পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

377 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড (২) কাজীপুরে পাকবাহিনী কর্তৃক আমাদের ডিফেন্স আক্রমণঃ কাজীপুরে সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে আমাদের যে এক প্লাটুন ইপিআর ছিল পাকবাহিনী তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এই সংবাদ পেয়ে আমরা আরও ২ প্লাটুন নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য যাই। সেখানে আমাদের পরবর্তী ২ প্লাটুন পাকবাহিনীর অবস্থানের উল্টা দিক থেকে তাদের উপর তীব্র আক্রমণ করে। পাক-বাহিনীর সাথে এই যুদ্ধে রাজাকার বাহিনীও অংশগ্রহণ করে, কিন্তু আমাদের চতুর্দিক থেকে আক্রমণের মুখেও রাজাকার বাহিনী ও পাকবাহিনী মর্টার থেকে অনবরত গোলা নিক্ষেপ করে। আমাদের সাথে পাকবাহিনীর সারারাত যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনী কাজীপুর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বহু খানসেনা নিহত হয়। বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমরা দখল করি। তাছাড়া বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথে সেতু ও কাঠের পুল নষ্ট করে দেই ও রাজাকারদের পেট্রোলিং পার্টির উপর রেইড করি। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আমাকে শিকারপুর সাবসেক্টর থেকে বনগাঁও সাবসেক্টর কমাণ্ডার নিযুক্ত করা হয়। শিকারপুরের কমাণ্ডার নিযুক্ত হন লেঃ জাহাঙ্গীর সাহেব। বনগাঁও সাব-সেক্টরে আমার থাকাকালীন সময়ে প্রথম অপারেশন হয় রঘুনাথপুরে। পাকবাহিনীর পেট্রোলিং পার্টির উপর এ্যামবুশ করে ২৫ জন খানসেনাকে হত্যা করা হয় ও তাদের হাতিয়ার নিয়ে আসা হয়। সেই সময়ে এই সংবাদ বাংলাদেশ রেডিও হতে প্রচার করা হয়। ১২শে আগষ্ট ধোপাখালী বিওপিতে পাক বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। উক্ত আক্রমণে পাকবাহিনী বিওপি ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা সেখানে ডিফেন্স স্থাপন করি এবং শেষ পর্যন্ত পোটখালী বিওপি আমাদের দখলে থাকে। ৩১শে আগষ্ট ধোপাখালী বিওপি থেকে কয়েক মাইল ভিতরে বাঘছড়া থানা হেড কোয়ার্টারে রাজাকার বাহিনীর ডিফেন্স আক্রমণ করি। কিন্তু রাজাকাররা আমাদের সংবাদ পূর্বেই পেয়ে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের মালপত্র ও রেশনে অগ্নিসংযোগ করি। তাছাড়া ৪টি সরকারি পাটগুদামেও অগ্নিসংযোগ করি। পথে একজন শান্তি কমিটির সদস্যের বাড়ি থেকে ৪ টি বন্দুকসহ চারজন রাজাকারকে ধরে নিয়ে আসি। সাক্ষাৎকারঃ মেজর অলীক কুমার গুপ্তঞ্চ কর্নেল মঞ্জর সাহেব ১১ই অক্টোবর তারিখে বাংলাদেশের ম্যাপ দেখালেন এবং কোথায় কোথায় অপারেশন করতে হবে তা নির্দেশ দিলেন। ১৪ই অক্টোবর কর্নেল মঞ্জুর সাহেব অপারেশনের জন্য ৩৮৫ জন গণবাহিনীর যুবককে তাঁদের সেক্টরে পৌছে দেয়ার ভার দিলেন আমার উপরে। এদের নিয়ে বয়রা সাবসেক্টরে এসে মেজর নজমুল হুদার নিকট রিপোর্ট করি। ১৫ই অক্টোবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ও পাক বাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে, ভারতের মধ্যে না থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকাই শ্রেয়। আমি কাশীপুরে হেডকোয়ার্টার স্থাপন করি এবং আমার এলাকা ছিল দক্ষিণ বেনাপোল রোড, বামে মহেশপুর থানা, জীবননগর থানা। ঝিকরগাছা থেকে বামে রাধানগরে আমার মেইন বেইস ছিল। ভারতীয় সীমান্ত থেকে চার মাইল দীর্ঘ পথ গণবাহিনীর সাহায্যে মুক্ত করি এবং সেখানে জার্মান রাষ্ট্রদূত আসেন এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী মহোদয়গণও এসে দেখে যেতেন। অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মধুখালী গ্রামের নিকট এই দলটি পাক বাহিনীর এ্যামবুশে পড়ে যায়। সেখানে ৩ জন আহত হয়। গুলি ডিফেন্স দোষদিনাতে সন্ধ্যার দিকে আক্রমণ করি। এই যুদ্ধে গণবাহিনীর ১৫ জন গেরিলা অংশগ্রহণ করেন। এই আক্রমণে ৫টা চাইনিজ রাইফেল ও কিছু হেলমেট এবং খাদ্য দখলে আসে। জনসাধারণের মুখে পরে জানা যায় যে, প্রায় ১০

  • ১৯৭১-এর অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত।