পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
422

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৮। ৯নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধের অন্যান্যের বিবরণ বাংলা একাডেমী দলিলপত্র ১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ মেজর মেহেদী আলী ইমাম[১]
১৫-১০-১৯৭৪

 নয় নম্বর সেক্টর গঠন করা হয় খুলনায় কিছু অংশ, ফরিদপুরের কিছু অংশ এবং পুরো বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে। এই সেক্টরের সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন মেজর এম,এ,জলিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথমার্ধে মে মাসের শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত এলাকায় আমি, লেঃ নাসির, ক্যাপ্টন হুদা, লেঃ জিয়া যুদ্ধ পরিচালনা করছিলাম। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত বরিশাল ও পটুয়াখালী আর্মি খুলনার সুন্দরবন এলাকায় লেঃ জিয়া এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্যাপ্টন হুদা ছিলেন। জুলাইয়ের পর থেকে নয় নম্বর সেক্টর পুনরায় সংগঠিত করা হয় এবং বরিশাল জেলার দায়িত্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ক্যাপ্টন শাহজাহানকে (ওমর), পটুয়াখালী আমাকে, সুন্দরবন ও খুলনার কিছু অংশ লেঃ জিয়াকে দেয়া হয়। পিরোজপুর ও বাগেরহাট এলাকা সুবেদার তাজুল ইসলামকে এবং ক্যাপ্টন হুদাকে খুলনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেক্টর হেডকোয়ার্টার টাকীতে ছিলেন মেজর জলিল। এর এডজুট্যাণ্ট ছিলেন ফ্লাইট সার্জেণ্ট ফজলুল হক ও মফিজ। এদের সাথে ছিল ক্যাপ্টন আরেফিন। নয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রধান ছিলেন সুবেদার গোলাম আজম। নয় নম্বর সেক্টরের নৌবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন চীফ পেটি অফিসার এম, ইউ, আলম। সুন্দরবনে লেঃ জিয়ার অধীনে ছিলেন ফুল মিয়া ও মধু।

 জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি পটুয়াখালী জেলার ১০টা থানা এলাকার লোকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি এবং প্রশিক্ষণ দিতে থাকি। কিন্তু আমাদের অস্ত্রের খুবই অভাব ছিল। তাই স্থির হল স্থানীয় এলাকার লোকদের যাদের বন্দুক আছে তা যোগাড় করতে হবে। বন্দুক বেশীর ভাগ মুসলিম লীগারদের হাতে ছিল, তাই বাধ্য হয়ে রাতে আক্রমণ চালিয়ে বন্দুক ছিনিয়ে নিতে থাকি। অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও আমাদের খাদ্যেরও অভাব ছিল। তাই বড় বড় মহহাজনদের বাধ্য করি খাদ্যশস্য দিতে। মুক্তিযুদ্ধের জন্য লোক ভর্তি করা হতে থাকে। প্রথমে আমাদের কার্যকলাপ তিনটি থানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। থানা তিনটি ছিল মঠবাড়িয়া, বেতাগী ও বামনা। এসময় আমার বাহিনীর হাতে ১৫/২০টা রাইফেল ও ৩০/৪০টা বন্দুক ছিল। কিন্তু গোলাবারুদের খুবই অভাব ছিল। আমরা এ সময় মাঝে মাঝে থানা আক্রমণ করে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নিতে থাকি।

 ইতিমধ্যে এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে গ্রামে গ্রামে ডাকাতি শুরু করে দেয়। ফলে জনমনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। জনগণ সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম শুনলে ভয় পেয়ে যেত। আমি বুঝতে পারলাম জনগণকে দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে না পারলে আমাদের সংগ্রাম ও চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। জনসমর্থন ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চালানো সম্বব নয়।

 পটুয়াখালী জেলার ১০টি থানার প্রতি দুটি থানা মিলিয়ে একটি করে জোন গঠন করি। পটুয়াখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। এক থানা থেকে আর এক থানার বেশ দূরত্ব ছিল। তাই এই সময় পটুয়াখালী জেলার মোট ৫টা জোন ছিল ও শুধু মঠবাড়িয়া থানার একটা জোন করা হয়। এক-একটা জোনে ১০/১৫টা বন্দুক ও ৪/৫টা রাইফেল দিয়ে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা পাঠিয়ে দিই। তাদের কাজ ছিল কোন এলাকায় ডাকাতি আরম্ভ হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ডাকাতদের দমন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা কোন এলাকায় ডাকাতি হবে শুনলে


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টন হিসাবে কর্মরত ছিলেন।