পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
212

মতিনকে এবং আমার বিএম ক্যাপ্টেন আজিজকে এই ব্যাটালিয়নে যোগ দিতে নির্শেদ দেই। মেজর মতিনকে ব্যাটালিয়নের কমাণ্ডার হিসেবে নিয়োগ করি।

 ৭ই ডিসেম্বর সকালে এ দুইজন অফিসার নিয়ে আমি পাইকপাড়া ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টারের উদ্দেশ্য যাত্রা করি এবং বেলা প্রায় দুটোর দিকে ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টারে পৌঁছি।

 মেজর মতিনকে নতুন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার নিয়োগ করে তাকে ব্যাটালিয়নের ভার গ্রহন করতে বলি এবং আমাদের অগ্রগতি যেন রোধ না হয় সে জন্য সামনে অগ্রসর হবার জন্য নির্দেশ দেই। বলা বহুল্য, ৬ই ডিসেম্বর আমরা ইসলামপুরের খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত থাকাতে শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর সময় মত দখল করতে না পারায় পাকবাহিনী সে পুলটি ভেঙ্গে দেয়।

 পুলটি ভেঙ্গে যাওয়াতে নদীর ওপারে পাকিস্তানী সৈন্যসংখ্যা কি পরিমাণ ছিল তা না জেনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আমি ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারকে আমি শিগগির পাক বাহিনীর আস্তানা সম্বন্ধে খবর নেওয়ার নির্দেশ দেই। ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার ব্যাটালিয়নে একেবারে নতুন এবং পৌঁছেছিল প্রায় বিকেলের দিকে। তাই তাকেও খরবাখবর নেওয়ার জন্য একটু সময় দিতে হয়েছিল। ৭ই ডিসেম্বর রাতে এক কোম্পানী সৈন্য শাহবাজপুরের দিকে পাঠানো হয় এবং রাতের মধ্যেই যখন খবর পাওয়া গেল যে সেখানে সৈন্যসংখ্যা কম তখন সে কোম্পানী নদীর অপর পার দখল করে নেয়। এ সংবাদ পাওয়া গেল ৮ই ডিসেম্বর সকালে। খবর পাবার সাথে সাথে ব্যাটালিয়নের বাকী কোম্পানী শাহবাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়।

 যে কোম্পানী ৭/৮ই ডিসেম্বর রাতে শাহবাজপুর দখল করেছিল তার অধিনায়ক ছিল মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়া। আমি ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারকে নির্দেশ দেই, মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়া যেন তার কোম্পানী নিয়ে সরাইলের দিকে অগ্রসর হয়। কোম্পানী সরাইল পর্যন্ত পাকিস্তানীদের কোন বাধা পায়নি। আমার এস ফোর্সের অগ্রভাগ যখন সরাইলে পৌঁছে তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫৭ মাউণ্টেন ডিভিশন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পৌঁছে গিয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শত্রু না থাকাতে কোন যুদ্ধ হয়নি। পাকবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সরাইল ত্যাগ করে আগঞ্জ এবং ভৈরববজারে একত্রিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী আশুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আমি সময় নষ্ট না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর না হয়ে আমার ফোর্সকে নির্দেশ দেই আশুগঞ্জের দিকে রওনা হবার জন্য। ৮ই ডিসেম্বর বিকাল পর্যন্ত আমার ফোর্সকে আজমপুর এবং দুর্গাপুর পৌঁছে। আমার ফোর্স-এর অগ্রভাগে তখন পর্যন্ত ছিল ১১ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট, দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ঐ দিন ছিল শাহবাজপুরে।

 আমার হেডকোয়ার্টার আমি তৈরী করে সরাইলে, যেখানে ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ২কোম্পানী সৈন্য ছিল। ১১ ইস্ট বেঙ্গলের বাকী দুই কোম্পানী সৈন্য আজমপুর এবং দুর্গাপুরে ছিল। শাহবাজপুরে কোম্পানী নেতৃত্ব দিয়েছিল মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়া এবং দুর্গাপুরে লে. নাসের। আমার ফোর্স যখন আজমপুর এবং দুর্গাপুরে অবস্থান করছিল তখন ভরতীয় ৩১১ মাউণ্টেন ডিভিশনের তিনটি ব্যাটালিয়ন নিম্নলিখিত স্থানে মোতায়েন ছিল ১০, বিহার রেজিমেণ্ট দুর্গাপুরের দক্ষিণে, ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট তালশহর এবং দুর্গাপুরের মাঝামাঝি জায়গায়, ৪ গার্ড তালশহরে এবং ৭৩ মাউণ্টেন ব্রিগেড ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে।

 আশুগঞ্জের সন্নিকটবর্তী হবার পর আমরা সামনে অগ্রসর হতে পারছিলাম না। কারণ পাক বাহিনী ভৈরব বাজার থেকে আমাদের উপর দূরপাল্লার কামানের গোলাবর্ষণ করছিল অবিশ্রান্তভাবে। কিন্তু ভারতীয় দূর পাল্লার কামান তখন পর্যন্ত আগরতলা এবং সিঙ্গারবিলের আশপাশে ছিল। আগরতলা এবং সিংগারবিল থেকে তাদের গোলা ভৈরব পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিল না। তাই আমাদের অগ্রগতিতে বাধা পড়ে। ৮ই ডিসেম্বর এভাবে অতিবাহিত হয়। ৯ই ডিসেম্বর আমার সৈনিকরা আজমপুর এবং দুর্গাপুর থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আশুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ভারতীয় ৩১১ মাউণ্টেন ব্রিগেডও অনুরুপভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর