পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
359

 হাবিব দিপুর নেতৃত্বে নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাহারা রাইফেল, মেশিনগান দ্বারা গুলিবর্ষণ করিতে থাকে। ফলে দুইজন পুলিশ নিহত হয়। আর ৪ জন জীবন্ত অবস্থায় দৌড়াইয়া পালাইয়া যাইবার কালে ধরা পড়ে। জনগণ তাহাদিগকে লাঠিসোটার দ্বারা পিটাইয়া হত্যা করে। পাক পুলিশদের রাইফেল ও কিছু খাদ্যসামগ্রী মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

 গেরিলা বাহিনী কমাণ্ডার মীর মঞ্জুরুল হক সুফীর নেতৃত্বে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭ নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ নৌকা পথে আনিবার কালে বাহাদুরাবাদ ঘাটের নিকট সশস্ত্র সংঘর্ষে শত্রুদের একটি টহলদার গানবোট সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দেয়।

 ১৮ই সেপ্টেম্বর ই-পি-আর কমাণ্ডার সালেক (বগুড়া), বেঙ্গল রেজিমেণ্টের মান্নান, ঢাকা পুলিশের হাবিলদার রজব আলী এবং ছাত্র রঞ্জিত কুমার মহন্ত, প্রদীপ কুমার কর (গোবিন্দগঞ্জ) প্রভৃতির নেতৃত্বে হিলির পার্শ্ববর্তী স্থানে পাকবাহিনীর সহিত ভীষণ সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়। ঘোড়াঘাটের ফিলিপস-এর (সাঁওতালী) নেতৃত্বে মাইন বিস্ফোরণে পাকসেনাদের একটি বেডফোর্ড মটর কার ভীষণভবে ধ্বংস হয়।

 গেরিলা বাহিনীর কমাণ্ডার মীর মঞ্জুরুল হক সুফীর নেতৃত্বে ১৯শে সেপ্টেম্বর সারিয়াকান্দি থানার তাজুরপাড়া গ্রামে অনুপ্রবেশকারী একদল পাকবাহিনীকে ঘেরাও করা হয়। প্রচণ্ড গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলে শত্রুপক্ষের কতক সেনা নিহত ও বাকী সেনা পলায়ন করিতে বাধ্য হয়।

 ২৪শে সেপ্টেম্বর আহসান হাবিব ওয়ালেসের নেতৃত্বে বেলা দুপুর সাড়ে বারোটার সময় হ্যাণ্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করিলে সুখানপুকুর রেলস্টেশন গৃহে আগুন ধরিয়া যায় এবং তাহাতে টেলিফোন লাইন নষ্ট হয়। একটি রাইফেল ও কিছু গুলি, সাত জোড়া পাকসেনার পোশাক উদ্ধার করা হয়। কিছু সৈন্য ও রাজাকার পালাইতে সক্ষম হয়।

 ২৭শে সেপ্টেম্বর কমাণ্ডার মোত্তালিব এবং কমাণ্ডার এস, এম ফারুকের নেতৃত্বে হিলিতে পাকবাহিনীর সহিত প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আড়াই ঘণ্টা যাবৎ যুদ্ধ চলিতে থাকে। কমাণ্ডার মোত্তালির মর্টারের গুলিতে আহত হয় এবং ৪ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। ঐ সময় বগুড়ার একটি ১৪ বৎসরের অসমসাহসী ছেলে সাইদুর রহমান (চুটকু) হিলি স্টেশনে রেললাইনের মাইন বিস্ফোরণ ধ্বংস করিয়া দেয়। সেইদিন রেল চলাচল সম্পূর্নরুপে বন্ধ হইয়া যায়। এই ঘটনায় একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আসাম রেজিমেণ্ট ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স।

 সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগে মুক্তিবাহিনী নশরতপুর রেলস্টেশনের পশ্চিম ধারে একটি এণ্টি-ট্যাঙ্ক মাইন পুঁতিয়া রাখে। তাহার বিস্ফোরণে একটি মিলিটারী ট্রেন আক্রান্ত হয়। ফলে হানাদার পাকবাহিনী ক্ষিপ্ত হইয়া লাইনের ধারের লক্ষীপুর, পূর্ব ডালম্বা, কোটকুরী ও শিতলাই গ্রামে আক্রমণ চালায় এবং কফিরউদ্দিন মিস্ত্রী, আবেদ আকন্দ, আজিজ প্রাং (লক্ষীপুর), মহীরউদ্দিন প্রাং (পূর্ব ডালম্বা) ভোলা প্রাং, কোরবান আলী (কোচকুরী) শরিফউদ্দিন সরকার (শিতলাই) প্রভৃতি লোকদিগকে লাইন করিয়া গুলি করিয়া হত্যা করে।

 অক্টোবর মাসের প্রথম ভাগে গাবতলী থানার শিহিপুর গ্রামে সরকার-বাড়িতে মুক্তিবাহিনী ঘাঁটি ছিল। মুক্তিবাহিনী রাত্রি নয় ঘটিকায় সরকার বাড়ির পিছনে রেললাইনে একটি মাইন পুঁতিয়া রাখে। কারণ মুক্তিবাহিনী জানিতে পারে যে সৈয়দপুর হইতে বোনারপাড়া জংশন হইয়া একটি সৈন্যবাহী ট্রেন আসিতেছে। সেই ট্রেনটি ধ্বংসই তাহাদের লক্ষ্য ছিল কিন্তু ১৫ মিনিট পূর্বেই মাইনটির বিস্ফোরণ ঘটে। সেই সৈন্যবাহী ট্রেনটি ঐদিন আর আসে না।