পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
428

আগস্ট রাত ১২/১ টার সাঁতা দিয়ে বাহিনী চলে আসে মঙ্গলা পোর্টে দিকে। সাঁতার গিয়ে চুম্বক মাইন লাগিয়ে চলে আসে তিনটি জাহাজে। আধঘণ্টা পরে মাইন বিস্ফোরিত হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার ওপেন করি। আমরা সবাই নিরাপদে আসি। জাহাজ তিনটি ডুবে যায়। ১১ ই আগষ্ট তারা পুনরায় যায়। সেদিন দুটি জাহাজ আমরা ধ্বংস করি। ঐ দিন গফুর নামে একজন ন্যাভালকে হারাই। তবে দু'দিন পরে সে আমাদের ক্যাম্পে ফিরে আসে।

 ১২ ই আগষ্ট ভোরে পাক নেভী দু'দিক থেকে আমাদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালায়। আমরা ওখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হই। আমরা মূল ঘাঁটিতে ফিরে আসি। মূল ঘাঁটিতে এসে প্রত্যেক থানাতে একটি করে ঘাঁটি তৈরীর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। রাজনৈতিক কর্মীসহ মুক্তিবাহিনী গঠন করে খুলনার দিকে অগ্রসর হতে থাকি। আমাকে সহায়তা করতেন এম-সি-এ গফুর।

 আগষ্ট মাসের শেষের দিকে খুলনা জেলার আশাশুনি থানাতে রাজাকার ও পাকিস্তানী ডেককোয়ার্টার আক্রমণ করি। একদিন অবরোধ করার পর দ্বিতীয় দিনে সাতক্ষীরা থেকে পাকবাহিনীর এবং খুলনা থেকে নেভী এসে আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। ১২/১৪ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ হয় ওদের সঙ্গে। পাকবাহিনী ২ জনকে ধরে ফেলে এবং মনোরঞ্জন হালদার নামে একজন মুক্তিসেনা মারা যায়। আমরা ৩ জন মিলিশিয়াসহ ১৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে ২৬ টি অস্ত্র উদ্ধার করি। পাকসেনারা পিছু হটে চলে যায়।

 সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাইকগাছা থানার বাকাঘাঁটি পাকবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে। ওখানে আমাদের দলের দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। একজন মারা যায় এবং ১ জন আহত হয়। আমরা বাকাঘাঁটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই। ৭ দিন পর বাকাঘাঁটি পুনরায় দখল করি। এসময়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং সহকারী ছিলেন জনাব বাবর আলী (বর্তমানে জাতীয় পরিষদ সদস্য)।

 এরপর ক্রমশ ঘাঁটির সংখ্যা বাড়াতে থাকি। হেডকোয়ার্টার বড়দল থেকে বদলী করে পাইকগাছা থানার হাতিয়ারডাঙ্গাতে নিয়ে আসি এবং ৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলি। মুক্তিবাহিনী এবং নেভী দুটোরই ট্রেনিং হতো। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে পাইকগাছা গরুইখালী গ্রামে থেকে অস্ত্রসহ ২২ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে আসে ঐ মাসেই পাইকগাছা থানা আক্রমণ করি এবং থানা স্টাফসহ ৬/৭ রাজাকারকে ধরে নিয়ে আসি।

 অক্টোবর মাসের প্রথমে দুটো দল দু'দিকে পাঠাই-একটি দাকোপ থানায়, অন্যটি তালা থানাতে। দাকোপ থানার খাটালি গ্রাম থেকে ১৭ জন রাজাকারকে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে আমার বাহিনী তালা থানার দল ১৮ মাইল রাস্তার মোড়ে পাকবাহিনীর মুখোমুখি হয়। যশোর-পাটকেলঘাটা রাস্তা নষ্ট করে দেয়। যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে নির্দেশ আসে সুন্দরবনের ভিতর নিউজপ্রিণ্ট মিল আক্রমণ করার জন্যে। ঐ ঘাঁটিতে বোট এবং শিপ ছিল ‘লালশেরা”। আমরা ঐগুলি ডুবিয়ে দিই মাইন দিয়ে। এখানে আমার ভাই আয়ুবআলী গাজী প্রধান সহকারী ছিল। ভাই পরবর্তীকালে মারা যায়।

 অক্টোবরের শেষের দিকে আবার মঙ্গলা পার্ট আক্রমণ করি। এবার তিনটি শিপ ডুবিয়ে দিই। এসময় বাজুয়াতে আমাদের সাথে ভীষণ যুদ্ধ হয়। আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি। পাক পক্ষ বাজুয়া ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়। বাজুয়াতে আমাদের ঘাঁটি স্থাপন করে খুলনাতে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়ে দিই আমাদের লোকের কাছে।

 ১৯ শে নভেম্বর পাকবাহিনীর ক্যাম্প কালিগঞ্জ থানা আমরা আক্রমণ করি। দিনটি ছিল ঈদের দিন। পাকবাহিনী বহু অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে কমাণ্ডিং অফিসার ছিলেন ক্যাপ্টেন হুদা।

 ২৫শে নভেম্বর কপিলমুনি পাইকগাছা থানা আমরা আক্রমণ করি। এখানে আমার প্রধান সহকারী ছিলেন মিঃ রহমতুল্লাহ (নেভী), কামরুজ্জামান (টুকু) এবং বাবর আলী। তিনদিন যুদ্ধের পর ৩৫০টি রাইফেল উদ্ধারসহ ১০৭ জনকে গ্রেফতার করি। আমার ২ জন শহীদ হন ল্যান্সনায়েক গাজী ও আনোয়ার। ২ জন আহত হন। এই