পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
354

 রেলওয়ে পুল উড়াবার তৃতীয় গ্রুপও আমাদের সাথে যোগ দিল। তারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু শত্রুর যে ক্ষতি করতে পেরেছে তা আরেক মজার কাহিনী।

 শত্রুর যে দুটি প্লাটুন একটা আমনুরা ও অপরটি নওয়াবগঞ্জে ছিল, সে দুটি প্লাটুনই গোলাগুলির আওয়াজ শুনতেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রেলের ইঞ্জিন আর বগি নিয়ে রওয়ানা দিল, তাদের পেট্রোল করার রাস্তায়। পুলের কাছে আমনুরা হতে আগত পেট্রোলটি পৌঁছাতেই কিছু গুলির আওয়াজ পেল। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ইঞ্জিনও এসে পৌঁছাল। শত্রুপক্ষ মনে করছিল হয়ত বা নওয়াবঞ্জ মুক্তিবাহিনী দখল করে নিয়েছে আর তাদেরই লোকজন সম্ভবতঃ সম্মুখের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি বেশ কিছুক্ষণ চললো। সুযোগ বুঝে সেই ফাঁকে কেটে পড়ল আমাদের তৃতীয় গ্রুপটি। নিজেদের গুলিতে সেইদিন দুশমনের ৬ জন নিহত হয় আর ৭ জন আহত হয় সেই স্থানেই।

 সেই অপারেশনে আমরা আমাদের একজন প্রিয় সিপাইকে হারাই ও দুজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতররুপে আহত হয়। যুদও অতি সাধারণ কিন্তু দুর্গম শত্রুর এলাকার ভিতর অপারেশন করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। এটাও সম্ভব হত না যদি না জাতি হিসাবে বেঁচে থাকার অদম্য স্পৃহা আর জাগ্রত মনুষ্যত্ববোধ, আত্মবিশ্বাস আর অপরাজয়কে জয় করে প্রমাণ করার অভিলাষ থাকতো।



সাক্ষাৎকার[১] : নায়েক মোঃ আমিনউল্লাহ

১২-৬-১৯৭৩

 ৩০শে মে আমি ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়া মহিসকুন্তি (কুষ্টিয়া জেলা) হামলা করিতে রওয়ানা হই। শত্রুর সংখ্যা খুব বেশী জানিতে পারিয়া মাঝ পথে আমার কিছু মুক্তিযোদ্ধা পিছনে পালাইয়া যায়। আমি মাত্র ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়া পাক বাহিনীর এক কোম্পানী সৈন্যের উপর বেলা ৩টার সময় অতর্কিত আক্রমণ চালাই। ফলে পাক সৈন্য ৩২ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩৫ জন আহত হয়, যাহা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হইতে প্রচার করা হইয়াছিল।

 ১৫ই জুন আমাকে বেতার যোগাযোগের জন্য আবার লালগোলা ডাকা হয়। আমি পুরা সাব-সেক্টর ৪ নং এর বেতার পরিচালনা করি এবং কোয়ার্টার মাস্টারের কাজও পরিচালনা করিয়া থাকি।

 ২০শে সেপ্টেম্বর মেজর সাহেব আমাকে নিয়া স্পেশাল অপারেশনের জন্য সাব-সেক্টর ৩ ও ৭ নং সেক্টর মেহেদীপুর যান এবং এখানে আমাদের নেতৃত্বে সোনা মসজিদ (রাজশাহী) এলাকায় দুটি বড় অপারেশন সমাধা হয়। এতে মিত্রবাহিনী আমাদিগকে আর্টিলার দ্বারা সাহায্য করে যার ফলে আমরা ধোবড়া পর্যন্ত দখল করি। এই সময় বহু পাকসৈন্য হতাহত হয় এবং বাদবাকী ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ১৫ই সেপ্টেম্বর আমার কাজে মুগ্ধ হইয়া মেজর সাহেব আমাকে হাবিলদার হইতে নায়েক সুবেদারে পদোন্নতি দেন।

 ১লা অক্টোবর আমাকে সম্মুখযুদ্ধের জন্য এক প্লাটুনের পরিচালনভার দেওয়া হয় এবং আমি হাকিমপুর ঘাট হইতে আস্তে আস্তে অগ্রসর হইতে থাকি। এতে বহু বড় বড় অপারেশন করিয়াছি এবং শত্রুকে পিছনে হটিতে বাধ্য করিয়াছে।

 ১০ই অক্টোবর আমাকে ৪ নং সাব-সেক্টরে 'বি' কোম্পানী পরিচালনার ভার দেওয়া হয়।


  1. বাংলা একাডেমির দলিলপত্র থেকে সংকলিত।