পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

374 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড সৈন্য নিহত হয়। এ যুদ্ধে আমার পেটে গুলি লাগে। অয়ারলেস অপারেটর নায়েক মোহাববতের সহায়তায় ক্যাম্পে ফিরে যেতে সক্ষম হই। ঐ গুলি লাগে ২টার সময় এবং মেজর ভার্মা পায়ে ও হাতে আঘাত পান। আমাকে চিকিৎসার কোর ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা বিগত কয়েক মাস যাবৎ যুদ্ধে কোনদিন আর্টিলারী ব্যবহার করেনি। কিন্তু ঐ দিনের অপারেশনে পাকিস্তানীরা তাদের সব রকম অস্ত্র ব্যবহার করে। কিন্তু এ সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার না করার ফলে মুক্তিযোদ্ধারা ও ভারতীয় বাহিনী জানতো না যে পাকিস্তানীদের কি কি অস্ত্র এবং কোন কোন স্থানে আছে। পাকবাহিনী তা ব্যবহারের পরে সমস্ত কিছু জানা গেল। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী ধোপাখালী (কুষ্টিয়া) বিওপি ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে যার ফলে পাকবাহিনী আর্টিলার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। এই অপারেশনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর কোন ক্ষতি হয়নি। সাক্ষাৎকারঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী* শেষবারের মত এপ্রিলের শেষে যশোরের বেনাপোল থেকে ভারতে পশ্চাদপসরণ করার সময় আমাদের দুঃখ-কষ্ট সীমাহীন ছিল। বর্ষার আগমনে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল এবং আমাদের সঙ্গীদের শোয়া দূরে থাক, মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও ছিল না। অবিরাম বৃষ্টি, অর্ধাহার, অনাহার, তার উপর আপাতদৃষ্টিতে পরাজয়ের গ্রানি, সব মিলিয়ে আমরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। এই রকম অবস্থায় বাংলার মাটিকে ছেড়ে বিদেশে বিতাড়িত হওয়া যে কি মানসিক যন্ত্রণা-সেটা যারা কোনদিন এ রকম অবস্থায় পড়েনি তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের মানসপটে ভেসে উঠেছিল তাদের ফেলে আসা গ্রাম, ঘরবাড়ি, বাবা মা-স্ত্রী-পুত্র পরিজন। তাদের কাছ থেকে কতদিনের বিদায় নিয়ে যাচ্ছিল তারা জানত না। এই বেদনাবিধুর বিদায়লগ্ন আমাদের কেউ কোন দিন ভুলাতে পারবে না। এই সময়ে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা শুরু হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে কিছুদিন বিএসএফ এবং তারপর ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের রেশন, গোলাবারুদ এবং সরবরাহের দায়িত্ব নেন। খুব সম্ভবতঃ ১৮ বিএসএফ-এর ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেঈ সিং-এর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। ১৯৬৫ সনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ‘বীরচক্র’ পাওয়া এই সামরিক অফিসারটি আমাদের এই চরম দুদিনে বাণী শুনিয়েছিলেন। এই সময় আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুনভাবে সংগঠন শুরু করি এবং সময়সূচি গ্রহণ করি। আমাদের সমস্ত ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের এবং প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের কয়েকটি কোম্পানীতে ভাগ করে দেয়া হয়। প্রায় ৩৫০ মাইল সীমান্তে (কুষ্টিয়ার উত্তর থেকে খুলনার দক্ষিণাংশে পর্যন্ত) আমাদের স্ট্রাটেজিক দায়িত্ব ছিল কয়েকটিঃ ১। শত্রর প্রতিরক্ষা বুহ্যগুলিতে শত্রকে হয়রানি করা। ২। শত্রর উপর অতর্কিত রেইড চালিয়ে কুষ্টিয়া জেলার উত্তর মাথা থেকে দক্ষিণে খুলনার সাতক্ষীরা-কলারোয়া রাস্তা অবধি কতগুলো বিশেষ সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মোতায়েন করা। এফ কোম্পানী কুষ্টিয়ার প্রাগপুর বিওপি’র বিপরীতে কমাণ্ডার প্রথমে ছিলেন লেফটেনেন্ট জাহাঙ্গীর এবং আমি। ৩ শত্রদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা, ব্যাহত করা এবং সম্ভব হলে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া ৪। শত্রদের ছোট ছোট দলগুলোর পেট্রল পার্টির উপর আমাদের দায়িত্ব ছিল। যেসব জায়গায় সম্ভব হচ্ছিল আমরা বাংলাদেশের কিছু ভিতরে সামরিক প্রতিরক্ষা বৃহ্যও গড়ে তুলছিলাম। সি কোম্পানীঃ মেহেরপুর শহরের বিপরীতে কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী।

  • কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে এসডিও থাকাকালীন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।