বি কোম্পানীঃ দর্শনার বিপরীতে, কমাণ্ডার ছিলেন তদানীন্তন ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ডি কোম্পানীঃ চৌগাছার বিপরীতে, কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন হুদা।
এ কোম্পানী ছিল খুলনার ভোমরা বিওপি'র বিপরীতে, কমাণ্ডার ছিলেন প্রথমে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এবং পরে ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন আহমদ।
এইচ কোম্পানী ছিল বেনাপোলের বিপরীতে, প্রথমে ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে আর কমাণ্ডার ছিলাম আমি নিজে। সর্বদক্ষিণে জি কোম্পানী। সাতক্ষীরা কলারোয়া রাস্তার বিপরীতে এই কোম্পানী মোতায়েন ছিল। কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ। এই সময় আমাদের হেডকোয়ার্টারে মুন্সিগঞ্জের এসিএ ফ্লাইট লেঃ জামাল যোগ দেন।
এইরকম একটা সামরিক প্রতিরক্ষা বৃহ্য, যেটা এ কোম্পানী ভোমরা বিওপি'র আশেপাশে গড়ে তুলেছিল, তার উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল ৩০শে মে তারিখে। প্রায় ১৭ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের গোলন্দাজ বাহিনীকে ব্যবহার করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই দৃষ্টান্তমূলক সাহস ও সংকল্পের পরিচয় দেয়। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন মাহবুব এই যুদ্ধ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। প্রায় তিন শতাধিক শত্রুসৈন্য একজন অফিসারসহ এই যুদ্ধে হতাহত হয়। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন শত্রুর কয়েকটি মৃতদেহ আমাদের কৃষ্ণনগর হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হন। সেদিন কৃষ্ণনগরের জনসাধারণ এই লাশ দেখার জন্য হেডকোয়ার্টারে ভেঙ্গে পড়েছিল এবং ভারতীয় সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা মৃতদেহ দেখতে এসেছিল।
এই সময় আমাদের মূল সাংগঠনিক কাজ চলতে থাকে। আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রথম বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে পূর্ণ শক্তিতে বলীয়ান করে তোলার। সমস্ত মুক্তিবাহিনীকে ২টা ক্যাটিগরিতে ভাগ করা হয়। ১। নিয়মিত বাহিনী (ক) সেক্টর ট্রুপস (খ) রেগুলার ট্রুপস ২। অনিয়মিত বাহিনী-গণবাহিনী।
॥ বেনাপোল পতাকা॥
পশ্চিম রণাঙ্গনে আমাদের সংগ্রাম এবং গৌরবের প্রতীক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্টে বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীয়মান ছিল। এই পতাকার পেছনে ছোট ইতিহাস আছে।
এপ্রিলের শেষের দিকে যখন আমাদের জনশক্তি সীমান্তের অপর চলে যায় তখনো বেনাপোল সীমান্ত উড্ডীয়মান পতাকাকে আমরা অসহায়ভাবে ফেলে যাইনি। মে মাসের প্রথমার্ধে যখন মুক্তিবাহিনীর সংগঠন এবং পুনর্বিন্যাস চলছিল তখন এই পতাকার সংরক্ষণের ভার নিয়েছিলেন ১৮-বিএসএফ-এর কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল মেঈ সিং (বীরচক্র)। বাংলাদেশের পতাকার প্রতি এতদূর শ্রদ্ধা এবং সম্মান ও অনুরাগ আমি আর কোন ভারতীয়দের মধ্যে দেখিনি। এই রাজপুত অফিসারটি আমাদের পতাকাকে সম্মান দিয়ে সমস্ত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিলেন এবং তিনি বার বার এই কথাই বলতেন। ১৮-বিএসএফ তাদের মেশিনগান দিয়ে এই পতাকাকে কভার করে রেখেছিল। মনে হয় একটা কাকপক্ষীও তার পাশে ভিড়তে পারেনি। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা বা গভীর রাতে মেশিনগান গর্জে উঠত, যদি তার আশেপাশে সামান্যতম গতিবিধি পরিলক্ষিত হত। মেশিনগানের আওয়াজ শুনলে আমরা বুঝতে পারতাম মেঈ সিং-এর লোকজন তৎপর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের এই পতাকার আশপাশ দিয়ে না জানি কত হাজার হাজার গোলাবর্ষণ হয়েছে। পতাকাকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানীদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানীদের এই অপচেষ্টাকে কেন্দ্র করে কতজন যে হতাহত হয়েছে তা সঠিক বলা মুশকিল। এই পতাকা নিয়ে সীমান্ত সব সময় সরগরম থাকত। এ ছিল আমাদের অনাগত দিনের বিজয়ের প্রতীক। প্রসংগত উল্লেযোগ্য যে যশোর সেনানিবাসে যখন প্রথমে বেঙ্গল রেজিমেণ্ট আক্রান্ত হয় (আনুমানিক এপ্রিলের প্রথমার্ধে) মেঈ সিং তার ১৮- বিএসএফ ব্যাটালিয়নকে নিয়ে