পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
290

সৈন্যরা পালিয়ে যায়। আমি দ্রুত লামনিগাঁও পৌঁছে পাকিস্তানীদের উপর আক্রমণ করি। এই আক্রমণে পাকিস্তানীরা লামনিগাঁও ছাড়তে বাধ্য হয়। লেঃ হোসেন এবং এলাকায় আমাদের কতৃত্ব বজায় রেখেছিলাম।

 এরপর আমার বাহিনী নিয়ে গোরীনগর দখল করে বিমান বন্দরের দিকে অগ্রসর হতে আরম্ভ করি। শেলা সাব-সেক্টর ট্রুপসও ছাতকের উপর আক্রমণ শুরু করে। বালাঠ সাব-সেক্টর বাহিনী সুনামগঞ্জ শহরের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলে। বড়ছড়া সাব-সেক্টর বাহিনীও ইতিমধ্যে সাচনা থেকে ধীরাই পর্যন্ত মুক্ত করে ফেলে।

 ৪ঠা ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর এক ডিভিশন সৈন্য সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে করিমগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার হয়ে পূর্বদিক থেকে সিলেটের পথে অগ্রসর হতে থাকে। অপরদিকে উত্তর এবং পশ্চিম দিক থেকে ৫নং সেক্টর ট্রুপস সিলেটের পথে অগ্রসর হতে থাকে। বালাট সাব-সেক্টর ট্রুপস ৬ই ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহর দখল করে নেয়। ঐ দিন মুক্তিবাহিনী ছাতকের উপরও তীব্রভাবে আক্রমণ চালায়। সেক্টর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল শওকত ৩য় বেঙ্গলের ২টি কোম্পানী এবং শেলা সাব-সেক্টর ট্রুপস নিয়ে ছাতক আক্রমণ করেন। ৭ই ডিসেম্বর ৮টায় ছাতক শহর মুক্ত হয়। পাকসেনারা পালিয়ে গোবিন্দগঞ্জে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে মেজর সাফায়াত জামিল ৩য় বেঙ্গলের ২টি কোম্পানী নিয়ে ডাউকি সাব-সেক্টর ট্রপস সহ রাধানগর নিয়ন্ত্রণে এনে গোয়াইনঘাট হয়ে সা লুটিকর বিমান বন্দরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।

 ৯ই ডিসেম্বর সেক্টর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল শওকত গোবিন্দগঞ্জ আক্রমণ করলেন। পাকসেনারা গোবিন্দগঞ্জ ছেড়ে নদী পেরিয়ে লামাকাজীতে প্রতিরক্ষাবৃহ্য গড়ে তোলে। কর্নেল শওকত মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিলের কাছে বিমান সাহায্য চান। ১২ই ডিসেম্বর ভারতীয় ৪টি মিগ বিমান লামাকাজীতে পাক অবস্থানের উপর বোমাবর্ষণ করে। এর কয়েকদিন পরই সিলেটে পাকসেনারা যৌথ কমাণ্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

সাক্ষাৎকারঃ মেজর এস এম খালেদ[১]

 ১০ই অক্টোবর তারিখ থেকে বিভিন্ন সেক্টরে আমাদের ডেসপ্যাচ করা শুরু হয়। আমাকে দেয়া হলো সেক্টর নং পাঁচ-এ। কমাণ্ডার ছিলেন তৎকারীন কর্নেল মীর শওকত আলী- এখন মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী বীরোত্তম পিএসসি। অক্টোবরের চৌদ্দ কি পনেরো তারিখ আমি পাঁচ নং সেক্টরে হাজির হলাম। ছাতক আগেই দখল করা হয়েছিল, তৃতীয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের নেতৃত্বে দুটো ফ্রিডম ফাইটার ও রেগুলার ফাইটার কোম্পানী নিয়ে সম্ভবত। পাকিস্তানী সৈন্য এক ব্রিগেড গিয়ে ঘেরাও করে ফেলায় ছাতক থেকে উইথড্র করতে হয়েছে। ঠিক সেই সময়টায় আমি সাব-সেক্টরে জয়েন করি। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন অফিসার ছিলেন- লেঃ রউফ ও লেঃ মাহবুব। আমরা এই তিনজন একত্রেই সম্ভবত শিলংয়ে গিয়েছিলাম। শিলং থেকে জেনারেল শওকত আমাদের রিসিভ করে নিয়ে গেলেন পাথরঘাটা। সেখানে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল কোম্পানী তখন একটা অপারেশন করছিল। এরপর আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় সাব-সেক্টর ভোলাগঞ্জে সেখানে তখন ছিলেন অনারারি লেফটেন্যাণ্ট এম এ এম আলমগীর। তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। সাব-সেক্টরের এডমিনিস্ট্রেশন দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। আমি আলমগীর সাহেবের কাছ থেকে অপারেশন কমাণ্ড নিয়ে নিলাম। পরবর্তী পর্যায়ে ৩১ তারিখে তাহেরউদ্দিন আখঞ্জি এলেন। সাব-সেক্টরকে তখন দু'ভাগে ভাগ করা হয়-ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন। বাউণ্ডারী রাখা হয়েছিল গৌরীনগর রোডটাকে-সেটার পূর্বদিক আমার নেতৃত্বে ও পশ্চিমদিক তাহেরউদ্দিন আখঞ্জির। তখন পূর্বদিকটায় ডিসকিবাড়ি বলে জায়গায় একটা প্লাটুন ছিল, সেখানে জয়েন করে প্লাটুনটাকে আরো পূর্বে ভেদেরগাঁও-এ নিয়ে গেলাম। ওখানে বসে ছোট ছোট অপারেশনের কাজ করতাম, যেমন রাজাকারদের আক্রমণ করা ও পাকসেনাদের যাতায়াত পথে গ্রামবুশ করা। স্বল্পসংখ্যক সৈন্যের জন্যে আমার অপারেশন ছিল সীমাবদ্ধ।


  1. ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত। সাক্সাৎকারটি ১৪-১-৮০ তারিখে প্রকল্প কর্তৃক গৃহীত।