পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

288 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড ১০। ৫নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধ সম্পর্কে অন্যান্যের বিবরণ | .......... মে-ডিসেম্বর ১৯৭১ সাক্ষাৎকারঃ মেজর তাহেরউদ্দিন আখঞ্জি* ১৯৭১-এর ৯ই অক্টোবরে আমি কমিশন পেলাম। ৯ই অক্টোবরে কমিশন পাওয়ার পরে সেখান খেকে আমাদেরকে পোস্টিং করা হলো বিভিন্ন সেক্টর, সাব-সেক্টর এবং ব্যাটালিয়নে এবং সে অনুসারে আমাকেও পোস্টিং করা হলো ৫ নম্বর সেক্টরে। আমার সাথে ছিলেন মেজর খালেদ, তখন ছিলেন লেফটেন্যান্ট আমরা দু’জন ৫ নম্বর সেক্টরে আসার জন্য আমাদেরকে মুভমেন্ট অর্ডার দেওয়া হলো। আর বলা হলো আমাদের ১১ তারিখ চলে যেতে। ৫নং সেক্টর বলতে ছিল একটি রেষ্ট হাউস। ওটার সামনে আমদেরকে নামিয়ে দিয়ে বলা হলো যে, এটা আপনাদের ৫নং সেক্টর। আমরা সেখানে গেলাম। একটা দরজায় নক করলাম। এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন। তার সাথে পরিচয় হলো। তিনি বাংলাদেশের একজন এমপি- নামটা ভুলে গেছি। তিনি সিলেট এলাকার একজন এমপি। ঐ রুমের মধ্যে আরো তিনজন এমপি ছিলেন। তাদের সাথে পরিচয় হলো। আমাদের পরিচয় দেওয়ার পরে তারা আঙ্গুল দিয়ে পাশের রুম দেখিয়ে দিলেন। পাশের রুমে দরজায় নক করার পরে এক ভদ্রমহিলা বের হলো এবং পরিচয় দিলেন যে, উনি মীসেস শওকত। আমরা আমাদের পরিচয় দিলাম। ৫নং সেক্টর কমাণ্ডার তখন অবশ্য ছিলেন না। ছাতকে একটি অপারেশনে গিয়েছেন। মিসেস শওকত আমাদেরকে রিসিভ করলেন। এবং সেখানে আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। প্রায় ৫ দিন থাকার পরে আমরা রাতের বেলা দেখলাম জেনারেল (তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল) শওকত আসছেন। তার পরনে একটি হাফপ্যান্ট আর জীনসের কালো একটা হাফশার্ট। মুখে বেশ লম্বা দাড়ি হয়ে গেছে। যাই হোক, তার সাথে মিসেস শওকত আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরের দিন সকালে তিনি একটা গাড়ীতে করে আমাদের দু’জনকে একটা সাবসেক্টরে নিয়ে গেলেন। ঐ সাব-সেক্টরের নাম ছিল শেলা সাব-সেক্টর। শেলা সাব-সেক্টর পর্যন্ত গাড়ী যেতো। সেখানে থেকে আমাদেরকে পদব্রজে তিনি নিয়ে আসলেন ভোলাগঞ্জ সাবসেক্টরে। আসার পর বললেন, এটা তোমাদের সাব-সেক্টর। এখানে তোমরা দু’জন থাকবে। এই সাব-সেক্টরে দেখলাম প্রায় দেড় হাজারছেলে। এবং এই দেড় হাজার ছেলের তখন কোন কাজ নাই। একটা কোম্পানী ছিল প্রায় ১০০ জন লোকের। আর বাকী সব ছিল এফ-এফ, একজন সিভিল অফিসারের অধীনে, নাম আলমগীর। তিনি সিএণ্ডবি'র একজন ইঞ্জিনিয়ার। তার কাছ থেকে আমাকে চার্জ বুঝে নেয়ার জন্য বলা হলো। নাম্বারে আমি সিনিয়র ছিলাম মেজর খালেদের (তখন লেফটেন্যান্ট) চেয়ে। তাই সাব-সেক্টর কমাণ্ডার হিসেবে চার্জ দেওয়া হয়। আমি আমগীরের কাছ থেকে সাব-সেক্টর কমাণ্ডার হিসাবে চার্জ নিলাম। চার্জ নিয়ে অরগানাইজ করলাম। অরগানাইজ করার পর জেনারেল শওকত আমাদের এই সাব-সেক্টরে তিন দিন ছিলেন। এখানে কোম্পানী। আর একটা কোম্পানী ছিল এল এফ কোম্পানী মোট ছয়টি কোম্পানীর চার্জ নিলাম আমি। অপারেশন এরিয়া সম্বন্ধে জেনারেল শওকত আমাকে ব্রিফ করে দিলেন। অপারেশন এরিয়াটা ছিল বিরাট, যার জন্য উনি একটা সাব জোন ভাগ করলেন। সাব জোন এর মধ্যে তিনি তিনটা কোম্পানী দিয়ে মেজর খালেদকে ইনচার্জ করে তার দায়িত্ব দিলেন। আর বাকী কোম্পানীগুলোর দায়িত্ব আমাকে দিলেন। রেশন, সাপ্লাই ইত্যাদি কাজের জন্য রইলেন আলমগীর আগে যিনি সাব সেক্টর কমাণ্ডার হিসাবে কাজ করতেন। এরপর জেনারেল শওকত চলে

  • ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত। সাক্ষাৎকারটি ১০-১-৮০ তারিখে প্রকল্প কর্তৃক গৃহীত।