বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
427

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড

বন্দী করতে সক্ষম হয় যার মধ্যে ৬ জন পাকসেনা ছিল, বাকি ছিল রাজাকার। এখানে একটা এল-এম-জি, ৭টা চাইনিজ ও ৩০৩ রাইফেল, প্রচুর গুলি ও হ্যাণ্ড গ্রেনেড আমরা দখল করতে সক্ষম হই। বরগুনার শহরের নিকটে এত বড় একটা ক্যাম্প পতনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে ত্রাহি ভাব সৃষ্টি হয়। পাকসেনারা খুব ভীতসন্ত্রস্ত হেয় পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, পটুয়াখালী থেকে একজন সুবেদার পালিয়ে ঢাকা যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু পথে সে ধরা পড়ে।

 অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মেজর জলিল আমাকে ভারত যেতে বললেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য তিনি বেশ কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা এবং অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়ে দেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ভারতে যাবার পক্ষপাতি ছিলাম না। আমি মনে করতাম যে আমাদের সত্যিকার আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা কায়দায় তৎপরতা চালিয়ে পাকসেনাবাহিন ভীতসন্ত্রস্ত রাখাটাই বেশী প্রয়োজন। যাই হোক, হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে নভেম্বরের প্রথম দিকে আমি ভারত যেতে মনস্থির করে ফেললাম। যদিও আমার মুক্তিযোদ্ধারা মানসিক দিক হাতাশ হয়ে পড়ছিল। তথাপি সমস্ত বেইস কমাণ্ডাদেরকে ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী লিখিতভাবে সবাইকে দিয়ে দিই এবং নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমি দুবার আবহাওয়া দরুন যাওয়া স্থগিত রাখি। আমার ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রায় ৭০০ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আমি ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রায় দুহাজার নৌকাযোগে ভারতে পাঠিয়ে দিই। ৫/৭ দিন পর বাকি ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রায় ৮০০ শরণার্থী নিয়ে আমি ঈদুল ফিতরের দিনে ভারতে রওনা হই। নভেম্বরের শেষ নাগাদ। এই দুর্গম পথের মাঝে মাঝে ছিল পাকসেনাবাহিনীর গানবোটের পাহারা। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে চলতে চলতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ ভারতের হাসনাবাদ গিয়ে পৌঁছি।

স্বাক্ষরঃ মেহেদী আলী ইমাম

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ শামসুল আরেফিন[]
২৮-৩-১৯৭৩

 মুজিবনগরে বাংলাদেশ সেনানিবাসে হাজির হই ১১ ই মে। সেখানে থেকে ফিল্ড কমিশন নিয়ে ৯ নং সেক্টরে পাঠিয়ে দেয়। খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ৯ নম্বরের অধীনে ছিল। প্রথম হিঙ্গলগঞ্জ অপারেশন ক্যাম্পে আসি। এখানে দেড় মাস থাকি।

 ১৩ ই মে থেকে ৬ ই জুলাই পর্যন্ত আমি ক্যাপ্টন হুদার নেতৃত্বে ৪টি অপারেশন যান-খাঞ্জিয়া বি-ওপি, বসন্তপুর বি-ও-পি, কালিগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টার এবং উকশা বি-ও-পি (খুলনা)।

 ৭ই জুলাই খুলনা জেলার প্রধান হিসাবে আসি এবং খুলনা জেলার আশাশুনি থানার বড়দল এলাকায় (বাংলাদেশ) আমার ঘাঁটি স্থাপন করি। আমার সঙ্গে ১০০ জন এফ-এফ এবং ১৫ জন নিয়মিত বাহিনীর সদস্য ছিল। ১১ই জুলাই পাইকগাছা থানার কপিলমুনির রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করি। সারারাত যুদ্ধ করে আমরা ফিরে আসি। বড়দলে একটি ট্রেনিং সেণ্টার খুলি এবং লোক ভর্তি করতে থাকি।

 জুলাই মাসের শেষের দিকে আমার উপর নির্দেশ আসে মঙ্গলা পোর্ট আক্রমণ করবার জন্যে। ইতিমধ্যে ১০ জন ন্যাভাল কমাণ্ডোসহ একজন লিডিং সীম্যান (ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসেছিল), এম,বি, আলকে অস্ত্রসহ আমার কাছে পাঠানো হয়। ন্যাভাল ১১ জন সহ আমরা ২১ জন মিলে মঙ্গলা পোর্টে রওনা হই। আমি কমাণ্ডিং অফিসার ছিলাম। সুন্দরবনের ভিতর লাওতাড়াতে ঘাঁটিতে আসি, যেখানে পূবেই আমার কিছু বাহিনী ছিল। ৯ই

  1. পাকিস্তানী মিলিটারী একাডেমীতে জেণ্টেলম্যান ক্যাডেটরূপে প্রশিক্ষণ গ্রহনকালে সেখানে থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।