পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

376 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড ংলাদেশের ভিতরে স্বীয় অনুপ্রেরণায় ঢুকে পড়েন এবং ঝিকরগাছার কাছে তার বাহিনীর সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে বিএসএফ-এর কিছুসংখ্যক হতাহত হয় এবং কিছুসংখ্যক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। মেঈ সিং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢোকার এই সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছিলেন বিধায় ভারত সরকারের হাতে তাকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই সময় তিনি একবার গোপনীয়ভাবে ক্যাপ্টেন হাফিজের সাথে আমাদের চুয়াডাঙ্গা সদর দফতরও দেখতে আসেন। মেঈ সিং-এর এই একগুয়েমি বেনাপোল চেকপোষ্টে পরে মোতায়েনরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৭-পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ন সহ্য করতে পারত না। তারা কয়েকবার প্রস্তাবও করেছিল যে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গোলাগুলি বিনিময় বন্ধ করা হোক। কিন্তু মেঈ সিং এই প্রস্তাব কোনদিন মেনে নেননি। পরে তাঁর ব্যাটালিয়নকে এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। কর্নেল মেঈ-এর পরে প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই পতাকা সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন। জুন-জুলাই মাসে প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্ট বেনাপোল সীমান্ত থেকে জেড ফোর্সে যোগদান করার জন্য বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে চলে যায়। এই সময় বাংলাদেশের পতাকাটি বেনাপোলে সীমান্তে একটা স্বীকৃত সত্য হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আমার কোম্পানী মিলে এইচ কোম্পানী যৌথভাবে এই পতাকা সংরক্ষণের দায়িত্ব নেই। এবং বেনাপোল সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০০/৮০০ গজ জায়গা নো-মানস ল্যাণ্ড’-এ পরিণত হয়। আমার মনে আছে “ওমেগা রিলিফ দল যেদিন এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন আমিও ২/৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে বড় গাছগুলোর আড়াল নিয়ে ক্রল করে এগুচ্ছিলাম। চার/পাঁচ গজ দূরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকজন এদের জন্য অপেক্ষা করছিল। রাস্তার পাশ থেকে এদেরকে আমাদের পতাকা দেখাই এবং বলি যে আমরা এই এলাকা দখল করে আছি। ‘ওমেগা দল ভয়ে ডান, বাঁয়ে তাকাতে সাহস পায়নি। এইভাবে দীর্ঘ নয় মাস আমরা বেনাপোলের পতাকাকে রক্ষা করেছিলাম এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনদিন এই পতাকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। পতাকা যেখানে উড্ডীয়মান ছিল তার আশেপাশে পেট্রল পার্টি পাঠানো হত এবং তাদের সাথে পাক-বাহিনীর প্রতিদিন গোলাগুলি বিনিময় হত। মে মাসে এই পতাকাকে সামনে রেখে বিবিসি’র প্রতিনিধিরা ক্যাপ্টেন হাফিজ এবং মেজর ওসমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। স্বাক্ষরঃ তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী 〉8ー〉のー“○ সাক্ষাৎকারঃ মেজর আব্দুল হালিম ૨૨-88-88 ૧૭ মুক্তিযুদ্ধকে অব্যাহত রাখার জন্য মে মাসের শেষদিকে ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে শিবির স্থাপন করা হয়। আমাকে ৩রা জুন ১৯৭১ সালে দক্ষিণ পশ্চিম সেক্টরের কমাণ্ডার হিসাবে নিযুক্ত করেন। শিকারপুর সাবসেক্টর কমাণ্ডার নিযুক্ত হওয়ার পর আমাকে ১ কোম্পানী ইপিআর ও মুজাহিদ দেওয়া হয়। আমার সহ (১) শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে প্রথম অপারেশন করা হয় বাংলাদেশের ভিতরে সাহেবনগর নামক স্থানে। সেখানে পাক-বাহিনী ও রাজাকাররা স্থানীয় মানুষের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পাশবিক অত্যাচার করছিল। এই সংবাদ পেয়ে গভীর রাতে ২ প্লাটুন নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাক বাহিনীর রাজাকারসহ ২৬ জন নিহত হয়। সেখান থেকে কিছু গোলাবারুদ নিয়ে রাত্রেই সীমান্ত অতিক্রম করে শিকারপুর চলে যাই।