পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

287 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড উঃ মাটিতে। কখনো গাছতলায়, কখনো বাঁশের খাঁচায়, এমনি মাচাং বানিয়ে ওপরে খড় দিয়ে ঢেকে দিতাম। সাধারণত রাতে ঘুমানো সম্ভব হতো না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দুটি অপারেশন-এর ফাঁকে দিনের বেলায় কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতাম। সাধরণতঃ সৈনিকের পোশাকেই ঘুমিয়ে পড়তাম। সৈনিকের পোশাক বলতে একটি খাঁকি হাফপ্যান্ট এবং একজোড়া বুটই আমার পরনে থাকত। এ প্রসঙ্গে আপনাকে একটি ঘটনা বলি। আমি রামগড় থেকে সীমান্ত অতিক্রম করার পর (২রা মে, ’৭১ থেকে জুন, ৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে) জেনারেল ওসমানী সাহেব ওখানে গিয়েছিলেন আমাদের দেখতে। আমি তখন অপারেশনে ব্যস্ত। আমার পরনে শুধু একটি খাঁকি হাফপ্যান্ট এবং পায়ে একজোড়া বুট ছিল। গায়ে কোন গেঞ্জি পর্যন্ত ছিল না। মাথা থেকে সমস্ত শরীর ছিল ধুলাময়। খবর পেয়ে ঐ অবস্থায়ই জেনারেল সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। এই একটি মাত্র ঘটনা থেকেই অনুমান করতে পারেন কি অবস্থায় আমরা যুদ্ধ করেছি। প্রঃ রণাঙ্গনে একনাগাড়ে কত সময় পর্যন্ত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন? উঃ তিনদিন তিনরাত। প্রঃ কোথায় ? উঃ রামগড়ের উল্টা দিকে সাবরুম নামক স্থানে। মে,’৭১ থেকে জুন ’৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে। প্ৰঃ সবচাইতে ভয়াবহ যুদ্ধ আপনি কোথায় করেছেন? উঃ সবগুলিই ভয়াবহ, সবগুলিই লোমহর্ষক। প্রঃ আপনি অত্যন্ত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গিয়েছেন, এমন দু’একটি ঘটনা জানতে চাই। উঃ এটা একবার হয়নি। বহুবার হয়েছে। এটা বলে শেষ করা যাবে না। বহুবার পাকিস্তানী সৈন্যরা আমার নাকের ডগা দিয়ে অতিক্রম করে গিয়েছে, ধানক্ষেতে আমি শুয়ে রয়েছি, হামাগুড়ি দিয়ে কিংবা বুকে ভর দিয়ে আমাকে বের হয়ে আসতে হয়েছে। বহুবার ঘেরাওর ভিতর পড়ে গিয়েছিলাম, আবার বের হয়ে গিয়েছি। এই যুদ্ধে একটা বিরাট প্রমাণ, বিরাট বিশ্বাস আল্লাহর ওপর আমার বেড়ে গিয়েছে; আমি দেখলাম যে যার মৃত্যু নেই, সে মরতে পারে না- সে যেমন অবস্থায় থাকুক না কেন বেঁচে আসবে। অনেক সময় দেখা গিয়েছে সম্মুখের লোক মারা যায়নি, অথচ পেছনের লোক বেশী মারা গিয়েছে।