কানসাটে ২৬শে আগস্ট শুরু হয় আবার যুদ্ধ। নদী পার হয়ে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মেজর মজিদের দল কানসাট আক্রমণ করে। পাকসেনারা কানসাট ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু অল্প সময় পরেই পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী এই আক্রমণের মুখে পিছনে সরে আসে।
৩রা আগস্ট তাহেরপুর পাকঘাঁটি আক্রমণ করেন ক্যাপ্টেন রশিদ। সীমান্ত থেকে ২৫ মাইল ভেতরে পুঠিয়া থানার ঝলমলিয়া ব্রিজে হাবিলদার শফিকুর রহমানের দলের সাথে সংঘর্ষ বাধে। অক্ষত অবস্থায় মুক্তিবাহিনী ফিরে আসে।
৪ঠা আগস্ট পাকিস্তানী দল নদীপথে তাহেরপুরের দিকে আসছিলো। হাবিলদার শফিক পাকসেনাদের এ্যামবুশ করেন। এতে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়।
দুর্গাপুরে ২৬শে আগষ্ট হাবিলদার শফিক অতর্কিতভাবে পাকসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হন। মুক্তিযোদ্ধা ২” মর্টার ও হালকা মেশিনগানের গোলা নিক্ষেপ করে নিরাপদে ফিরে আসে।
সারদা পুলিশ একাডেমীতে অবস্থানরত পাকিস্তানী কোম্পানীর উপরে অতর্কিত আক্রমণ করা হয় ১৭ই আগস্ট। এই দুঃসাহসিক অভিযানে ১ জন ছাড়া সকলেই শহীদ হন।
মীরগঞ্জে ২২শ আগস্ট সুবেদার মেবোসসারুল ইসলাম চারঘাট থানার মীরগঞ্জ বি-ও-পি আক্রমণ করেন। নিদ্রামগ্ন পাকসেনারা সকলেই নিহত হয়।
১৪ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনী শেখপাড়া সাব-সেক্টর কমাণ্ডারের নির্দেশে দুর্গাপুর থানার গলহরি যান। পাকসেনারা জানতে পেরে আক্রমণ করে। বাঁশের সেতুর উপর দিয়ে যখন পাকসেনা আসা শুরু করে তখন মুক্তিবাহিনী গুলিবর্ষণ শুরু করে। এখানে ৭৩ জন পাকসেনা ও ২ জন অফিসার নিহত হয়।
লালগোলা সাব-সেক্টরে মেজর গিয়াসের নৃেতত্বে অমিতবিক্রমে যুদ্ধ চলে। রাধাকান্তপুরের যুদ্ধ ও ইসলামপুরে অবস্থিত পাকঘাঁটি আক্রমণ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পাকসেনারা নবাবগঞ্জে পশ্চাপসরণ করতে বাধ্য হয়।
হামজাপুর সাব-সেক্টরে ১৩/১৪ই নভেম্বর ঘনেপুর বি-ও-পি আক্রমণ করে ৩০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। সাতাশে নভেম্বর মেজর গিয়াস পাঁচ কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পোড়াগ্রাম আক্রমণ করেন। এই ভয়াবহ যুদ্ধে ৩০ জন পাকসেনা ও ৫০ জন রাজাকার নিহত হয়।
ভোলাহাট সাব-সেক্টর মকরমপুর আলীনগরস্থ পাকঘাঁটিতে লেঃ রফিকের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা করা হয় ৭ই নভেম্বর। পাঁচজন পাকসেনা নিহত হয় এবং মহানন্দা নদী পার হয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। ভোলাহাট থেকে রহনপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ১০০ বর্গমাইল এলাকা ছিল সম্পূর্ণ মুক্ত। সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিলো দলদলিতে। মহানন্দা নদীর দু'পাশে আলীনগর থেকে শাহপুর গড় পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ মাইল মুক্তিবাহিনীর ডিফেন্স ছিলো। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আলমপুর আম্রকাননে অবস্থিত পাকঘাঁটি আক্রমণ করা হয়েছিল ১৮ই নভেম্বর। এই যুদ্ধে লেঃ রফিক ও লেঃ কাইউম ২ কোম্পানী সৈন্যা নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর আলমপুর দখল হয়েছিল কিন্তু আকস্মিকভাবে পিছন দিক থেকে শত্রুর গুলি আসতে থাকে। পেছনের বাঙ্কারে শত্রুজীবিত অবস্থায় লুকিয়ে ছিল, অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধারা কেউই তা খেয়াল করেনি। মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পাকসেনারা আলমপুর পুনর্দখল করে।
নভেম্বরের শেষের দিকে সংঘটিত হয় শাহপুর গড়ের যুদ্ধ। পাকসেনার একটি ব্যাটালিয়ন শাহপুর গড় আক্রমণ করে। সারাদিন যুদ্ধ চলে। রাত দেড়টার সময় মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। এই আক্রমণে রণাঙ্গনে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং সেক্টর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল নূরুজ্জামান।