৎপরতা এত তীব্র এবং ব্যাপক হয়ে উঠেছিল যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকেরা ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করতে সাহস পেত না। যে সকল স্থানে তাদের ঘাঁটি ছিল সে সমস্ত ঘাঁটির চারিদিকে বাঙালী রাজাকার দিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় বেষ্টনী তৈরী করে রাখতো যাতে ঘাঁটি আক্রান্ত হলে প্রথমেই বাঙালীদের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয় এবং তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। এতে বোঝা যায় যে, পাক সেনাবাহিনী মনোবল বেশ ভেঙ্গে পড়েছিল। তারা এমন ভীত সন্ত্রস্ত ছিল যে, ওসব ঘাঁটির নিকটবর্তী এলাকায় কোন প্রকার আওয়াজ বা শব্দ শুনলেই তারা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে চিৎকার করে বলে উঠত মুক্তি আগেয়া’।

 গাড়ি, ট্রেন, স্টীমার এবং লঞ্চ চলাচল এক রকম বন্ধই ছিল। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ স্বাভাবিক আকারে কখনো আসতে পারেনি। এমনকি বড় বড় শহরে, যেখানে পাকিস্তানীদের নিয়ন্ত্রণ ছিল সেখানেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিল না বললেই চলে। অপরপক্ষে যেসব এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোন বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি।

 আগস্ট মাসের শেষের দিকে মুজিব নগর হেডকোয়ার্টার থেকে আমার কাছে এক নির্দেশ এসেছিল যে গেরিলা বাহিনীর সাথে সাথে নিয়মিত বাহিনী গড়ে তোলার জন্য যেন প্রস্তুত হই। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম তারিখে আমি আমার সেক্টরকে (৩নং সেক্টরকে) তিন ভাগে ভাগ করি এবং আমার বাহিনীকে পুনর্গঠিত করি। ৩নং সেক্টরে যেসব লোক ছিল তাদের দ্বারাই এটা করা হয়। ৩নং সেক্টরে, ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এবং ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এই দুই বাহিনীতে পরিণত করা হয়। একটি হল ৩নং সেক্টর বাহিনী যা দশটি কোম্পানী দ্বারা গঠিত। সেক্টর হেডকোয়ার্টার থাকে হেজামারাতে, আর একটি 'এস' ফোর্স হেডকোয়ার্টার স্থাপিত হয় ফটিকছড়াতে। এই ‘এস' ফোর্স হেডকোয়ার্টারের অধীনে ২ এবং ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ছিল।

এসব হেডকোয়ার্টার এবং ব্যাটালিয়নে নিম্নলিখিত অফিসাররা ছিলঃ

 ১। ‘এস' ফোর্স হেডকোয়ার্টারঃ ক) কমাণ্ডার - লেঃ কর্নেল সফিউল্লাহ। খ) বি, এম, (বিগ্রেড মেজর)- ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমান। গ) ডি, কিউ- ক্যাপ্টেন আবুল হোসেন। ঘ) সিগন্যাল অফিসার- ফ্লাইট লেঃ রউফ।

 ২। ২ ইস্ট বেঙ্গলঃ ক) কমাণ্ডিং অফিসার- মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী। খ) কোম্পানী কমাণ্ডার গণ হলেনঃ এ কোম্পানী- মেজর মতিউর রহমান এবং লেঃ আনিসুল হাসান, বি কোম্পানী- লেঃ বদিউজ্জামান এবং লেঃ সেলিম মোঃ কামরুল হাসান, সি কোম্পানী- লেঃ মোহাম্মদ ইব্রাহীম, ডি কোম্পানী- লেঃ গোলাম হেলাল মোরশেদ। গ) এডজুট্যাণ্ট- লেফটেন্যাণ্ট মোহাম্মদ সাঈদ। ঘ) মেডিক্যাল অফিসার- লেফটেন্যাণ্ট আবুল হোসেন।

 ৩। ১১ ইস্ট বেঙ্গলঃ ক) কমাণ্ডিং অফিসার- মেজর মোহাম্মদ নাসিম। খ) কোম্পানী কমাণ্ডারগণঃ বি কোম্পানী- মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়া এবং লেঃ আবুল হোসেন, ডি কোম্পানী- লেফটেন্যাণ্ট নাসের, সি