পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
223

সাক্ষাৎকারঃ মেজর দোস্ত মোহাম্মদ সিকদার[১]

 আমাকে আলফা কোম্পানীতে পোস্টিং করা হলো। কোম্পানীর কমাণ্ডার ছিলেন মেজর নাসিম, যিনি এখন ব্রিগেড কমাণ্ডার। এখনো তিনিই আমার ব্রিগেড কমাণ্ডার তাঁর সাথে আমি গেলাম। আমি তাঁর কোম্পানীতে কোম্পনী অফিসার হিসাবে কাজ করতাম। একটা বড় রকমের অপারেশনের জন্য কোম্পানীগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই আমি গিয়ে উপস্থিত হই। ব্রিগেডিয়ার নাসিম আমাকে নিয়ে কয়েক জায়গায় ঘরোঘুরি করেছেন। আমার সাথে তেমন কোন আলোচনা করেন নাই। তবে কয়েকটা মহড়া দেখেছি তার মধ্যে একটা আমার মনে পড়ে খুব ইনটেলিজেন্স মহড়া, যেটা ইণ্ডিয়ায় হয়েছিল। মানুষ কিভাবে চট করে ফক্স হোল তৈরী করে নিজেকে লুকিয়ে রেখে শত্রুপক্ষের সাথে লড়তে, এটা তারই মহড়া। তিনি বললেন, এটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি তাড়াতাড়ি নিজেকে রক্ষা করার জন্য। কেননা মাটিতে ট্রেঞ্চ করতে সাধারণত বেশ সময় লাগে কিন্তু ফক্স হোল পদ্ধিতি চট করে করা যায়। তাঁরা কয়েকটা সেকশন মিলে একটা প্লাটুন তৈরী করেছিলেন আমি সেটা বুঝতেই পারিনী। এটাতে নিজেকে আত্মরক্ষা করা যায়। আবার শত্রু পক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এসব দেখে আমি এতে যোগদান করি। আমাদের একটা টার্গেট ছিল, ঠিক সেই টার্গেটই আমরা আক্রমণ চালাই। টার্গেট ছিল আগরতলা উত্তর দিকে ধর্মঘর বলে একটা জায়গা ছিল, তারপর বামুটিয়া। এরপর ঠিক জায়গাগুলোর নাম মনে নেই, তবে বামুটিয়া ঐ সব এলাকার কাছাকাছি।

 প্রশ্নঃ ওখানে পাকিস্তানী স্ট্রেনথ কত ছিল?

 উত্তরঃ ওখানে শুধু নিয়মিত আর্মি ছিল না, মিক্সড ছিল- রাজাকার মিলে ছিল। সংখ্যা এক কোম্পানী। মাসটা ছিল অক্টোবরের দিকে। আমাদের প্ল্যানে ছিল যে সেখানে কিছু আর্টিলারী বোমবার্ডমেণ্ট পাব। সেকেণ্ড বেঙ্গলের আলফা কোম্পানী এবং ডেলটা কোম্পানী এই আপারেশনে অংশ নেয়। আলফা কোম্পানী কমাার ছিলেন মেজর নাসিম এবং ডেলটা কোম্পানী কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন হেলাল মুর্শেদ।

 আমরা এদিক থেকে এক কোম্পানী যাই এবং আরেক দিক থেকে ক্যাপ্টেন কোম্পানী নিয়ে এলে এক সাথে মিলিত হই। মাঝখানে থেকে ইনডিয়ান আর্মি ঢুকে এডভান্স করে। ইতিপূর্বে আর্টিলারী ফায়ার হয়। আমরা পিছছে থাকি। আমরা টার্গেট থেকে ১৫০০ গজ দূরে ছিলাম। মেজর নাসিমের পরামর্শে সেখানে যে টেলিফোন লাইন ছিল সেটা কেটে দেওয়া হয়। নিশ্চয় সেটা ঠিক করবার জন্য পাকিস্তানীরা আসবে। ঠিক তাই কয়েকজন পাকসেনা (এক সেকশন মত) রাইফেল নিয়ে এদিকে আসছিল কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের থেকে একজন আনকণ্ট্রোল হয়ে ফায়ার করে ফেলে। এটা প্রিম্যাচিউর টার্গেট হয়ে গিয়েছিল। আমরা ৬/৭ জন মারতে পেরেছিলাম আর কিছু আহত হয়েছিল, কেউ কেউ সরে পড়েছিল। সাথে সাথে বোমবার্ডমেণ্ট শুরু হয়ে গেছে। আমরা মারতে চাইনি জীবিত ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা বোমবার্ডমেণ্ট লিফট আপ হবার পরে আস্তে আস্তে ফর্সা হতে লাগলো। ফর্সা হবার পরে আমরা অর্ডার পেলাম আমাদের পুল আউট করতে হবে।

 প্রশ্নঃ আপনারা আর চার্জ করেননি?

 উত্তরঃ আমরা আর চার্জ করিনি। এ্যাটাক করিনি। আমার মনে হয় এ্যাটাকিংটা এবানডেণ্ট করে ফেললো। কেনা সাধারণ কেউ তো বলে না কোন কিছুতে হেরে গেলে। যেহেতু আমরা ছিলাম বাঙ্গালী ফোর্স আর তারা ছিলেন ইনডিয়ান ফোর্স, এটা একটা লজ্জার ব্যাপার। আমরা দেখেছি আমাদের পাশ দিয়ে তারা চলে এসেছে। তাতে বোঝা যায় তারা অবজকেটিভ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। আমরা বুঝতে পারলাম, এই অপারেশনে তারা কৃতকার্য হয়নি। তারা যখন চলে যাচ্ছিল আমাদের পাশ দিয়ে তখন বলছিল ভাই এটা তোমাদেরই দেশ। যত রকম ঝুঁকি নেয়ার তোমরা নাও, আমরা পারবো না- এই বলে চলে যাচ্ছিল। তারা যাবার পর আমরা পুল


  1. ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে। সাক্ষাৎকারটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও মুদ্রণ প্রকল্প ৮-১০-১৯৭৯ তারিখে গৃহীত।