পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
209

আমাদের সৈনিকদের উপর আক্রমণ চালায় এবং এতে আমাদের সৈনিকদের পিছু আসতে বাধ্য হয়। ২রা ডিসেম্বর পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে রেলওয়ে স্টেশন আমরা পুনর্দখল করি। কিন্তু রেলওয়ে স্টেশনের সম্মুখভাবে পাকিস্তানীদের বাঙ্কার এতো মজবুত ছিল যে সম্পূর্ণ এলাকা স্বল্পসংখ্যক সৈন্য এবং স্বল্প পরিমাণ ভারী 'অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দখল খুবই কষ্টকর ছিল। ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত এভাবে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন আমাদের আয়ত্তাধীন থাকে এবং এখানেই দুই পক্ষের যুদ্ধ চলে। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতের ৫৭ মাউণ্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে আমাদের সাথে মিলিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়াতে দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে আখাউড়াকে অবরোধ করে। অবশেষে পাক বাহিনী ৫ই ডিসেম্বর আখাউড়াতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমাণ্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে আমাদের যে সব সৈনিক শহীদ হয়েছেন তাঁরা হলেন। ১। নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান। ২। সিপাহী আমীর হোসেন। ৩। লেফটেন্যাণ্ট বদিউজ্জামান। ৪। সিপাহী রুহুল আমীন। ৫। সিপাহী শাহাব উদ্দিন। ৬। সিপাহী মুস্তাফিজুর রহমান। আখাউড়া পতনের পর কিছুসংখ্যক সৈন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পলায়নের সময় বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্য আমদের হাতে নিহত হয় এবং ধরা পড়ে।

 এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে অতি সত্বর আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ আক্রমণ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই দিক থেকে পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একদিক হল ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দক্ষিণ দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এবং অপর দিক হলো উত্তর দিক থেকে সিলেট সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পর্যন্ত। ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন এবং উজাস্যিা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক দিয়ে অগ্রসর হবে এবং আমার এস ফোর্স সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক দিয়ে অগ্রসর হবে। ৫ই ডিসেম্বর আমি আমার ফোর্সকে নিম্নলিখিত নির্দেশ দেইঃ

 ৫ই ডিসেম্বর রাতে আমাদের যাত্রা শুরু হবে এবং বাহিনীর সামনে থাকবে ১১ ইস্ট বেঙ্গল। আর ২য় ইস্ট বেঙ্গল তাদের অনুসরণ করবে। তিন নং সেক্টরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে সে যেন তার সেক্টর কোম্পানী নিয়ে তেলিপাড়া ও মনতলা দখল করে নেয়। তাদের (১১ ইস্ট বেঙ্গলকে) যে কাজ দেয়া হয়েছিল তা হল চান্দুরার উত্তরাংশে একটি রোড ব্লক তৈরী করা যাতে সিলেট থেকে পশ্চাদপসারণকারীরা এ রাস্তায় না আসতে পারে। দ্বিতীয় কাজ হলো চান্দুরা থেকে সরাইল পর্যন্ত এলাকা শত্রুমুক্ত করা। এ নির্দেশ পালনের জন্য ব্যাটালিয়ান কমাণ্ডার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেনঃ

 তিনি এক কোম্পানী সৈন্য মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে চান্দুরার উত্তরাংশে রোড ব্লাক তৈরি করার জন্য পাঠিয়ে দেন এবং বাকী ব্যাটালিয়নকে চান্দুরা থেকে সরাইল পর্যন্ত এলাকা শত্রুমুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে অগ্রসর হবার আদেশ দেন। এ ব্যাটালিয়ন হরশপুর দিয়ে চান্দুরার দিকে অগ্রসর হয়। মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়ার যে কোম্পানীকে চান্দুরার উত্তরাংশে রোড ব্লক তৈরী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে কোম্পনী রোড ব্লক তৈরী করে খবর পাঠায়। তখন ব্যাটালিয়নের বাকী সব লোক চান্দুরার নিকটবর্তী এলাকা পাইকপাড়াতে ছিল। রোড ব্লক তৈরীর খবর পাবার পর ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার মেজর নাসিম ব্যাটালিয়-এর বাকী সবাইকে চান্দুরা হয়ে শাহবাজপুর সরাইল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হবার জন্য আদেশ দেন। বেলা তখন প্রায় ১২টা। অপারেশনের অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করার জন্য আমিও তখন পাইকপাড়াতে ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টারে পৌঁছি। আমার সাথে ছিল আমার রানার। এই প্রায় এক হাজার গজ পেছনে ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার এ কোম্পানীকে অনুসরণ করছিল। আমিও ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টারের সাথে সাথে অগ্রসর হই। চান্দুরাতে যে পর্যন্ত পাকিস্তানী সৈন্য ছিল তারা পশ্চাদপসরণ করে শাহবাজপুরে আস্তানা তৈরী করে। ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারকে আমি নির্দেশ দেই যে যত শীঘ্র সম্ভব শাহাবাজপুরে তিতাস নদীর উপরস্থ পুল দখল করতে, যাতে শত্রু সৈন্যরা সেটা ভেঙে দিয়ে আমাদের অগ্রগতি রোধ করতে না পারে। তাই অগ্রসরমান কোম্পানী দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে আমিও আমার রানারসহ ৮ জন লোক ছিলাম।