উত্তরঃ 281 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড কৈলাশ শহর জায়গায়টা কি বাংলাদেশের মধ্যেই? না, কৈলাশ শহরটি একটি ইণ্ডিয়ান টাউন। টাউনটার ঠিক বর্ডারটা হলো বাংলাদেশের সাথে। এটা ঠিক শমশেরনগরের অপোজিটে। আর আমাদের ঠিক অপোজিটে পাহাড়ের উপরে ছিল চাতলাপুর বিওপি। আচ্ছা, আপনি যখন সাব-সেক্টরে আসলেন তখন সাব সেক্টরের স্ট্রেনথ কত ছিল? তখন আমার কছে ৬টা কোম্পানী ছিল। আমাকে প্রথম টাস্ক দেওয়া হলো ডিফেন্সটা অরগানাইজ করতে। কারণ বার বার ওর উপরে পাকিস্তান আর্মির এ্যাটাক আসছে। একবার ওর আবার নিয়েও গিয়েছিল। তারপর আবার রিক্যাপচার করা হয়েছিল। আমি ডিফেন্সটা রিঅরগানাইজ করলাম। কারণ এটাই আমাদের বলতে গেলে বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা ছিল, তখনকার দিনে সিলেট সেক্টরে বাংলাদেশের আর কোন জায়গা ছিল না। আমার সেক্টর কমাণ্ডার পার্সোনেলি আমাকে বলতেন তুমি এই জায়গাটা কোনক্রমেই ছাড়বে না। ওটা আমার দায়িত্ব ছিল। এছাড়া বিভিন্ন অপারেশন করার জন্য মৌলভীবাজারের দিকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। আমি প্রথম অপারেশন করি ওখান থেকে একটু আগে একটি জায়গা আছে তার নাম হলো মনু ব্রীজ, তার কাছে একটি স্কুল আছে, ঐ স্কুলের ওখানে আমরা পেট্রোলিং বসালাম। ওটা কোন মাসে ? ওটা হলো অক্টোবরের লাষ্টের দিকে। পেট্রোলিং-এ গেলাম। ট্রেনিং থেকে আসার সময় আমি কিছু এক্সপ্লোসিভ নিয়েছিলাম। আমি আসার সময় ঐ এক্সপ্লোসিভ ও একটা বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম। ফ্ল্যাগ উপরে লাগালাম, নীচে বাঁশের ভিতরে এক্সপ্লোসিভ দিয়ে বাঁশের নীচে রিলিজ সুইচ দিয়ে ওখানে লাগিয়ে আসছিলাম। ভাবলাম সকালে যদি ওরা আসে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ দেখলেই ওরা উঠাতে আসবে। উঠাতে আসলে আমার রিলিজ সুইচটা যদি রিলিজ হয়ে যায় ওখানে একটা এক্সপ্লোশান হবে এবং হয়েছিলও। পরের দিন যখন ওদের পেট্রোল এসে ফ্ল্যাগটা নামাতে গেছে তখন এক্সপ্লোশান হয়। এটা ছিল আমার ফাস্ট অপারেশন। এর পরে আমাকে দেয়া হলো একটি জিটারিং অপারেশন। এটা হবে অক্টোবরের ৩০ তারিখ। আমাদের সামনে ওদের যে ডিফেন্সটা ছিল ওদের এই ডিফেন্স থেকে খুব বেশী ফায়ারিং আসতো। প্রশ্নঃডিফেন্সটা কোথায়? উত্তরঃ চাতলাপুর বি-ও-পি। ওখান থেকে খুব বেশী ফায়ারিং আসতো, আমাদের কোন মুভমেন্ট হলে ফায়ারিং হতো। ওদেরকে শায়েস্তা করার জন্য আমাকে জিটারিং অপারেশনে পাঠানো হলো। আমার ষ্ট্রেনথ ছিল প্রায় এক প্লাটুন এবং আর্টিলার সাপোর্ট নিয়ে ওটা আমি রেইড করেছিলাম। ওদের দুই নম্বর এবং তিন নম্বর প্লাটুন থেকে যে ফায়ার আসছিল ঐ ফায়ারের জন্য আমরা বেশীক্ষণ টিকতে পারিনি। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ভিতর ঐ জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এরপরে আমরা বিভিন্ন পেট্রোলিং ও ছোটখাটো এ্যামবুশ করেছি রাজাকারদের উপরে। শমশেরনগর থেকে মনুর দিকে কুলাউড়ার দিকে যেতে যে রেললাইনটা পড়ে ওর ভিতরে একটা দুইটা এ্যমবুশ করেছি। লাষ্টে আমাকে টাস্ক দেওয়া হয় নভেম্বরের ২৯ তারিখে। শমশেরনগরে এ্যাটাক হবে, সেই এ্যাটাকের জন্য শমশেরনগর এবং মৌলভীবাজরের ভিতরে রাস্তাটা ব্লক করতে হবে। শমশেরনগর স্টেশন থেকে প্রায় চার-পাঁচ মাইল আগে একটা দীঘি আছে রাস্তার উপরে, ওই দীঘির উপরে আমাকে পজিশন নিতে বলা হলো। আমার সাথে ছিল ইণ্ডিয়ান আর্মির একটা কোম্পানী। আমরা ২টা পর্যন্ত ওখানে পজিশন নিলাম। এবং পুরো দিন রোডটা কাট অফ করে রাখলাম। সকালের দিকে আমাদের অপারেশন ভালোই ছিল। সন্ধার দিকে
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩০৬
অবয়ব