বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
328

রাইফেল হাতে কেবল নিয়েছি, দৌড়ে কিভাবে গুলি করতে হয় সেটা শিখেছিলাম। ওরা সবাই দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে তাড়াতাড়ি পজিশন নিয়েছে। আমিও নিয়েছি, তবে তত তাড়াতাড়ি না পারায় ১০/১৫ হাত পিছনে পজিশন নিয়েছি। ওরা সেখান থেকে ফায়ার করছে, পাল্টা জবাব দিচ্ছে। আমিও অনুমান ১০/১৫ হাত পিছনে একপাশ থেকে পাল্টা জবাব দিচ্ছি। আনসারের একজন লোক ছিল, সে আমাকে যেভাবে গালি দিচ্ছিলো, সে গালির কথা আমি কখনও ভুলবোনা। খুব মজার গালি- 'সামনে, সামনে এসে ফায়ার কর, নইলে তোকে মেরে ফেলবে।' ও শেখাচ্ছিলো যেন আমি আমার নিজের জীবন বাঁচাতে পারি। এবং একই সময় আমি আমার বন্ধুর জীবনকেও যেন রক্ষা করতে পারি। তারপর সামনে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফায়ার করলাম। ২" মর্টার ছিল আমাদের কাছে। এক সময় ফায়ার বন্ধ করি। পরে জানতে পেরেছিলাম ওদের উদ্দেশ্য ছিল নদী পার হয়ে আসা। কলাগাছ দিয়ে ভেলা তৈরী করেছিল তারা। পাকসেনারা লং রেঞ্জে ফায়ার করে দেখতে চেয়েছিল আমরা এপারে কেউ আছি কিনা। পরে আমাদের পাল্টা জবাব পেয়ে তারা আর নদী পার হবার সাহস পায়নি। এটা আগস্টের ঘটনা হবে। তারপর সেখান থেকে আমরা চলে যাই বাগভাণ্ডার বি-ও- পি তে। বাগভাণ্ডারে বি-ডি-আর' এর সুবেদার মেজর আরব আলী ছিল। তার একটি কোম্পানী ছিল এবং আমি সেই কোম্পানীর একজন সাধারণ সৈনিক ছিলাম। সুবেদার আরব আলীই সেই কোম্পানীর কমাণ্ডার ছিলেন। সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টর অধীন বাগভাণ্ডার ডিফেন্সই আমি বেশ কিছুদিন ছিলাম ওখানে থাকাকালীন আমাদের কটা উল্লেখযোগ্য অপারেশন হয়েছিল অক্টোবরের শেষের দিকে। লেঃ সামাদ, যিনি শহীদ হয়েছেন জয়মনিরহাটে এবং লেঃ আবদুল্লাহ এরা কেবল কমিশন পেয়ে এসেছেন আর আমরা সেকেণ্ড ব্যাচের জন্য সিলেক্ট হয়েছি যাবো। এরা যখন প্রথম আসলো তখন এদেরকে নিয়ে একটা অপারেশন করা হলো, জয়মনিরহাটে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটা কোম্পানী সেখানে ছিল। আমরা তা জানতে পেরেছিলাম। এই রেইডের পরিকল্পনা করেন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ, আমি সেদিন তাঁর সাথেই ছিলাম। আমি ছিলাম তাঁর সিগনাল অপারেটর, অয়ারলেস সেট নিয়ে একটা তেঁতুল গাছের উপরে মাচা তৈরী করে উনি ছিলেন আর আমি তেঁতুল গাছের নীচে অয়ারলেস সেট নিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে তিনি পাক ক্যাম্পের উপর ডাইরেক্ট করছিলেন আক্রমণ। আমার কোম্পানী, অর্থাৎ যেটা সুবেদার আরব আলীর কোম্পানী এবং ডানদিকে একটা এফ-এফ কোম্পানী ছিল সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে- এই দুটো কোম্পানীর একটি দেওয়া হল লেঃ সামাদের নেতৃত্বে এবং অপরটা লেঃ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে। এই দুটো কোম্পানী নিয়ে ভূরুঙ্গামারী আক্রমণ করি, সন্ধ্যের পর। পরিকল্পনা মোতাবেক দুটি কোম্পানী প্রায় ভূরুঙ্গামারীর কাছে পৌঁছে যায়। বাঁ দিকে সোনারহাটে যে কোম্পানী ছিল তাদেরকে রাস্তার উপর ব্লক করতে বলা হলো যাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঐ দিকে পালিয়ে যেতে না পারে। তাদের একটাই পথ খোলা রাখা হয়েছিল, সেটা হলো নাগেশ্বরীর দিকে। কিন্তু ঐ কোম্পানী ঠিকমত এ্যাকশন নিতে পারেনি, ফলে পাকস্তানীরা ভুরুঙ্গামারী ছেড়ে সোনাহাটা দিয়ে ভিতরে ঢোকে এবং উল্টা দিক দিয়ে আমাদের দিকে ফায়ার করতে শুরু করে। আমরা জানতে পাই যে ওটা আমাদের এফ-এফ কোম্পানীর দল না। ওটা পাকিস্তানীরা বিতাড়িত হয়ে উল্টা দিক দিয়ে ভিতরে এসে আমাদের ওপর আঘাত হানছে, এজন্যে সেখানে বেশীক্ষণ থাকা সম্ভব হয়নি। সব কিছু তছনছ করে, বাঙ্কার ভেঙ্গে দিয়ে আমরা রাতের অন্ধকারেই ওখান থেকে ফিরে আসি। রেইড হিসাবে এটিকে আমরা সফল রেইড বলতে পারি, তবে আক্রমণ হিসাবে এটা সফল ছিল না। কেননা, পরবর্তীতে পাকিস্তানীরা আবার সেখানে ডিফেন্স গড়ে তুলেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি[]

॥ রায়গঞ্জ দখলের লড়াই॥

 লেঃ সামাদ আর লেঃ আবদুল্লাহ ২৫ মাইল রেঞ্জের অয়ারলেস হাতে দুই গ্রুপ কমাণ্ডো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো ১৯শে নভেম্বর পাকিস্তানীদের শক্ত ঘাঁটি রায়গঞ্জ দখলের জন্যে। সবার হাতে একটা করে স্টেন

আর


  1. দৈনিক 'সংবাদ'- এর ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১ সংখ্যায় প্রকাশিত মুসা সাদিক রচিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত।