পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
20

অক্টোবরের মধ্যে দুটি জাহাজই অভিযান শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। “অপাশেন হট প্যাণ্টস” সাংকেতিক নামে শুরু হয় অভিযান, যার লক্ষ্য ছিলো খুলনা ও মঙ্গলা এলাকায় শত্রুপক্ষের নৌযানের ওপর আঘাত হানা এবং পসুর নদীর মোহনায় মাইন স্থাপন করা।

হতবুদ্ধি ইয়াহিয়া

 অক্টোবর থেকে আমরা গেরিলাদের তৎপরতা সম্পর্কে উৎসাহব্যঞ্জক খবর পেতে থাকি। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে পণ্যসামগ্রী বাইরে প্রেরণ এবং বাইরে থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে আসা অব্যাহত গতিতেই চলতে থাকে। বাইরের যেসব মালামাল আসতো সেগুলো আবার যথারীতি দেশের ভেতর বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাচ্ছিলো। নৌ-বাহিনীর ডুবুরীদের সাফল্যজনক তৎপরতা সত্ত্বেও নৌ-যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে আমরা বিশেষ সফলতা লাভ করতে পারিনি। বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বেশ কতগুলো কারণে পাকিস্তান সরকার তার নৌ-যোগাযোগ মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে চালু রাখতে সমর্থ হয়েছিলো।

 (ক) বিদেশী শিপিং কোম্পানীগুলোকে পাকিস্তান সরকার যেকোন সম্ভাব্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ক্ষতিপূরণ দানের প্রস্তাব করেছিলো।

 (খ) অভ্যান্তরীণ নদীপথগুলোতে মোটামুটি ব্যাপকভাবে সশস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নৌ-যানগুলোর চলাচলের ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো।

 (গ) উপকূল এলাকা এবং সামুদ্রিক বন্দরগুলোতে গানবোটের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।

 (ঘ) শত্রুরা নৌ-কমাণ্ডারদের কার্যপদ্ধতি জেনে যাওয়ায় তারা পর্যাপ্ত রক্ষাব্যাবস্থা গ্রহণ করে।

 পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে আমরা বেশি করে নৌ-কমাণ্ডো নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেই। আমরা আরো যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করি সেগুলো ছিলোঃ

 (ক) আই, ডব্লিউ, টি, এ- এর জাহাজগুলোতে ক্রু হিসেবে গোপনে নৌ-কমাণ্ডো নিয়োগ করা।

 (খ) নদীর তীর এবং সাগরের উপকূল থেকে সুবিধাজনক দূরপাল্লার হাতিয়ারের সাহায্যে নৌ- যানগুলোর ওপর সরাসরি আক্রমণ চালানো। এবং

 (গ) এতদঞ্চলের আবহাওয়াগত কারণে সকাল-সন্ধ্যায় সৃষ্ট মৌসুমী কুয়াশার সুযোগ নিয়ে 'লিমপেট মাইন দ্বারা পাকিস্তানী জাহাজসমূহ ধ্বংস করা।

 ১২ই অক্টোবর ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণ দেন। তিনি তাঁর ভাষায় 'জাতীয় জীবনের এই ভয়াবহ মুহূর্তে” আল্লাহ এবং ইসলামের নামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন। বিরস, গম্ভীর এবং মদালস কণ্ঠে তিনি বললেনঃ-

 (ক) পাকিস্তানের সমগ্র সীমান্ত বরাবর ভারত ব্যাপকভাবে সৈন্য সমাবেশ করেছে।

 (খ) ট্যাংক, গোলন্দাজ ইউনিট এবং বিমান বাহিনীকে পাক সীমান্তের কাছে এনে জড়ো করা হয়েছে (তাঁর জিজ্ঞাসা, এসবের অর্থ কি?')। এবং

 (গ) চট্টগ্রাম এবং মঙ্গলা বন্দরে নৌ-বাহিনীর ডুবুরীদের হামলা হয়েছে। সড়ক, রেলপথ ও সেতু ধ্বংস করা হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।