পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
355

 ১২ই নভেম্বর আমি ইসলামপুর পাক ঘাঁটিতে হামলা করি। এতে বহু রাজাকার ও পাক সৈন্য হতাহত হয় এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার সহকর্মী হাবিলদার জামান সাহেব শত্রুর গুলিতে বাগডাঙ্গায় আহত হন। আমি আমার বেতারে খবর পাইয়া দৌড়াইয়া গিয়া তিন মাইল দূর হইতে তাহাকে উদ্ধার করিয়া আনিতে সক্ষম হই। প্রকাশ থাকে যে, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাকে বন্ধুর মত সাহায্য করিয়াছেন।

 ১২ই ডিসেম্বর যুদ্ধ পুরাদমে শুরু হয়ে যায়। আমি আমার ঘাঁটি (হাকিমপুর) হইতে নবাবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হইতে থাকি। পথে পোড়াগ্রামে শত্রুর ঘাঁটির সম্মুখীন হই এবং তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়। শত্রুরা বহু মৃতদেহ ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলিয়া পলায়ন করিয়া বাহারমপুর গ্রামে ঘাঁটি স্থাপন করে।

 ১৩ই ডিসেম্বর আমি ও আমার দল শত্রুর এলাকায় গিয়া এ্যামবুশ পাতি। দুইখানা সৈন্যবাহী গাড়ীসহ অগ্রসররত বহু শত্রুকে সমূলে ধ্বংশ করি। শহীদ সিপাহী নজীরউদ্দিনের কবর ঐ স্থানেই বিরাজমান।

 ১৪ই ডিসেম্বর আমরা নবাবগঞ্জ দখলের উদ্দেশ্যে নবাবগঞ্জ পাকঘাঁটির উপর হামলা চালাই। সারাদিন যুদ্ধ চলে এবং এতে বহু পাক সৈন্য হতাহত হয়। দুঃখের বিষয় আমাদের ৬ জন মুক্তযোদ্ধা এখানে শহীদ হন। আমরা নবাবগঞ্জ শহরে উঠিয়া পড়ি। বিকাল বেলা রাজশাহী হইতে ৫০/৬০ গাড়ী পাক সৈন্য নবাবগঞ্জ ঢুকিয়া পড়ে যাহার জন্য আমাকে একটু পিছু হটিয়া যাইতে হয়। রাত্রি ১২টার সময় তাহারা তাহাদের ১৪০ জন মৃতদেহসহ পাকা রাস্তার ওভারপুল উড়াইয়া রাজশাহীর দিকে পলায়ন করে।

 ১৫ই ডিসেম্বর আমরা নবাবগঞ্জ দখল করিয়া দেখিতে পাই বহু পাঞ্জাবীর মৃত দেহ ই-পি-আর লাইনের বাগানে পড়িয়া আছে। এবং অনেকেই মরিচার ভিতরে দাফন করিয়া রাখিয়াছে। তারপর আমরা রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হইতে থাকি কিন্তু অভয়া পুল ভাঙ্গা থাকায় পার হইতে দেরি হয়।

 ১৬ই ডিসেম্বর আমি গোদাগাড়ীতে ১৪০ জন রাজাকারকে অস্ত্রশস্ত্রশহ আত্মসমর্পণ করাইতে সক্ষম হই এবং শত্রুর পিছন পিছন ধাওয়া করি।

 ঐদিন সন্ধ্যা ৭ টার সময় রাজশাহী দখল করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় শত্রুদের আর পাওয়া যায়না। তারা নাটোর গিয়া আত্মসমর্পণ করিবে বলিয়া খবর পাঠায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ঐদিনই আমাদের বিজয় দিবস-১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১।

সাক্ষাৎকার[১] : হাবিলদার মোঃ ফসিউদ্দিন আহমদ

২-৫-১৯৭৪

 ভারতের সহযোগিতায় আমাদের পুনর্গঠন শুরু হয়। গেরিলা যুদ্ধ বাংলাদেশের ভেতরে চলতে থাকে।

 ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে পোলাডাঙ্গা এবং সাহেবনগর চরে মুক্তিযোদ্ধারা এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ডিফেন্স নেয়। চর এলাকাকে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য মে মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানীরা আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের কিছুসংখ্যক লোক হতাহত হয়। পাকিস্তানীদেরও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় চর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

 মে মাসের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পদ্মা নদী পার হয়ে ফরিদপুরে ডিফেন্স তৈরি করে। ডিফেন্স মজবুত করা হয়। সেখান থেকে প্রায়ই গেরিলা অপারেশন চালানো হতো। জুলাই মাস পর্যন্ত আমরা পোড়াগাঁও, হাকিমপুর, বাঘের আলী এলাকা আমাদের দখলে আনি। পোড়াগাঁওতে আমাদের


  1. বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত।