পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
321

 ২৮শে নভেম্বর সম্মিলিত বাহিনী নাগেশ্বরী ও বেপারীহাট মুক্ত করে। বেপারীহাট সংঘর্ষে সিপাহী এম-এফ আলী আকবর (৫০৭১২) এবং সিপাহী এম-এফ আবুল হোসেন (৫০৮৫৩) নিহত হন। এর পর পরই ধরলা নদীর উত্তর তীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত হয়।

মোঃ নূরুজ্জামান
বাংলাদেশ রাইফেলস
১০ম শাখা, রংপুর
১৫-৭-৭৮

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল মতিউর রহমান[১]

 আমরা দিল্লী থেকে কলকাতাতে ফ্লাই করি মে মাসে। তারপর আমরা বাংলাদেশের ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারে আসি। সেখানে নুরকে নিযুক্ত করা হলো এ-ডি-সি টু সি-ইন-সি। আমি এবং ডালিম- দু'জনকেই সি-ইন-সি'র গেরিলা এডভাইজার হিসাবে এ্যাপয়েণ্টমেণ্ট দেয়া হয়। আমি ছিলাম ৬নং সেক্টরের জন্য ডালিম ছিল যশোর এরিয়ার অর্থাৎ ৮নং সেক্টরের জন্য। আমরা জেনারেল ওসমানীর সাথে দিল্লী থেকে কলকাতা এলাম। যদিও আমি আমার ইউনিটে অর্থাৎ ৩য় ইস্ট বেঙ্গলে যোগদান করতে চেয়েছিলাম কিন্তু জেনারেল ওসমানী তাতে মত দিলেন না। তিনি আমাকে নিয়ে এলেন ৬নং সেক্টর এলাকায়। তখনও ৬নং সেক্টর হয়নি। ওখানে তখন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ ছিলেন। তাঁর কাছে আমাকে রেখে দেন। আমাকে ইনস্ট্রাকশন দেয়া হয় আমি যেন বাংলাদেশের ভেতরে না ঢুকি। কেন আমাকে এই ইনস্ট্রাকশন দেয়া হলো আমি বুঝতে পারিনি। ইণ্ডিয়ানদেরকেও বলে দেয়া হয় আমাকে যেন বাংলাদেশের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া না হয়। আমি কর্নেল নওয়াজেশের সাথে থাকতে থাকতে বোর ফিল করি। কোন কাজ নেই একমাত্র এ্যাসেসমেণ্ট ছাড়া। আমি আস্তে আস্তে বি-ডি-আর ট্রুপস নিয়ে ছোটখাটো রেইড, এ্যামবুশ করতে থাকি। কর্নেল নওয়াজেশ ভুরুঙ্গামারী এলাকায় থাকতেন।

 একবার মনে আছে, ইণ্ডিয়ানরা খবর দেয় যে ভূরুঙ্গামারীতে ৩০/৩৫ জন পাকসেনা আছে। ৩৫ জন লোক খুব কমই। তখন আমি একটা প্লাটুন এবং কর্নেল নওয়াজেশ একটা প্লাটুন নিয়ে ভূরুঙ্গামারী রেইড করতে যাই। ম্যাপ অনুযায়ী আমাকে শুধু একটা নদী পার হতে হবে। আমার কাছে পাকিস্তানী সৈন্যের বুলেটকে যত না ভয় ছিল তার থেকে পানি পার হওয়া বেশী ভয়ের ব্যাপার ছিল। যাই হোক, তারা আমাকে দুটো কলাগাছ একসাথে করে ভেলা বনিয়ে তার উপর শুইয়ে টেনেটেনে পার করায়। এই নদীই রাতে আমাকে চারবার পার হতে হয়েছে। আমাকে ফাঁকি দেয়ার জন্য তারা একবার এপারে আবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওপারে এভাবে চারবার পার করিয়েছে। যে সময়ের মধ্যে আমাদের ভূরুঙ্গামারী যাবার কথা সেই সময় পার হয়ে যায়। ম্যাপ অনুযায়ী আমি বুঝতে পারছিলাম না কোথায় যাচ্ছি, কেননা পানিতে আমি পুরোপুরি অন্য লোকের উপর নির্ভর করতাম। যখন ভোর হয়ে আসে তখন আমি ওদের চালাকি বুঝতে পারি। আমরা ফেরত আসি। তখন ইণ্ডিয়ান যে ব্রিগেডিয়ার ছিলেন তিনি খুব তচ্ছিল্যের সাথে আমাকে বলেছিলেন যে আমার জন্যই রেইডটা সফল হয়নি, আমার সাহস নেই এইসব। এতে আমার খুব রাগ ধরে। ব্রিগেডিয়ার সাহেবকে দেখাবার জন্যে, সম্ভবতঃ জুলাই মাস হবে, পরের রাতে আমিও আমার ব্যাটম্যান এবং আরেকটা লোক আমরা তিনজনে ভূরুঙ্গামারী যাই। সেখানে আসলে একটা কোম্পানী ছিল। এই কোম্পানীর ৪ মাইল দূরে আরেকটা প্লাটুন ছিল। কোম্পানী কমাণ্ডার সন্ধ্যার সময় প্রায়ই বলতে গেলে রোজই, ঐ প্লাটুন থেকে মূল কোম্পানীতে চলে যেতো। আমরা প্ল্যান করি পথের মধ্যে ঐ কোম্পানী কমাণ্ডারকে এ্যামবুশ করবো। আমরা দুপুরে খাওয়ার পরে রওনা হলাম। আমরা বর্ডার ক্রস করে ভিতরে ঢুকি। জায়গায় পৌঁছে রাস্তা থেকে ৩০০/৪০০ গজ দূরে থাকতে কোম্পানী কমাণ্ডারের জীপ আমাদেরকে


  1. সাক্ষাৎকারটি প্রকল্প কর্তৃক ১৮-১-১৯৮০ তারিখে গৃহীত।